খুলনা আধুনিক রেল স্টেশনের পাইলিংয়ের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি স্থানে পাইলিংয়ে কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে, প্রকল্প এলাকায় থাকা পিডব্লিউডি অফিস, রেলওয়ের লোকোসেড অপসারণসহ বস্তি উচ্ছেদ অভিযান অজ্ঞাত কারণে থেমে যাওয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে প্রকল্পের কাজেও ধীরগতি দেখা দিয়েছে। দ্রুত এগুলোর জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারলে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাইলিংয়ের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। স্টেশনটি নির্মিত হলে খুলনা অঞ্চলের যাত্রীদের যেমন দুর্ভোগ কমবে, তেমনি দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে। সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রকল্প এলাকায় পাইলিংয়ের কাজ চলছে। সর্বমোট পাইলিং হবে ৬৯৩টি। প্রতিটি প্লাটফর্মের জন্য ৯৬টি করে ২৮৮টি এবং স্টেশন ভবনের জন্য ৪০৫টি পাইলিং করা হবে। বৃষ্টির মধ্যও গত রোববার বিকেল পর্যন্ত ৪৬৫টি পাইলিং কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এখনো ২২৮টি স্থানে পাইলিংয়ের কাজ বাকি রয়েছে। ২নং প্লাটফর্মের পাইলিংয়ের কাজ প্রায় শেষ ও ভবনের প্রায় সাড়ে ৩শটি পাইলিংয়ের কাজ করা হয়েছে। তবে, ৩নং প্লাটফর্মের অর্ধেক পাইলিংয়ের কাজ হয়েছে। বাকি অর্ধেক এলাকায় বস্তি থাকায় পাইলিংয়ের কাজে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া পিডব্লিউডি অফিস ও গোডাউন এবং লোকোসেড ভাঙার কাজ এখনো শুরু হয়নি। বাকি রয়েছে রেল লাইনেরি স্লিপার উঠানোর কাজ। ফলে ১নং প্লাটফর্মের পাইলিংয়ের কাজ এখনো শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। আর এসব কারণেই পাইলিংয়ের কাজে কিছুটা ধীর গতি দেখা দিয়েছে বলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ জটিলতার দ্রুত অবসান ঘটানো হলে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৩টি প্লাটফর্ম ও স্টেশন ভবনের বেইজের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে, প্রকল্প এলাকায় উচ্ছেদ ও ভাঙার কাজ প্রায় শেষ বলে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। রেলওয়ে সূত্র জানায়, নগরীর পাওয়ার হাউজ মোড়ে হাউজ বিল্ডিং কর্পোরেশন ভবনের পাশে স্টেশন ভবন ও এর অদূরেই প্লাটফর্ম নির্মাণ হবে। নকশা অনুযায়ী খুলনা-যশোর মহাসড়কের পাশেই হবে স্টেশনের গেট। এছাড়া রেলের লাইন হবে ৭টি। রেল স্টেশনের প্লাটফর্ম হবে ৩টি এবং স্টেশন ভবন হবে ৩ তলা বিশিষ্ট। নকশা অনুযায়ী স্টেশন ভবনের আকার হবে দৈঘ্য ৪৮ মিটার ও প্রস্থ ৪৫ মিটার এবং প্রতিটি প্লাটফর্মের দৈর্ঘ্য ১২শ ফুট ও প্রস্থ ৩০ ফুট হবে। এতে ব্যয় হবে ৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এর মেয়াদ ধরা হয়েছে আড়াই বছর। সেই অনুযায়ী ২০১৭ সালে শেষের দিকে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা। এ কাজের (প্যাকেজ ডব্লিউডি-২) ঠিকাদারী পেয়েছেন ‘তমা কনস্ট্রাকশন’। গত মার্চে প্রকল্প এলাকায় আনা হয় ইট, বালু, রড ও পাথরসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী। মার্চের শেষের দিকে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। গত ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ৫টি স্থানে পাইলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়। পাইল লোড টেস্টের পর পুরোদমে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। সূত্রটি আরো জানায়, গত ৪ মার্চ ঠিকাদার নিয়োগ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। আধুনিক রেল স্টেশনটি নির্মিত হবে উন্নত বিশ্বের আদলে। এ স্টেশনে থাকবে দৈনন্দিন সকল সুযোগ সুবিধা।প্রকল্পের আওতায় প্লাটফর্ম লিঙ্কসহ কার পার্কিং এলাকা, ফুটপাতসহ রাস্তা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বাউন্ডারি দেওয়াল, স্যানিটারি ও প্লাম্বিং ওয়ার্কস, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, পিএবিএক্স চ্যানেল ও সকল বৈদ্যুতিক সংযোগ। থাকবে ফুলের বাগান। প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন এর প্রকৌশলী মো. সালেহ আহম্মেদ খান জাগো নিউজকে জানান, টেন্ডারের কার্যাদেশ পাওয়ার পর প্রকল্প এলাকায় নির্মাণ সামগ্রী আনা হয়েছে। গত মার্চের শেষের দিকে পাইলিংয়ের কাজও শুরু করা হয়। রোববার পর্যন্ত ৪৬৫টি স্থানে পাইলিং করা হয়েছে। আরো বাকি রয়েছে। তবে, বস্তি উচ্ছেদ, পিডব্লিউডি অফিস ও গোডাইন এবং লোকোসেড ও রেল লাইন অপসারণ না করায় কাজে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এগুলো অপসারণ করা হলে এক মাসে পাইলিংয়ের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। এদিকে প্রকল্প এলাকায় উচ্ছেদ ও ভাঙার কাজ ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন খুলনা রেলওয়ের সিনিয়র সাবস্টেশন ইঞ্জিনিয়ার হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, প্রকল্প এলাকার বস্তি উচ্ছেদ ও ভাঙার কাজ প্রায় শেষ। তবে, লোকোসেড ও রেল লাইন আগামী দু’মাসের মধ্যে সরানো হবে। এ ব্যাপারে খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান জাগো নিউজকে বলেন, খুলনার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। আধুনিক রেল স্টেশন খুলনাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। এ বিষয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে তার দ্রুত সমাধান করে বাস্তবায়ন আমরা প্রত্যাশা করি।আলমগীর হান্নান/এমজেড/পিআর
Advertisement