বিশেষ প্রতিবেদন

নামেই বিশ্ববিদ্যালয় যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি

>> ২০০৯ সালে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ>> ১৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কমিটি গঠিত হয়েছে ৭৯টির>> অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ওরিয়েন্টেশন ও প্রচারণার ব্যবস্থা নেই

Advertisement

যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি তৈরিতে অনাগ্রহ অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কমিটি রয়েছে সেগুলোও যেন নামমাত্র। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হরহামেশাই ঘটছে যৌন হয়রানি। হয়রানি বন্ধে ২০০৯ সালে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। অথচ এখন পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চলা মোট ১৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কমিটি গঠিত হয়েছে ৭৯টির। এর মধ্যে ৩০টি পাবলিক এবং ৪৯টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। বাকি ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কমিটি নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি রয়েছে সেগুলোও কার্যকর নয়। অভিযোগ আছে, যৌন হয়রানির অভিযোগ খুব একটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখে না কমিটিগুলো। ফলে কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য যথাযথভাবে পূরণ হচ্ছে না বলে মনে করছে ইউজিসি।

Advertisement

ইউজিসি জানিয়েছে, ৭৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি থাকলেও বেশিরভাগ কমিটিই নিষ্ক্রিয়। অভিযোগ এলে তদন্ত করতে কমিটির অনীহা, তদন্ত করলেও প্রতিবেদন দাখিল ও ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করা হয়। এমনকি কমিটির কার্যক্রমে গোপনীয়তাও অনেক সময় রক্ষা করা হয় না।

এ প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১১ মার্চ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দেয় ইউজিসি। দশ কর্মদিবসের মধ্যে উত্তর পাঠাতে সময় বেঁধে দিয়ে চিঠিতে বলা হয়, ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানির কতটি অভিযোগের তদন্ত হয়েছে, কতটির প্রতিবেদন জমা পড়েছে, কতগুলোর বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট ব্যবস্থা নিয়েছে এবং যৌন হয়রানি প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সভা-সেমিনার এমনকি ওরিয়েন্টেশন ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয় কি না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি পাবলিক এবং ৩৭টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় চিঠির যথাযথ উত্তর পাঠিয়েছে।

তথ্য পাঠানো বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে- হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এবং চট্টগ্রাম প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) রয়েছে।

Advertisement

অন্যদিকে ৩৭ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে- গণবিশ্ববিদ্যালয়, নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়, বিএসএমআর ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড টেকনোলজি, নর্দান ইউনিভার্সিটি, মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, স্ট্যামফোর্ড, বিজিসি ট্রাস্ট, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সোনারগাঁ ইউনিভার্সিটি, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি, রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইউআইটিএস, রাজশাহী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রোফেশনালস, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ, গ্রিন ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ঈশা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি ও ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি।

যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি না করার বিষয়ে একাধিক বেসরকরি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা জানান, জনবল সংকটের কারণে কমিটি গঠন করা হচ্ছে না। এটিকে কর্তৃপক্ষ বাড়তি ঝামেলা মনে করে। এছাড়া যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি রয়েছে সেগুলোতে কর্তৃপক্ষের যথাযথ মনিটরিং না থাকায় অকার্যকর থাকছে। পাশাপাশি ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশনা না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন তারা।

পাঁচ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি

চিঠির উল্লেখিত সময়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পাঁচটি যৌন হয়রানির অভিযোগ ইউজিসিতে পাঠায়। অভিযোগের সবগুলোই তদন্তসম্পন্ন এবং প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

অভিযুক্তদের মধ্যে চারজনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তবে অপরজনের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা কমিশনকে জানানো হয়নি। এছাড়া উচ্চ আদালতে দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

তবে ঢাবি কর্তৃপক্ষ যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ওরিয়েন্টেশনের ব্যবস্থা বা অন্য কোনো মাধ্যমে প্রচার করে না। এ বিষয়ে ঢাবির কোনো বুকলেট এমনকি প্রকাশনাও নেই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে ওই সময়ে কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি বলে ইউজিসিকে জানানো হয়েছে। এছাড়া কমিটির কার্যক্রম পরিচালনায় অর্থ বরাদ্দ না থাকা, ওরিয়েন্টেশনের ব্যবস্থা বা অন্য কোনো মাধ্যমে প্রচারও না করার বিষয়টি জানিয়েছে রাবি কর্তৃপক্ষ।

বরিশাল ও চুয়েট কমিটিতেও ওই সময়ে কোনো অভিযোগ জমা বা তদন্তনাধীন নেই। তবে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে একটি। সেটির তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।

অপরদিকে ৩৭টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কমিটিতে কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি। কোনো অভিযোগ বাক্স বা তদন্ত কমিটির জন্য কোনো বরাদ্দও নেই বলে ইউজিসিকে জানানো হয়েছে।

এমএইচএম/এএইচ/এমএআর/এমএস