‘আমরা গরিব মানুষ, বড় বড় শপিং মলে শিশুদের বিনোদন কেন্দ্রে ঢুকতেই দেড়শ দুইশ টাকা টিকিট লাগে। এরপর আবার প্রত্যেকটা রাইডের জন্য ৫০ টাকা করে খরচ। আর সরকারি এই শিশু পার্কে দুইশ টাকা খরচ করলে প্রবেশ টিকিটসহ সব রাইডে ছেলেমেয়েদের চড়ানো যায়। আমাদের মতো কম আয়ের মানুষের ভরসা এই শিশু পার্ক।’
Advertisement
ঈদের ছুটির দ্বিতীয় দিন সকাল সাড়ে ১১টায় শাহবাগ শিশু পার্কের টিকিট ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে এ কথা বলছিলেন রাজধানীর একটি গার্মেন্টের সুপারভাইজার আশরাফ আলী। স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে কমলাপুরের বাসা থেকে শিশু পার্কে এসেছেন তিনি। বাইরে প্রচণ্ড রোদ। স্ত্রীকে ব্যাগ থেকে ছাতা বের করতে বললেন তিনি।
সাত বছর বয়সী ছেলের বায়না মেটাতে তাকে শিশু পার্কে নিয়ে এসেছেন আশরাফ আলী। তিনি বলেন, অন্যান্য সময়ের তুলনায় ঈদের সময় এমনিতেই ভিড় হয় তারপর বিকেলের দিকে হাজার হাজার মানুষ। সকালে রোদ বেশি থাকলেও এ সময় মানুষ কম থাকে তাই ছেলেকে সকালেই নিয়ে এসেছেন তিনি।
আশরাফ আলী একা নন, তার মতো অনেকের কাছে নামমাত্র খরচে (টিকিট ১৫ রাইড ১০ টাকা) শিশুদের বিনোদনের একমাত্র ভরসা শাহবাগের এই শিশু পার্ক। আর তাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিন আজ (রোববার) সকাল থেকে শিশু পার্কে শিশু ও তাদের অভিভাবকদের ভিড় বাড়তে দেখা যায়।
Advertisement
সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে বিভিন্ন বয়সী নারী, পুরুষ ও শিশুরা গরম উপেক্ষা করে শিশু পার্কে আসছেন। কেউ কেউ গরম এড়াতে সাথে করে ছাতা ও খাবারপানিও নিয়ে আসেন।
বিভিন্ন রাইডের মধ্যে ‘আমাদের দেশটা স্বপ্ন পুড়ি সাথী মোদের ফুল পরী’ ঘূর্ণনচক্র, উড়োজাহাজ, হেলিকপ্টার, ব্যাটারিচালিত গাড়ি ও জাম্পিং রাইডেই শিশুদের আগ্রহ বেশি দেখা যায়। কেউ কেউ লম্বা লাইন দেখে রাইডে না চড়ে সোহরোওয়ার্দী উদ্যানের দেয়াল ঘেঁষা ছোট্ট পার্কের দোলনাতে শিশুদের সঙ্গে আনন্দে মেতে উঠেন।
রাজধানীর লালবাগ থেকে আনুমানিক ১০/১১ বছর বয়সী কয়েকজন শিশুকে টিকিট ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ওরা রাইডের টিকিট কিনতে নিজেদের মানিব্যাগ থেকে কড়কড়া নতুন ১০/২০ টাকার নোট বের করে নিজেদের মধ্যে একজনের কাছে জমা দিচ্ছিল।
আলাপকালে জানা যায়, ওরা সবাই নিউমার্কেটের বিভিন্ন দোকানে কাজ করে। গতকাল ঈদের দিনে মার্কেটের কয়েকজন দোকান মালিকের বাসায় গিয়ে তাদের সালাম করে সালামি পেয়েছে ওরা। ওই টাকা নিয়েই আজ শিশু পার্কে এসেছে। সারাদিনই শিশু পার্ক, রমনা পার্ক ও হাতিরঝিলে ঘুরবে। সালামির টাকা দিয়ে আইসক্রিম ও চটপটি কিনে খাবে। সন্ধ্যার পর তারা বাসায় ফিরবে বলে জানায়।
Advertisement
এমইউ/এসএইচএস/পিআর