দিন যত গড়াচ্ছে, ততই গভীরে প্রবেশ করছে রাশিয়া বিশ্বকাপ। ইতোমধ্যেই ফেবারিটদের বেশ কয়েকটি দল মাঠে নেমেছে। যার মধ্যে ড্র করে ফেলেছে স্পেন এবং আর্জেন্টিনা। স্পেনের ম্যাচটি ছিল হাইভোল্টেজ। পর্তুগালের বিপক্ষে। তবে আর্জেন্টিনার জন্য ড্রটি পরাজয়ের সমান। তাদের প্রতিপক্ষ বিশ্বকাপের নবাগত দেশ আইসল্যান্ড। তবে কষ্ট হলেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিতেছে ফ্রান্স।
Advertisement
বিশ্বকাপের চতুর্থ দিন এসে মাঠে নামছে সবচেয়ে সফল দুটি দল, ব্রাজিল এবং জার্মানি। পরস্পর মুখোমুখি নয়। বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় জার্মানরা মুখোমুখি হচ্ছে মেক্সিকোর আর ব্রাজিল রাত ১২টায় মাঠে নামবে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে। স্বাভাবিকভাবেই সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে এই ম্যাচে সবার চোখ নিবদ্ধ থাকবে নেইমারের দিকে। ফেব্রুয়ারির পর সর্বশেষ তিনটি মাচ দারুণ ভয় আর শঙ্কার মধ্যে কাটিয়েছে ব্রাজিল সমর্থকরা। অবশেষে নেইমার ফিরেছেন এবং হয়তো বা সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে শুরু থেকেই খেলবেন তিনি।
রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সম্ভাবনা, দলের অবস্থান- সব কিছুই নিয়েই কথা বলেছেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা। ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী এই তারকার কাছেও এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট ব্রাজিল। সুইজারল্যান্ডের জন্য নেইমার অনেক বড় হুমকি হয়তো; কিন্তু আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির কাছে একা এক নেইমারের চেয়ে ব্রাজিল দলটাই অনেক বেশি শক্তিশালী। তার মনে, ব্রাজিল দল হিসেবে অনেক বেশি শক্তিশালী এবং নেইমারকে ছাড়াও তারা নিজেদের অনেকদুর এগিয়ে নিতে সক্ষম।
ম্যারাডোনা এক কথাতেই জানিয়ে দিয়েছেন, ব্রাজিল শুধুমাত্র ২৬ বছর বয়সী নেইমারের ওপরই নির্ভরশীল নয়। এই দলটিতে অনেক ভালো ভালো ফুটবলার রয়েছেন। যাদের যে কোনো একজনই যে কোনো ম্যাচের পুরো চিত্র বদলে দিতে পারেন। একই সঙ্গে দলটির কোচ তিতেও দুর্দান্ত। তার অধীনে এই দলটি দারুণ সংঘবদ্ধ।
Advertisement
ব্রাজিল নিয়ে নিজের মত জানাতে গিয়ে ম্যারাডোনা বলেন, ‘ব্রাজিল দলটি নিয়ে যদি বলতে যাই তাহলে বলতে হবে, কোচ তিতেকে ঘিরেই দলটি। তার অধীনেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে আসছে তারা। দুই বছর আগে যখন সে ব্রাজিলের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব নেয়, তার পর থেকেই আমাদের লাতিন আমেরিকান প্রতিবেশিরা ২১ ম্যাচের মধ্যে ১৭টিতেই জিতেছে। হেরেছে মাত্র একটিতে। শুধু তাই নয়, আরও একটি পরিসংখ্যান দারুণ রোমাঞ্চ জোগাবে ব্রাজিল সমর্থকদের মনে। এই ২১ ম্যাচের মধ্যে গোল হজম করেছে মাত্র ৫টি। দিয়েছে ৪৭টি।’
ব্রাজিলের কাছে অনেক বেশি চাওয়া ম্যারাডোনার। তিনি বলেন, ‘আরও একটি রেকর্ড তারা সৃষ্টি করেছে, যা আমাকে অবশ্যই স্মরণ করতে হবে। ২০১৪ বিশ্বকাপে ইউরোপিয়ান দলগুলোর সামনে তাদের ডিফেন্সে যে দুর্বলতা দেখা গিয়েছিল, সেটা পুরোপুরি কেটে গেছে। তিতের অধীনে প্রতিটি বিভাগেই দারুণ উন্নতি করেছে তারা। সম্প্রতি তারা জিতেছে জার্মানি, রাশিয়া, ক্রোয়েশিয়া এবং অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে। জার্মানি রিজার্ভ বেঞ্চকে টেস্ট করালেও ব্রাজিলকে ওই ম্যাচে মনে হয়েছে দুর্দান্ত। শুধু নেইমারই নয়, তিতের হাতে রয়েছে আরও বেশ কিছু অস্ত্র। দারুণ প্রতিভাবান বেশ কিছু ফুটবলার রয়েছে। যদিও সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকা এবং সার্বিয়ার বিপক্ষে তাদেরকে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে।’
