গায়ে ফুলহাতা গেঞ্জি, চোখে সানগ্লাস। স্পার্টাক স্টেডিয়ামের ভিভিআইপি বক্সের ঠিক বাম কোনায় যেখানে বসে খেলা দেখেছেন দিয়েগো ম্যারাডোনা তার পাশ থেকেই শুরু দর্শক গ্যালারি। স্বচ্ছ কাঁচঘেরা কক্ষ থেকে ম্যারাডোনা হাতের ইশারায় সরব রাখলেন তার দেশের সমর্থকদের। আগুয়েরোর গোলে আর্জেন্টিনা এগিয়ে যাওয়ার পর পারলে কাঁচের দেয়াল ভেঙে বেড়িয়ে আসেন ম্যারাডোনা। আইসল্যান্ডের সমতাসূচক গোলের পর পারলে ছিড়েন নিচের মাথার চুল। এভাবেই নিজ দেশের প্রথম ম্যাচের ৯০ মিনিট কাটিয়ে হতাশা নিয়ে আসন ছাড়লেন আর্জেন্টিনার সর্বশেষ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক।
Advertisement
ম্যাচ শুরু হবে হবে। কেউ একজন বললেন- ওই যে ম্যারাডোনা। ব্যাস তার মুখের শব্দ যতদূর গেলো ততদূরের মানুষগুলো মুহূর্তে পেছনে তাকিয়ে খুঁজতে থাকলো আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ফুটবলারকে। মাঠে তখন মেসিরা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীতে ঠোঁট মেলাতে। ফটো সংবাদিকরা ক্যামেরা যতটা সম্ভব জুম করে তোলার চেষ্টা করলেন দূর থেকে ম্যারাডোনার ছবি। কারো ক্যামেরায় আসলো, কারো ক্যামেরায় আবছা আবছা। অনেকেই হলেন ব্যর্থ। দূর থেকে দেখা গেল, জাতীয় সংগীতের সময় মেসিদের সঙ্গে ঠোঁট মেলালেন দিয়েগো।
গ্যালারির সিংহভাগই ছিল আর্জেন্টাইন সমর্থকদের দখলে। তাদের গগনবিদারি চিৎকারে কোচ হোর্হে সাম্পাওলির নির্দেশনামূলক কথাও পৌঁছছিল না মেসিদের কানে। আর কাঁচঘেরা কক্ষ থেকে চিৎকার কীভাবে বাইরে আসবে? তবে মাঠে মেসিদের খেলা দেখার ফাঁকে ফাঁকে মোবাইল আর ক্যামেরা জুম করে, দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে ম্যারাডোনাকে খুঁজে বের করেছেন অনেকে। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপের নায়ক পেছনে, মাঠে এ সময়ের নায়ক মেসি। এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।
৬৪ মিনিটে পেনাল্টি কিক নিতে মেসি যখন বলের সামনে দাঁড়িয়ে তখন আসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলেন ম্যারাডোনা। তার যোগ্য উত্তরসূরি নিশ্চয়ই সূবর্ণ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলকে এগিয়ে দেবেন। পেনাল্টি নিলেন। ডান দিকে ঝাপিয়ে তা ঠেকিয়ে দিলেন আইসল্যান্ডের গোলরক্ষক হালদরসন। মেসি মাটির দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। কাঁচঘেরা শীতল কক্ষে দুই হাতে মাথা চেপে চিৎকার দিলেন ম্যারাডোনা।
Advertisement
মেসি মাঠে। যে কোনো সময় ম্যাচের ভাগ্য বদলে দিতে পারেন বার্সেলোনার এ সুপারস্টার। অনেকের চেয়ে বেশি বিশ্বাসতো ম্যারাডোনারই থাকার কথা। ছিল বলেই কিংবদন্তি এ ফুটবলার পেনাল্টি মিসের পর মিনিট পার না হতেই নিজে গ্যালারির দর্শকের দিকে ঘুরে হাত তালি দিয়ে তাদের উজ্জীবিত করলেন। গলা ফাটিয়ে কি যেন বলছিলেন মাঠের খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে। কিন্তু তার ওই চিৎকার যে মাঠে পৌঁছবে না সেটা হয়তো ভুলেই গিয়েছিলেন ফুটবলের এ মহানায়ক।
আরআই/জেডএ