মতামত

কবে ফিরবে সেই সুদিন?

 

নানা নেতিবাচক খবরের ভিড়ে কিছু খবর আমাদের আশান্বিত করে। এরকমই একটি খবর হচ্ছে, পাটের বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধির অংশ হিসেবে পাট থেকে ডেনিম কাপড় তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রথমে পাট ও তুলার মিশ্রণে সুতা তৈরি করা হবে। সেই সুতা থেকে বানানো হবে ডেনিম কাপড়। উৎপাদিত কাপড় থেকে প্যান্ট, জ্যাকেট ও শার্টের মতো পোশাক বানিয়ে রফতানি করা হবে। পাশাপাশি দেশের বেসরকারি খাতে কাপড় সরবরাহ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

Advertisement

বাংলাদেশকে এক সময় সোনালি আঁশের দেশ বলা হত। এর কারণ বাংলাদেশের পাটের বিশ্বময় সুখ্যাতি। এছাড়া বৈদেশিক আয়ের সিংহভাগ আসতো পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি থেকে। এখনও পাট থেকে অনেক পণ্য তৈরি করা হয়। তাই পাট শিল্পকে আর অবহেলা করা যাবে না। সরকার পাটকে কৃষিপণ্য ঘোষণা করেছে। পাট উৎপাদন বিপণন ও রফতানির ক্ষেত্রে কৃষিপণ্য হিসেবে পাওয়া সুযোগ-সুবিধাগুলো এখানেও দেয়া হবে।

এছাড়া পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক আইনও ( ২০১০) করা হয়েছে ইতোমধ্যে। পাটখাতের মাধ্যমে এখনো বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। তাই পাটকে গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশকে কৃষি অর্থনীতির ওপর ভর করেই দাঁড়াতে হবে। আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে বেড়ে উঠতে হলে নিজের দেশে উৎপাদিত পণ্যের দিকে মনোযোগী হতে হবে।

পাট এমন একটি ফসল যার সবকিছুই কাজে লাগে। পাটের পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়। ঔষধি পথ্য হিসেবেও এর ব্যবহার রয়েছে। পাটখড়ি উৎকৃষ্ট জ্বালানি। ঘরের বেড়া বা আসবাবপত্র তৈরিতেও পাটখড়ি ব্যবহার করা হয়। আর পাটের আঁশের কথা তো বলাই বাহুল্য। উন্নত জাতের তোষা পাটের সুতা থেকে জামদানি পর্যন্ত তৈরি সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

Advertisement

এছাড়া পাটের জীবনরহস্য বা জিন নকশা (জিনোম সিকোয়েন্সিং) উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছেন আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা। এরফলে পাট বলতে এখন বাংলাদেশকেই বুঝাবে। মেধাস্বত্ব প্রতিষ্ঠা করা গেলে এখান থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। তবে এজন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করতে হবে।

এছাড়া বন্ধ হওয়া পাটকল চালু করা, যেগুলো চালু আছে সেগুলো যেন ঠিক মত চলে সেটিও নিশ্চিত করা জরুরি। পাট উৎপাদনে কৃষি সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। কৃষকরা যেন ন্যায্য মূল্য পায় পাটের নিশ্চিত করতে হবে সেটিও। পাটজাত পণ্য ব্যবহারে উন্মেষ ঘটাতে হবে দেশপ্রেমের। পাটের সুদিন ফিরে আসলে এর সঙ্গে জড়িত বহু মানুষ তাতে উপকৃত হবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও বৃদ্ধি পাবে। এ ব্যাপারে যুগোপযোগী এবং বাস্তবানুগ সিদ্ধান্ত নিতে সংশ্লিষ্টরা এগিয়ে আসবেন- আমাদের প্রত্যাশা এমনটিই।

এইচআর/এমএস

Advertisement