অবনতির দিকে যাচ্ছে মৌলভীবাজারের বন্যা পরিস্থিতি। কমলগঞ্জে পানির স্রোতে নিখোঁজ হওয়া একই পরিবারের ২ জনসহ ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শহরের সবাইকে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করার জন্য মাইকিং করে আহ্বান জানিয়েছেন পৌর মেয়র।
Advertisement
এদিকে আরও বেড়েছে মনু নদীর পানি। শনিবার দুপুরে চাঁদনীঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চরম ঝুঁকিতে পড়েছে মৌলভীবাজার শহর রক্ষাবাঁধ। শহরের সাইফুর রহমান রোডের অন্তত ২০টি জায়গা দিয়ে চুইয়ে পানি ঢুকছে শহরে। এতে বন্ধ রয়েছে ওই রোডের যান চলাচল।
শুক্রবার রাতে সেনাবাহিনীর ৬ সদস্যের দল পর্যবেক্ষণ শেষে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বাঁধে বালির বস্তা ফেলতে বলে। রাত থেকেই কয়েক হাজার বালুর বস্তা শহররক্ষা বাঁধে ফেলা হয়েছে। সার্বক্ষণিক অবস্থান করছেন জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম, পুলিশ সুপার শাহ জালাল, পৌর মেয়র ফজলুর রহমান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী পার্থসহ গণমাধ্যম কর্মীরা।
গতরাতে সেনাবাহিনীর ৬ সদস্যের অগ্রবর্তী দল পর্যবেক্ষণ শেষ আজ শনিবার দুপুরে ৬০ সদ্যসের টিম পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। যার ফলশ্রুতিতে আজ দুপুরে মৌলভীবাজার শহররক্ষা বাঁধে কাজ করতে সেনাবাহিনী কাজ শুরু করেছে। মনু নদের পানি গতকাল রাত থেকে বেড়ে শনিবার দুপুরে ১৫৯ সেন্টিমিটারে পৌঁছেছে।
Advertisement
এদিকে জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর এবং শমেশরনগরে বন্যার পানির স্রোতে গতকাল রাতে নিখোঁজ হওয়া বাবা-ছেলেসহ তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে কমলগঞ্জ পুলিশ। জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমদুল হক।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শাহবন্ধর থেকে শেরপুর পর্যন্ত ঢাকা সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের অন্তত ৩০টি জায়গা দিয়ে প্রতিরক্ষা বাঁধ উপচে পানি ঢুকছে। হাজার হাজার এলাকাবাসী ঈদের আনন্দ রেখে রাস্তায় নেমে নিজ উদ্যোগে বালুর বস্তা ফেলে প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছে। বেলা ১১টা থেকে ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক বন্ধ করে দিয়েছেন একালাবাসী।
পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী পার্থ জানিয়েছেন, আর মাত্র ৫ ইঞ্চি পানি বাড়লেই শহর রক্ষা বাঁধের উপর দিয়ে উপচে পানি ঢুকবে।
অপরদিকে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি। অন্তত ২শ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় ঈদ পালন করছেন।
Advertisement
শনিবার দুপুরে শহরতলির মাতার কাপন এলাকায় মনু নদীর তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে জেলার কমলগঞ্জ থানা রক্ষায় ১ হাজার বালুর বস্তা পাটিয়েছে পাউবো।
পাউবো জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ২০ হাজার বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে মনু এবং ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশে। হবিগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জ থেকে আরো বস্তা মৌলভীবাজারে পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন পাউবোর মহা পরিচালক মো. মাহফুজ রহমান।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম জানান, কুলাউড়া এবং রাজনগরে প্লাবিত এলাকায় সেনাবাহিনী কাজ করছে। শহররক্ষার কাজও শুরু করেছে।
তিনি আরও জানান, মৌলভীবাজারের ১৫টি স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ৫৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুদ আছে এবং বিতরণ করা হচ্ছে।
রিপন দে/এফএ/এমএস