বছরে দুটি ঈদ আমাদের মাঝে আসে। তার মধ্যে ঈদুল ফিতর অন্যতম। একমাস সিয়াম সাধনার পর আমাদের মাঝে আসে দিনটি। ঈদের দিন ধনি-দরিদ্রের বিভেদ থাকে না। সবাই একসঙ্গে নামাজ আদায় করে। একে অন্যের সাথে কুশল বিনিময় করে। ইসলাম এভাবেই ভ্রাতৃত্ব-বন্ধনে নিজেদের পরিচালিত করতে শিক্ষা দেয়। সবার মুখে হাসি ফুটবে, থাকবে না বিভেদ। জয়গান হবে সাম্যবাদের।
Advertisement
প্রতিবারের মতো এবারও গ্রামের দিনমজুর আ. করিমের কোনো রকম কেটে যাবে ঈদ। অর্থনৈতিক দীনতা যেন তার জীবনে সাথী হয়ে আছে। প্রতিদিন সকালে সে অন্যের মাঠে কাজ করে এভাবেই দিন অতিবাহিত করেন। তিন সন্তানেরর সংসারে বড় ছেলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে বাবাকে সহযোগিতা করে। পরিবার নিয়ে কোনোভাবে কেটে যায় আ. করিমের।
তিনি এবার একটু বেশি চিন্তিত। এর মূল কারণ স্ত্রীর চিকিৎসার অর্থ জোগাতে তাকে টাকা ধার করতে হয়েছে। গ্রামের মহাজনের কাছে বসতবাড়ি বন্ধক রেখে আনা টাকা শোধ করতে গিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হয়। সেখানে ঈদ নিয়ে ভাবনার সময় তার নেই। তবে বড় ছেলে সালমানের জন্য কিছু একটা কেনা চাই। কারণ অন্য দুটি সন্তান ছোট। তাদের না দিতে পারলে খুব একটা সমস্যা হবে না। বড় ছেলেটি বন্ধুদের সাথে দিনটি কাটাবে। সুতরাং ঈদের দিন তাকে নতুন জামা কিনে দেওয়া চাই। তবে সাধ থাকলেও সামর্থ যে নেই।
> আরও পড়ুন- ঈদের স্মৃতি এখন অন্তর্জালে
Advertisement
ঈদের মাত্র কয়েক দিন বাকি। সালমানের বন্ধুরা নতুন কাপড় কিনেছে। অনেকে তাকে বাড়িতে নিয়ে দেখায়। আবার বিকেলে খেলার মাঠে নতুন পোশাক নিয়ে তারা গল্প করে। এতে তার মন খারাপ হলেও নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করে এই ভেবে যে, যেখানে তিন বেলা খাবার পাওয়া কঠিন; সেখানে নতুন জামা পাওয়া স্বপ্ন ছাড়া কিছু নয়।
অন্যদিকে তার বাবা সন্তানদের ঈদে কিছু দেওয়ার জন্য চেষ্টা করে ব্যার্থ হন। অনেকটা ‘অভাগা যেখানে যায়, সাগরশুকিয়ে যায়’র মতো। তিনি একাকী ভাবতে থাকেন, আশেপাশে যারা ধনবান তাদের কেউ তো এগিয়ে আসতে পারতো। যাকাত-ফেতরার টাকা পেলেও একটা গতি হতো। তিনি হাত পাততে চান না তবে তার সামাজিক অবস্থান সহযোগিতা পাওয়ার উপযুক্ত। তার দুর্দশায় দিন কাটলেও এ বিষয়ে কোনো সমাজপতি, ধনবান বা তার প্রতিবেশীরা কখনো খোঁজ নেয় না। কিন্তুু ইসলাম কি এমন শিক্ষা দেয়!
ঈদের দিন চলে এলো। সকালে আ. করিম না খেয়ে বেরিয়ে পড়লেন পুরনো একটি জামা গায়ে দিয়ে ঈদগাহে নামাজ পড়তে। সালমান লজ্জায় মায়ের সঙ্গে বাড়িতেই রয়ে গেল। ঈদের নামাজ শেষে সালমানের বন্ধু সুজনের সঙ্গে দেখা হয় বাবা আ. করিমের। সুজন সবকিছু শুনে নিজের বাড়িতে গিয়ে তার ঈদের দুটি জামার একটি এবং মাকে বলে কিছু খাবার নিয়ে সালমানের বাড়িতে উপস্থিত হয়।
> আরও পড়ুন- ঈদের আনন্দই স্পর্শ করে না ওদের
Advertisement
উপহার পেয়ে সালমান প্রথমে সংকোচ বোধ করে। সালমানকে নিয়ে সুজন নিজের বাড়িতে যায়। এরপর সারাদিন সুন্দর একটি ঈদ উপভোগ করে তারা।
লেখক: শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
এসইউ/এমএস