রাজধানীতে হঠাৎ করে বাড়ছে ভাইরাস জ্বরসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নারী-পুরুষ ও শিশু নির্বিশেষে জ্বর, ডায়রিয়া, আমাশয়, ঠান্ডা, হাঁচি ও কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্তরা জানান, জ্বরের তাপমাত্রা ১০৩-১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠানামা করছে। জ্বরের সঙ্গে কারও কারও হাত-পা ও মাথা ব্যথাও হচ্ছে।
Advertisement
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকার-বেসরকারি হাসপাতালের বর্হিবিভাগে ও চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারে জ্বরসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর ভিড় বাড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, সাধারণত ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হলেও অনেকেই আতঙ্কে ডেঙ্গু জ্বর মনে করে চিকিৎসকের কাছে ছুটে আসছেন। তাদের এ আতঙ্ক অমূলক নয়, রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায় প্রতিদিনই ৬/৭ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন।
ছবি: বিপ্লব দিক্ষিৎ
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত আবহাওয়ার তারতম্যের কারণেই ভাইরাস জ্বরসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি বাড়ছে। সম্প্রতি একই রকম আবহাওয়া সব সময় থাকছে না। বাতাসে আদ্রতা বেশি। এই গরম এই ঠান্ডা, কখনও ঝড়-বৃষ্টি আবার কখনওবা প্রচণ্ড রোদে জীবিকার তাগিদে মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন। বিশেষ করে শ্রমজীবী তৃষ্ণার্ত মানুষ রাস্তাঘাটে লেবু, আখ, কাঁচাআম, বেল ও পেপের শরবত কিনে খাচ্ছেন। যে পানি ও বরফ মিশিয়ে শরবত তৈরি হয় তা কতটুকু বিশুদ্ধ তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আবহাওয়ার এ তারতম্যের কারণে বয়স্ক মানুষ ও শিশুরাই অধিক ঝুঁকিতে রয়েছেন।
Advertisement
ছবি: বিপ্লব দিক্ষিৎ
আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢামেক শিশু বর্হিবিভাগে দেখা যায়, শিশু কোলে নিয়ে কয়েকজন অভিভাবক ডাক্তার দেখানোর অপেক্ষা করছেন। তাদেরই একজন রাজধানীর চানখাঁরপুলের বাসিন্দা গৃহবধূ নাসরিন বেগম। তিনি জানান, ঈদের পর দিন থেকে তার ছয় বছর বয়সি মেয়েটির বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। এরপর পরদিন থেকে জ্বর। তিনদিনেও জ্বর না কমায় আজ মেয়েকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন।
ছবি: বিপ্লব দিক্ষিৎ
কর্তব্যরত চিকিৎসক জানালেন, গত দুদিন ধরে জ্বর, ঠান্ডা কাশি ও ডায়রিয়ার রোগীই বেশি আসছেন।
Advertisement
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে ৭ জন ডেঙ্গু জ্বরের রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তন্মধ্যে দুইজন মিটফোর্ড, একজন ইবনে সিনা, একজন স্কয়ার ও তিনজন সেন্ট্রাল হাসপাতাল ভর্তি হন। বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ১৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। চলতি বছর মোট ১৬২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। তন্মধ্যে ২ জন মারা গেছেন।
ছবি: বিপ্লব দিক্ষিৎ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডিন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে সম্প্রতি ভাইরাস জ্বর, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, প্যারা টাইফয়েড ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
ছবি: বিপ্লব দিক্ষিৎ
তিনি আরও বলেন, আক্রান্তদের বেশির ভাগেই ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত। গরমে বাইরে বের হলে শরীর যেন কম ঘামে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ঘামলে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়। তাই পানি ফুটিয়ে ও পানিতে লবণ মিশিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেন। এছাড়া রাস্তাঘাটের শরবত না খাওয়ার পরামর্শ দেন।
এমইউ/জেএইচ/জেআইএম