প্রবাস

মালয়েশিয়া থেকে রেমিটেন্স প্রেরণে শীর্ষ অবস্থানে বাংলাদেশ

মালয়েশিয়া থেকে রেমিটেন্স প্রেরণে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের গেল ৬ মাসে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশি প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছে ২৬৮ কোটি ১ লাখ ৯১ হাজার ৫৫১ রিংগিত। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক ৮১৩ কোটি ৭৬ লাখ ৪ হাজার ৫১১ টাকা।

Advertisement

চলতি বছরের শুরু থেকে ১৮ জুন ২০১৮ পর্যন্ত এ পরিমাণ রিংগিত মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়াস্থ এনবিএল ও অগ্রণী রেমিটেন্স এর সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে প্রবাসীরা বলছেন, অবৈধ পথে এর দ্বিগুণ টাকা পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাঙালিরা হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত, যা বাংলাদেশ সরকারের রেমিটেন্স খাতে গুরুত্বপূর্ণ কু-প্রভাব পড়ছে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি ১টি সরকারি ও দুটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখা থাকার পরেও হুন্ডিকে সঠিক হিসেবে মনে করছে অনেকে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ ব্যবসার সঙ্গে শতাধিক বাংলাদেশি জড়িত রয়েছে। এদের মধ্যে হুন্ডি ব্যবসার শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। এ সিন্ডিকেট প্রতিহত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রত্যেকটি প্রদেশে রয়েছে তাদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। এ নেটওয়ার্ক প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ থেকে ৩ কোটি টাকা লেনদেন করে হুন্ডির মাধ্যমে।

Advertisement

বাংলাদেশ দূতাবাস ও রেমিটেন্স হাউসগুলো বৈধ পথে রেমিটেন্স প্রেরণে সচেতনতামূলক সভা সেমিনার করলেও কে শুনে কার কথা। মালয়েশিয়া থেকে ৭০ শতাংশ প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ প্রেরণ করেন। ৭০ শতাংশ এর মধ্যে ৪০ শতাংশ অবৈধ এবং ৩০ শতাংশ বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। যারা বৈধ পথে টাকা না পাঠিয়ে হুন্ডির পথ বেছে নিয়েছে।

কারণ হিসেবে জানা গেছে, এ অবৈধরা বৈধ কাগজপত্র না থাকাতে পুলিশের ভয়ে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে দেশে অর্থ প্রেরণ করছেন। মালয়েশিয়াস্থ এনবিএল রেমিটেন্স হাউসের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার শেখ আক্তার উদ্দিন আহমেদ এ প্রতিবেদককে জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত এনবিএলের ৯টি শাখার মাধ্যমে ২৪৪ কোটি ৭৯ লাখ ১২৫ রিংগিত যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫২১ কোটি ৩৫ লাখ ২ হাজার ৮৩৬ টাকার রেমিটেন্স প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন।

আক্তার উদ্দিন বলেন, রেমিটেন্স বৃদ্ধির লক্ষ্যে এনবিএলের পক্ষ থেকে আমরা সচেতনতামূলক সভা- সেমিনার করে যাচ্ছি। আর এ সচেতনতা বাড়াতে আমাদের হাই কমিশনার মুহা. শহীদুল ইসলাম দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। হাই কমিশনারের দিক নির্দেশনাই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

প্রবাসীদেরকে বলা হচ্ছে বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানো নিরাপদ এবং এনবিএলের ৯টি শাখার পাশাপাশি এজেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে যাতে করে এনবিএলের সেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মনে করেন।

Advertisement

অগ্রণী রেমিটেন্স হাউসের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ও ডাইরেক্টর মো. লুৎফুর রহমান বলেন, চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত অগ্রণী রেমিটেন্সের ৬টি শাখার মাধ্যমে ২৩৭ কোটি ৯৫ লাখ ৩ হাজার ৯৪৬ রিংগিত যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৯৫ কোটি ৩৪ লাখ ১ হাজার ৬৭৫ টাকার রেমিটেন্স প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন।

লুৎফুর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, বৈধ পথে রেমিটেন্স প্রেরণে সচেতনতামূলক বিভিন্ন আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসে হাই কমিশনার মুহা. শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা হয়েছে। কিভাবে বৈধ পথে দেশে রেমিটেন্স বাড়ানো যায় হাই কমিশনার দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

তার আলোকে আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং অগ্রণী রেমিটেন্সের ৬টি শাখার পাশাপাশি এজেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। লুৎফুর রহমান বলেন, হাই কমিশনার ও অগ্রণী রেমিটেন্স হাউসের ডাইরেক্টর দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর মো. সায়েদুল ইসলাম সব সময় রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধির খোঁজ-খবর রাখছেন। মালয়েশিয়া থেকে রেমিটেন্স আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অগ্রণী রেমিটেন্স হাউসের এ কর্মকর্তা। এদিকে গত ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশি প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছে ১৭ বিলিয়ন রিংগিত। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক ৩৫ হাজার কোটি টাকা মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার অর্থমন্ত্রী।

২০১৬ সালে মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টে সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, মালয়েশিয়ায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের শ্রমিকরা মোট ১১৯ বিলিয়ন রিংগিত পাঁচ বছরে মালয়েশিয়া থেকে তাদের দেশে পাঠিয়েছে।

এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ২ বিলিয়ন রিংগিত পাঠায় মালয়েশিয়ার প্রতিবেশী দেশ ইন্দোনেশিয়ান প্রবাসীরা। ১৭ বিলিয়ন রিংগিত পাঠিয়ে বাংলাদেশিরা দ্বিতীয় স্থানে আছে।

এছাড়া নেপালিরা ১৩ দশমিক ২ বিলিয়ন, ভারতীয়রা ৬ বিলিয়ন এবং ফিলিপাইন ৩ বিলিয়ন রিংগিত পাঠিয়েছে। এর বাইরে কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মিয়ানমারসহ অন্যান্য দেশের প্রবাসীরা তাদের দেশে রিংগিত পাঠিয়েছে।

মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন দেশের মোট ২২ লাখ বৈধ প্রবাসী কাজ করছেন। এছাড়া আরও প্রায় ২০ লাখ অবৈধ প্রবাসী কাজ করছেন মালয়েশিয়ায়।

এমআরএম