চারিদিকে ঈদের আনন্দ। কত রকম খানাপিনা, পোশাক-আশাকের জৌলুশ, আনন্দ উদযাপনের অনুষঙ্গে মুখর নগর, নগরের মানুষ। কিন্তু এরমধ্যে কারো জীবনে থাকে নির্মম বাস্তবতার চোরা কষ্টের ঢেউ। ঈদের দিনটিও তাদের কাছে অন্য একটি দিনের মতো জীবন টেনে নেয়া দায়পূর্ণ কতগুলো মুহূর্ত ছাড়া কিছু নয়। ঈদের দিন উত্তাল আনন্দের আলোকিত এ নগরের পথে পথে দেখা মেলে তাদের। আনন্দ দীপের নিচে এ যেন অন্যরকম অন্ধকার।
Advertisement
রিকশাচালক মো. আক্তার হোসেন তেমনই তাদের একজন। মতিঝিলের দিলকুশার বীমা ভবনের সামনে ঈদুল ফিতরের দিন শনিবার দুপুরে দেখা হয় তার সঙ্গে। মেঘলা আকাশ সঙ্গে জোরালো হাওয়া। ফাঁকা রাস্তার পাশে রিকশায় বসেছিলেন তিনি।
পরিচয় দিয়ে কুশল বিনিময়ের পর আক্তার তার কষ্টের বৃত্তান্ত দেন। তিনি স্ত্রী ও ১১ বছরের ছেলে জুয়েলসহ জিঞ্জিরার চুনকুটিয়ায় ভাড়া থাকেন। মাছ বিক্রি করতেন। বাড়ি কেরানীগঞ্জের দড়িগাঁয়ে।
গত ২৫ রমজানের দিন দড়িগাঁয়ে যাওয়ার পথে স্ত্রী ও ছেলেকে বহনকারী সিএনজি অটো রিকশাকে ঢাকা-মাওয়া রুটে চলাচলকারী ইলিশ পরিবহন ধাক্কা দেয়। এতে স্ত্রীর মাথা ফেটে যায়, ছেলের বাম হাত ভেঙে যায়। সেই থেকে স্ত্রী ও সন্তান পুরনো ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
Advertisement
আক্তার বলেন, ‘ছেলের মায়ের মাথায় ১৩টা সেলাই লাগছে। চিকিৎসা খরচ চালাইয়া আমার ব্যবসার চালান শেষ। কার কাছে হাত পাতবো ভাই!’ বলতে বলতে চোখের কোণ চিক চিক করে উঠে আক্তারের।
তিনি বলেন, ‘জিঞ্জিরার রহিম নামের একজন রিকশার গ্যারেজের মালিক আমারে চিনে। সব হুইন্না হেয় কয় একটা রিকশা নিয়া চালা, তোর ভাড়া দেওন লাগবো না। হেরপর রিকশাই চালাই, ৪০০-৫০০ টাকা যা পাই তা দিয়া চিকিৎসা খরচ চলাই। হাসপাতালে দুইজনই এহন আগের চাইতে ভালা আছে।’
‘আইজ এমন একটা দিন, বউ-বাচ্চা হাসপাতালে আমি রাস্তায়। ঈদের দিন কত মানুষের কথা আনন্দ, আর বউ-বাচ্চা রাইখ্যা রাস্তায় রিকশা চালাইয়াই আমার দিন যাইব। পোলাডার কতা মনে কইরা খুব খারাপ লাগে ভাই, একটা জামা কিনে দিতে পারলাম না।’
এবার আর নিজেকে সংবরণ করতে পারেন না আক্তার। কান্নাজড়িত মুখ গামছায় ঢেকে নেন।
Advertisement
এরপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন, ‘এই দুনিয়ায় কত মানুষের কত কি অয় ভাই। বউ-বাচ্চা বাইচ্যা আছে, এইডাই বড়। কত ঈদ আইব। ভাই দোয়া করবেন, দোয়াডাই হইলো বড়।’
বলেই রিকশা নিয়ে রাজউক, বঙ্গভবনের সামনে রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে থাকেন আক্তার।
আরএমএম/এসএইচএস/পিআর