পবিত্র ঈদুল ফিতরকে ঘিরে রাজধানীর শাহবাগের শিশু পার্কের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করে শিশু-ছেলে-বুড়ো সবার জন্য প্রাস্তুত করে রেখেছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। ঈদের দিন সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুরের পর মানুষের কলকাকলিতে মুখরিত হয় রাজধানী শাহবাগের এই বিনোদন কেন্দ্রটি।
Advertisement
সকাল ১০টা থেকেই বিনোদনের জন্য পার্কটি উন্মুক্ত করা হয়। সকালে খুব বেশি মানুষের সমাগম না হলেও দুপুর গড়িয়ে বিকেল শুরু হওয়ার আগে থেকেই বাড়তে থাকে বিনোদনপ্রেমী শিশু-কিশোর আর তরুণ-তরুণীর ভিড়। তারা দল বেঁধে হৈ হুল্লোর করে আসে শিশু পার্কে।
বিকেল সোয়া তিনটার পরে শিশু পার্কের কাছে গিয়ে দেখা যায় মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও রিকশার জট। রাস্তায় মানুষ ওঠা-নামা করার সময় এসব যানবাহনের সঙ্গে পেছনে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট এবং এদিকে শাহবাগ পযন্ত রাস্তায় বাস, মিনিবাস, প্রাইভেটকার থেকে জটের সৃষ্টি করছে।
জানা গেছে, শিশুপার্ক প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বিনোদনপ্রেমীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। প্রতি বছরের মতো এবারও অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মতো নিরাপত্তার ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে পার্কটিতে। এ জন্য এবার ৪০টি সিসি টিভি ক্যামরা লাগানো হয়েছে। পুরো পার্ক না হলেও ভেতর ও বাইরের প্রায় গুরুত্বপূর্ণ এলাকজুড়েই এই সিসি ক্যামেরার চোখ রয়েছে।
Advertisement
দর্শনার্থীদের কথা চিন্তা করে কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের নিয়মিত সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আজ ঈদের দিন থেকে শুরু করে টানা ৬ দিন চালু থাকবে এই বিনোদন কেন্দ্রটি।
শিশু পার্কে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুপুরের পর হালকা গরমের মাঝে শিশুরা তার মা-বাবার হাত ধরে পার্কের ভেতের ঢুকছে। ৬ বছর বয়সী শিশু সাবিহা তার বাবাকে বলছে, আব্বু আমি তোমার হাত ধরে ঘুরবো। সাবিহার কাছে জানতে চাইলে সে জাগো নিউজকে বলে, ‘আমরা দুই বোন আমার আব্বুর সঙ্গে ঘুরতে এসেছি, খুব মজা হবে।’
শিশু সাবিহার মতো চারদিক থেকে আসা শিশুরা তার অবিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে ঢুকেছে পার্কের ভেতরে। সেখানে কে কার আগে রাইডে চড়বে তার জন্য ছুটাছুটি করছে তারা।
ঢাকার শেওড়াপাড়া থেকে পরিবারের ১১ জন সদস্য নিয়ে শিশু পার্কে ঢুকছেন আনোয়ার হোসেন। টিকেট কিনে পরিবারের সবার মাঝে বিতরণ করছেন। তিনি জাগো নিউজকে জানান, চাকরি করি, পরিবারের সবাই কম বেশি ব্যস্ত থাকার কারণে বছরজুড়ে সময় হয়ে উঠে না বিনোদন কেন্দ্রে আসার। তাছাড়া, রাস্তা একেবারে ফাঁকা। ঢাকায় ফাঁকা রাস্তা পাওয়া কপালের বিষয়। তাই ফাঁকা শহরে আজ পরিবারের প্রায় এক ডজন সদস্য নিয়ে ঘুরতে আসলাম বেশ স্বস্তি পাচ্ছি।
Advertisement
শিশু পার্কের দায়িত্বরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন জানান, ‘শিশুদের আনন্দের জন্য ঈদের আগেই রাইডগুলোতে নতুন রঙ না করা হলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সব ধরনের মেরামত কাজ শেষ করে তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পার্কের ভেতরে প্রবেশ এবং রাইডগুলোতে উঠার জন্য আলাদা টিকিট থাকলেও। কোনোটির মূল্যই বাড়েনি।’
শাহবাগ শিশুপার্কে বিনোদনের জন্য ট্রেন, উড়োজাহাজ, উড়ন্ত বিমান, উড়ন্ত নভোযান, রোমাঞ্চ চক্র, আনন্দ ঘূর্ণি, বিস্ময় চক্র, এসো গাড়ি চড়ি, চাকা পায়ে চলা, লম্পঝম্প, ঝুলন্ত চেয়ার, ফুলদানি আমেজ ও এফ-৬ (জঙ্গি বিমান) ফেরিস হুইল স্কেটিং রিং, মেরি গো রাউন্ডসহ মোট ১২টি রাইড আছে। তবে মোট ১০টি রাইডে খেলার উপযোগী।
বছরের বেশিরভাগ সময় রাইডগুলোতে কম সংখ্যাক চড়লেও ঈদের সময় শিশুদের কলকাকলিতে পুরো শিশু পার্ক হয়ে উঠে উৎসবমুখর। তবে কোরবানির ঈদ এবং পহেলা বৈশাখেও লোক সমাগম হয় বেশ। কিন্তু রমজানের পর ঈদুল ফিতরেই তুলনামূলক বেশি লোকের সমাগম হয়। তাই টিকিটও বিক্রি হয় বেশি।
গত রমজানের পর ঈদের ৬ দিনে প্রায় ৫২ লাখ টাকা আয় হয়েছিল বলে জাগো নিউজকে জানান উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন।
শিশু পার্কে লোকের সমারোহ বেশি হওয়ার কারণ হলো, পাশেই শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর ঈদের দিন বন্ধ। খোলা হবে আগামীকাল বেলা ৩টা থেকে। তাই লোকজন জাতীয় জাদুঘর পরিদর্শনে ব্যর্থ হয়ে শিশু পার্কেই ঢুকছেন।
মানুষের কাছে ঈদ বরাবরই বাড়তি আনন্দের। আর ঈদকে ঘিরেই শিশুদের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দিতে এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে শিশু পার্ক।
ঈদের দিন সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে শিশু পার্ক। প্রবেশ মূল্য ১৫ টাকা। এছাড়া রাইডগুলোর জন্য ১০ থেকে ১৫ টাকা টিকিটের দাম রাখা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে মোট ৬ দিন বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এফএইচ/এসএইচএস/পিআর