সম্প্রতি ভারী বর্ষণে কাপ্তাই লেকের পানির উচ্চতা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এতে করে তলিয়ে গেছে রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশন ও হলিডে কমপ্লেক্সের মনোরম ঝুলন্ত সেতুটি।হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জানান, উজান থেকে পানি নামায় কাপ্তাই লেকের পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। ফলে ঝুলন্ত সেতুটি লেকের পানিতে তলিয়ে গেছে। সেতুর পাটাতন যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল ও পারাপার সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সেতুতে প্রবেশে টিকেট বিক্রিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পানি কমে গেলে সেতুর ওপর দিয়ে আবার চলাচল স্বাভাবিক করে দেয়া হবে। এদিকে রাঙামাটির পর্যটনের আকর্ষণীয় ওই ঝুলন্ত সেতুটি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় স্থানীয় লোকজন ও পর্যটকদের সাময়িক দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। পারাপার হতে হচ্ছে নৌকা ও সাম্পানযোগে। সরেজমিনে দেখা গেছে, কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ঝুলন্ত সেতুটি হাটু পানির নিচে। সেতুর পাটাতন থেকে কয়েক মিটার ওপরে পানি উঠে গেছে। রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশন অ্যান্ড হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জানান, সেতুর ওপারে বসবাসরত লোকজনকে নৌকাযোগে পারাপার করতে বলে দেয়া হয়েছে।জানা গেছে, সত্তর দশকের শেষের দিকে সরকার রাঙামাটি পার্বত্য জেলাকে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। পরে পর্যটন কর্পোরেশন পর্যটকদের পারাপারের সুবিধার্থে দুটি পাহাড়ের মাঝখানে তৈরি করে রাঙামাটির আকর্ষণীয় ঝুলন্ত সেতুটি। এটি বর্তমানে দেশে-বিদেশে আকর্ষণীয় হয়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। ঝুলন্ত সেতুর পূর্বদিকে কাপ্তাই লেকের স্বচ্ছ জলরাশিসহ রয়েছে ছোটবড় বিস্তৃর্ণ নৈসর্গিক সবুজ পাহাড়।রাঙামাটির দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত সেতু উপভোগ করতে আসেন অসংখ্য পর্যটক। পর্যটকদের পদচারণায় প্রায় সময় ভিড় লেগে থাকে সেতুতে। সেতুতে প্রবেশ মূল্য দশ টাকা। বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সেতুটি দেখতে না পেয়ে মন ক্ষুণ্ন করে ফিরে যাচ্ছেন রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা।এদিকে কাপ্তাই লেকের পানি এখন বিপদসীমার কাছাকাছি চলে গেছে। লেকে পানির চাপ সামাল দিতে খুলে দেয়া হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্প্রিলওয়ের সবগুলো গেট। স্প্রিলওয়ের মোট ১৬টি গেট দিয়ে লেক থেকে ছাড়া হচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে ১৮ হাজার কিউসেক পানি।কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আবদুর রহমান জানান, বর্তমানে পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্প্রিলওয়ের সবগুলো গেট খুলে দিয়ে কাপ্তাই লেক থেকে প্রতি সেকেন্ডে ১৮ হাজার কিউসেক পানি ছাড়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, কাপ্তাই লেকের রুলকার্ভ অনুযায়ী লেকে স্বাভাবিক নিয়মে পানি ধারণ ক্ষমতা ৯০ এমএসএল (মীন সি লেভেল) উচ্চতায়। সম্প্রতি ভারী বর্ষণে লেকে পানির উচ্চতা ১০৫ ফুট হয়েছে। লেকে সর্বোচ্চ পানি ধারণক্ষমতা ১০৯ ফুট। তা অতিক্রম করলে বিপদসীমার ওপরে চলে যায়। বর্তমানে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫ ফুট বেশি উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানির চাপ সামাল দিতে পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্প্রিলওয়ে খুলে দিয়ে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিতে বাধ্য হতে হচ্ছে। সুশীল প্রসাদ চাকমা/এসএস/পিআর
Advertisement