দেশজুড়ে

চাল ব্যবসায়ীদের আশায় গুড়ে বালি

বেশি লাভের আশায় কম শুল্কে বেশি চাল আমদানি করে বিপাকে পড়েছেন দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি করা ব্যবসায়ীরা। গত ১৫ দিন ধরে হিলি স্থলবন্দরে আটকা পড়ে আছে ৯ হাজার মেট্রিক টন চাল। আর এ কারণে অর্থনৈতিক বিড়ম্বনাসহ নানা ভোগান্তিতে পড়েছেন ভারতীয় ট্রাকচালক ও তাদের সহকারীরা।

Advertisement

বাজেটে আমদানি শুল্ক বাড়ানো হবে জেনে বাজেটের আগে ৬ জুন পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি বাড়িয়ে দেন চাল ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সংসদে ৭ জুন বাজেট অধিবেশন শুরুর আগ পর্যন্ত সব চাল ছাড় করাতে পারেননি তারা। বাজেট অধিবেশনের আগে ৬ জুন বুধবার ও ৭ জুন বৃহস্পতিবার বাজেট অধিবেশন শুরু হলে এনবিআর তাদের সার্ভার বন্ধ করে দেয়। ফলে হিলি স্থলবন্দরের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়। আর এতে আটকা পড়ে ৯ হাজার মেট্রিক টন চাল।

হিলি স্থলবন্দরের চাল আমদানিকারক মামনুর রশীদ লেবু ও হারুন উর রশীদ হারুন জানান, গত ৪ জুন এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদ জানান দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য মজুত রয়েছে। কৃষকরা যাতে ধানের ন্যায্য মূল্য পায় সেজন্য সরকার এবারের বাজেটে চাল আমদানির ওপর আগের মতো ২৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এ ঘোষণার পর যাদের চালের এলসি খোলা ছিল এবং চালের ট্রাক পাইপলাইনে ছিল তারা ৫ ও ৬ তারিখের মধ্যে তা বন্দরে ঢুকিয়ে খালসের চেষ্টা করেন। কিন্তু বাজেটের আগের দিন ৬ জুন বুধবার ও বাজেটের দিন ৭ জুন বৃহস্পতিবার এনবিআর সার্ভার বন্ধ রাখায় তারা চালগুলো খালাস করতে পারেননি। এর উপর শুক্রবার ছুটি থাকায় কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ফলে তাদের পণ্যগুলো তিন দিন আটকা ছিল। এখন প্রতিদিন তাদের ভারতীয় ট্রাকগুলোর জন্য ২ হাজার টাকা করে গুনতে হচ্ছে। অপরদিকে বন্দরের চার্জও দ্বিগুণ বাড়ছে।

আমদানিকারকদের দাবি, ‘আমরা বাজেটের আগে চালগুলো আমদানি করেছি। এখন সেই চালের ওপর যদি বাড়তি শুল্ক পরিশোধ করতে হয় তাহলে দুঃখজনক। আমরা বাজেটের আগে চাল আমদানি করে কেন বাজেটের পরের রেটে শুল্ক পরিশোধ করবো। আগের মতো ২ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করে চাল খালাসের জন্য এরইমধ্যে হিলি কাস্টমস, রংপুর কমিশনারেট ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরসহ বিভিন্ন দফতরে আবেদন করা হয়েছে। এর কোনো ফলাফল না এলে কাস্টমসের এমন আদেশের বিপরীতে আমরা আদালতে যাব।’

Advertisement

এ ব্যাপারে হিলি স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মুশফিকুর রহমান চৌধুরী জানান, অন্যান্যবার বাজেটের আগে ও পরে সার্ভার বন্ধ থাকার কথা জানিয়ে নোটিশ দেয়া হলেও এবার তা দেয়া হয়নি। চাল খালাসের জন্য ৬ জুন দুপুর ১২টার মধ্যে ৭৫টি বিল অব এন্ট্রি কাস্টমসে জমা হলেও কাস্টমসের সার্ভারের ধীরগতি থাকার কারণে মাত্র ২৯টি বিল অব এন্ট্রি দাখিলের পর বাকিগুলো আর দাখিল করা যায়নি। এরপর হঠাৎ করে বিকেল ৩টা থেকে সার্ভার বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপরে আর কোনো পণ্যের বিল অব এন্টি দাখিল করা যায়নি।

হিলি স্থলবন্দরে খালাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা ভারতীয় ট্রাকের চালকরা বলেন, ১৫ দিন হয়ে গেল কিন্তু এখন পর্যন্ত চাল খালাস হচ্ছে না। খরচ বাবদ যে টাকা নিয়ে এসেছিলাম সেগুলোও শেষ হয়ে গেছে। এখন আমরা খাওয়া দাওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছি।

হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন জানান, বর্তমানে হিলি স্থলবন্দরে ৯ হাজার টন চাল নিয়ে ২১৫টি চালবাহী ট্রাক আটকা আছে। চালের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির কারণে আমদানিকারকরা চালগুলো খালাস করছে না। চালগুলো নষ্ট হলে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

হিলি স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের ডেপুটি কমিশনার রেজভী আহম্মেদ বলেন, হিলি স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশনের সব কার্যকম জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত। এক্ষেত্রে হিলি শুল্কস্টেশনের কোনো কিছু করার উপায় নেই। সারাদেশের সব কাস্টমসের কার্যক্রম এভাবেই পরিচালিত হয়ে থাকে। তাই নতুন আরোপিত ২৮ শতাংশ শুল্কে চালগুলো খালাস করতে হবে।

Advertisement

ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে তাদের কাছে আবেদনের বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেনে, আগের ২ শতাশ শুল্কে চাল ছাড় করানোর কোনও সুযোগ এখন আর নেই। কারণ সার্ভারে নতুন আরোপিত শুল্ক সংক্রান্ত তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে। সার্ভার আগের কোনো তথ্য গ্রহণ করবে না। এ ধরনের কোনো অপশোন সার্ভারে নেই।

এমদাদুল হক মিলন/এফএ/এমএস