গৃহপরিচারিকার মরদেহ দাফন করতে এসে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন আলেয়া বেগম (২৬) নামে এক গৃহকর্ত্রী। পুলিশ নিহত গৃহপরিচারিকা সুফিয়া আক্তারের (১৮ ) মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালে পাঠিয়েছে। সোমবার দুপুরে দৌলতপুর উপজেলার বড়জোলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
Advertisement
নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, দৌলতপুর উপজেলার বড়জোলা গ্রামে আব্দুর রহিমের মেয়ে সুফিয়া ৭ মাস আগে গৃহপরিচারিকার কাজ নেন সাভারের আশুলিয়া এলাকায় প্রবাসী হাফিজুর রহমানের বাসায়। হাফিজুর রহমানের স্ত্রী আলেয়া বেগম কাজকর্ম নিয়ে মাঝেমধ্যেই তাকে নির্যাতন করতেন। ঈদের ছুটিতেও তাকে বাড়ি আসতে দেননি। কাউকে কিছু না জানিয়ে রোববার রাতে হঠাৎ আলেয়া বেগম সুফিয়ার মরদেহ নিয়ে তাদের বাড়িতে আসেন।
সুফিয়ার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করেন তিনি। আর রাতেই কতিপয় মাতব্বরদের নিয়ে গোপন সমঝোতা করে তড়িঘড়ি করে সোমবার সকালে মরদেহ দাফনের প্রক্রিয়া করেন। মরদেহ দিয়ে দুগর্ন্ধ আর শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে হত্যা করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। এরপর তারা মরদেহ দাফনে বাধা দিয়ে পুলিশে খবর দেন ।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হানিফ মৃধা জানান, মরদেহের মাথায় দাগ ও পায়ে ব্যান্ডেজ আছে। সারা শরীর অ্যাসিডে ঝলসানো বলে মনে হচ্ছে। আর মরদেহে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে দুই-তিন দিন আগেই নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এই কারণে মরদেহ দাফনে বাধা দিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ হাসপাতালে পাঠান ও অভিযুক্ত গৃহকর্ত্রীকে আটক করে থানায় নিয়ে যান।
Advertisement
সুফিয়ার বাবা আব্দুর রহিম বলেন, মেয়ের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে। লোকজন বলছে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। গৃহকর্ত্রী রাতেই মরদেহ দাফনের জন্য বার বার তাগাদা দেন। সোমবার সকালে তাই মরদেহ দাফন না করে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। নির্যাতন করে যদি তার মেয়েকে হত্যা করা হয় তবে তিনি ওই গৃহকর্ত্রীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
এদিকে দৌলতপুর থানায় আটক গৃহকর্ত্রী আলেয়া বেগম জানান, সুফিয়াকে হত্যা করা হয়নি। বেতনের তিন হাজার টাকা তার বাবাকে দেয়ায় সে নিজের শরীরে গরম পানি ঢেলে নিয়েছিল। হাঁটু ও মাথায় নিজে নিজে দেয়ালের সঙ্গে আঘাত করে। এ থেকেই রোববার সকালে তার মৃত্যু হয়।
একদিনের মৃত্যুতে মরদেহ দিয়ে দুগর্ন্ধ কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, গরমে মরদেহ পচে গেছে।
এ ব্যাপারে দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুনীল কুমার কর্মকার জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত সুফিয়া আক্তারের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। পরে মরদেহের সুরতহাল রির্পোট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। মরদেহে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। মরদেহের সঙ্গে আসা গৃহকর্ত্রী আলেয়া বেগমকে আটক করা হয়েছে।
Advertisement
তিনি জানান, এ ব্যাপারে ঘটনাস্থল সাভারের আশুলিয়া থানা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বি.এম খোরশেদ/আরএআর/পিআর