সুইজারল্যান্ডও কিন্তু কম যায় না। দারুণ শক্তিশালী একটি দল। যে কোনো টুর্নামেন্টে যে কোনো পর্যায়ে পরাশক্তিদের থমকে দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে তদের। ২০১০ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই স্পেনকে হারিয়ে দিয়েছিল সুইসরা। যদিও সেই স্পেনই হয়েছিল শেষ পর্যন্ত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। গোলপার্থক্যে পড়তে হয়েছিল পর্তুগালের পেছনে। তবে, প্লে-অফের মধ্য দিয়ে ঠিকই রাশিয়ায় ৩২ দলের একটি হয়ে খেলতে এসেছে তারা।
বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচের ফল বলছে দারুণ শক্তিশালী দল সুইজারল্যান্ড। ফেবারিট স্পেনকে ঠেকিয়ে দিয়েছিল ১-১ গোলে এবং নবাগত পানামাকে হারিয়েছিল ৬-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে।
Advertisement
ম্যারাডোনা সুইজল্যান্ডের আশাও দেখছেন। তিনি বলেন, ‘অভিজ্ঞতা বলে, ইউরোপিয়ান দলগুলোর মধ্যে ফাটল ধরানো খুব কঠিন। বিশেষ করে বড় মঞ্চে। হয়তো তাদের সবার ট্যাকনিক্যাল সামর্থ্য কিংবা খুব ভালো স্কিল নেই। তবে তারা একটা নিয়মমাফিক খেলা খেলে থাকে সব সময়। মানসিকভাবে খুবই শক্তিশালী ইউরোপিয়ান ফুটবলাররা। সুইজারল্যান্ড তার মধ্যে একটি ভালো উদাহরণ। বিশ্বকাপ শুরুর আগে নিজেদেরকে তারা বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ৬ নম্বরে নিয়ে এসেছে। বসনিয়ান ট্যাকটিসিয়ান ভ্লাদিমির পেতকোভিক ৪-২-৩-১ ফরমেশনে সাজাবেন পুরো দলকে। মাঠের একেবারে গভীর থেকে দারুণ আক্রমণ জাসিয়ে তোলার সক্ষমতা রয়েছে তাদের।’
তবে কী সুইজারল্যান্ডের জন্য ব্রাজিল ম্যাচটি সহজই হতে যাচ্ছে? ম্যারাডোনা সেটা মোটেও মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘সুইজারল্যান্ডের জন্যও কাজটা হবে খুবই কঠিন। ব্রাজিল সম্ভবত ৪-৩-৩ ফরম্যাটে দল সাজাবে। আবার প্রয়োজনানুযায়ী এর মধ্যে পরিবর্তনও আসতে পারে। নানারকম কৌশলে দলকে পরিচালনা করতে পারেন কোচ তিতে। নেইমার এবং কৌতিনহো দুই উইং থেকে আক্রমণে থাকবেন এটা তো নিশ্চিত। হেসুস এবং ফিরমিনো থাকতে পারেন ফরোয়ার্ডে। গোল বের করে নেয়ার জন্য এর চেয়ে সেরা আক্রমণ আর হতে পারে না। এই চারজনই রয়েছেন সেরা ফর্মে। ৯০ মিনিট তাদের শান্ত রাখা খুবই কঠিন।’
নেইমারকে নিয়ে ম্যারাডোনার মন্তব্য, ‘ইনজুরি থেকে ফেরার পর নেইমারকে দারুণ দেখাচ্ছে। তবে তাকে এখন খুবই শান্ত থাকতে হবে। কারণ প্রতিপক্ষ জানে, নেইমারকে উস্কে দিতে পারলে সে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখায়।’
তিতের অধীনে সবচেয়ে উন্নতি করেছে ব্রাজিল ডিফেন্সে। এ নিয়ে ম্যারাডোনার মন্তব্য হচ্ছে, ‘তিতের অধীনে গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি হচ্ছে ডিফেন্সিভ ম্যাকানিজম। তিনি খুব দ্রুতই সমস্যা ধরতে পেরেছিলেন এবং সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, ব্রাজিলের ডিফেন্স ছিরে বল বের করা অসম্ভব প্রায়। থিয়াগো সিলভা এবং মার্কুইনহোস খুবই সলিড সেন্ট্রাল ডিফেন্সে। মিরান্দা রয়েছেন ব্যাকআপ হিসেবে। রিয়ালের হয়ে মার্সেলো ছিলেন দুর্দান্ত। দানি আলভেজের ইনজুরির কারণে রাইট ব্যাকে কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে হয়তো। তবে ম্যানসিটির দানিলো এই জায়গাটা দারুণ কাভার দিয়ে দিচ্ছেন। সুতরাং, ব্রাজিলের ডিফেন্স দারুণ শক্তিশালী। একই সঙ্গে মিডফিল্ড ধরে রাখার বিষয়টাও গুরুত্বপূর্ণ। ক্যাসেমিরো সে জায়গাটায় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।’
আইএইচএস/এমএস