ইউরি দানিয়েলভের বয়স ১৮। বাবার সঙ্গে উঠেছিলেন মেট্রোতে। গন্তব্য নভোত্রেসতোবস্কায়া। যে স্টেশনটি নতুন করে তৈরি করা হয়েছে সেন্ট পিটার্সবার্গে। এটাই এই শহরের বিশ্বকাপ ভেন্যুতে যাওয়ার পথ। মঙ্গলবার সেন্ট পিটাসবার্গ স্টেডিয়ামের বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচ- স্বাগতিক রাশিয়ার প্রতিপক্ষ মিসর। এ ম্যাচের টিকিট হাতে করেই স্টেডিয়ামের দিকে যাচ্ছিলেন পিতা-পুত্র।
Advertisement
পিতা চুপচাপ বসে। নজর একটা বইয়ের ওপর। ছেলে ইউরি অবিরাম মোবাইলে আঙ্গুল চালাচ্ছেন। রাশিয়ানদের এটা একটা অভ্যাস। বাস-ট্রেন যেখানেই থাকবেন হয় বই পড়বেন, না হয় মোবাইলে হাত চলবে। প্রেমিক-প্রেমিকা জুটি থাকলে অবশ্য ভিন্ন কথা। বই বা মোবাইলে মনযোগ থাকে না। চলন্ত যানবাহনেই বহিঃপ্রকাশ ইহজগতের সব ভালোবাসার।
যুবক ইউরির টিকিট হাতে গর্বের হাসি। আগে কখনো বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখেনি। নিজেদের শহরে নিজেদের খেলা বলে এই প্রথম সুযোগ পেয়েছেন স্টেডিয়ামে বসে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখার। আগের দিন থেকেই দৃষ্টিনন্দন শহরে একটা উৎসব উৎসব ভাব। রাশিয়ানরা যেটা আশা করেনি, তার চেয়ে বড় কিছু দিয়েছেন ফুটবলাররা। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দেয়ায় সেন্ট পিটার্সবার্গের ম্যাচের টিকিটের চাহিদাও বেড়ে গেছে।
যে কারণে টিকিট পাওয়া ইউরির উচ্ছ্বাসটা বেশি। পাশের আসনে বসে বারবার তার চোখ পড়ছিল এই প্রতিবেদকের গলায় ঝুলানো অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের ওপর। কার্ডে ইংরেজির পাশপাশি রাশিয়ান ভাষায় নাম থাকায় পড়লেন। ছেলেটা একটু তুরতুরে স্বভাবের। ইংরেজিও জানে অল্প-স্বল্প। সুবিধাই হলো। ৫ স্টেশন পরে নামতে হবে। আমরা একই স্টেশনের যাত্রী। কিছুক্ষণ পর বোঝালেন আমরা এখন পানির নিচ দিয়ে যাচ্ছি। মানে রিভা নদীর তলদেশ দিয়ে তৈরি মেট্রো ট্রেনের রাস্তা। আগের দু’দিন সেটা জানতাম না। ইউরি বলে দেয়ায় একটু পুলকিতই হলাম।
Advertisement
অনেক কথা। রাশিয়ার প্রথম ম্যাচ ইউরি দেখেছেন টেলিভিশনে। সে নিজেই এমন ফল প্রত্যাশা করেনি। এখন পর্যন্ত এ বিশ্বকাপের বড় জয় রাশিয়ার ঝুলিতে- জানিয়ে তৃপ্তির হাসি। তাহলে কী দ্বিতীয় ম্যাচে মিসরকেও উড়িয়ে দেবে স্বাগতিকরা? এমন প্রশ্ন করতেই জবাব, ‘ফুটবলে অনেক কিছুই সম্ভব; কিন্তু মিসর অনেক ভালো দল।’
বোঝা গেলো ফুটবলের খোঁজ-খবর রাখেন ইউরি। বললেন, ‘তাদের একজন সালাহ আছেন। ভালো ম্যাচ হবে। নিজেদের দল ও দ্বিতীয় ম্যাচ নিয়ে আলোচনার ট্র্যাক বদলে ইউরো চলে গেলেন ব্রাজিলের গল্পে, ‘রাশিয়াতো চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে না। আমি ব্রাজিলকে সাপোর্ট করি। এখানেই তো ওরা আসবে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে’-বলছিলেন রাশান যুবক।
যদি ব্রাজিল-রাশিয়া ফাইনাল হয়? এটাকে রসিকতা ধরেই ইউরির জবাব- রাশিয়া? তারপর বললো- ‘নট পসিবল’। ২২ জুন ব্রাজিল-কোস্টারিকা ম্যাচের টিকিট পায়নি। চেষ্টাও করেছিল। এটা তার দুঃখ। তবে টিভিতে খেলা দেখবেন। নেইমারের খেলা নাকি দেখেছেন। জানতে চাইলেন, নেইমাররা সেন্ট পিটার্সবার্গে কবে আসবেন?
স্থানীয় সময় রাত ৯টায় ম্যাচ। তাহলে এত আগে কেন স্টেডিয়ামে যাওয়া? বোঝালো, পরে ভিড় হতে পারে। গেট খোলার আগে সময় কাটাবেন স্টেডিয়ামের গা ঘেঁষা রিভা নদীর তীর ও পার্কে। সেন্ট পিটার্সবার্গের এই স্টেডিয়াম এলাকাতো শহরবাসীর পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্রও।
Advertisement
আরআই/আইএইচএস/এমএস