জাতীয়

ঘরমুখো মানুষের তর যেন সইছে না

‘আব্বু আমাদের বাস কখন আসবে? বাসায় পৌঁছাতে কি বেশি রাত হয়ে যাবে? বাড়ি ফিরে কি দাদুর দেখা পাব?’ কাউন্টারে বসে ছোট্ট ছেলের এমনই অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছেবাবা আশিকুর রহমানকে ।

Advertisement

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টারে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বাস আসার অপেক্ষায় ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা আশিকুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘অফিস ছুটি দিয়েছে কাল। কিন্তু গতকালকের কোনো টিকিট পাইনি। আজকে দুপুরের বাসে গ্রামের বাড়ি বগুড়া যাচ্ছি। গতকাল বেশ কিছু কেনাকাটা করেছি। বাড়ি ফিরতে অনেক অনেক ভাল লাগছে। বেশি ভাল লাগার কারণ এবার তুলনামূলক ভোগান্তি কম। সময় মতো বাস ছেড়ে যাচ্ছে।’

আজ ২৯ রজমান। আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ। তবে আজ চাঁদ না উঠলে রোববার ঈদ। এমন সমিকরণে বসে না থেকে ভোর হতেই ঘরমুখো মানুষ সবাই বেরিয়ে পড়েছেন। জনস্রোত মিশে গেছে সব বাস, লঞ্চ ও রেল স্টেশনে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত ঈদযাত্রা স্বস্তির। আশা করছি এবার ঝামেলামুক্ত ঈদযাত্রা হবে সবার। প্রতিবার টাঙ্গাইলে যে সমস্যা হয় এবার সেরকম কোনো সমস্যা নেই। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজট নেই, ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কও ফ্রি। এবার যাত্রীরা ভালোভাবে ঘরে ফিরছে। রাস্তার জন্য কোথাও কোনও যানজট নেই।’

পরিবহন কর্তৃপক্ষ বলছেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে গার্মেন্ট ছুটির কারণে যাত্রীদের অনেক চাপ বাড়ায় সড়কেও যানবাহন বেড়েছিল। তবে ভারী বর্ষণ না থাকায় ও রাস্তায় বিশেষ যানজট না থাকায় স্বস্তিতেই এবার ঈদ যাত্রীরা পৌঁছে যাচ্ছেন বাড়ি।

শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গ্রামের বাড়ির পানে ছুটছেন রাজধানীর মানুষ। উপচে পড়া ভিড় রাজধানীর গাবতলী আন্তঃজেলা বাস স্টেশন, কল্যাণপুর ও শ্যামলীতে। বাস কাউন্টারে আগাম আসা যাত্রীরা অপেক্ষায় বাসের। যারা আজ যাচ্ছেন তাদের অনেকেরই অগ্রিম টিকিট কাটা নেই।

এমনই একজন গাইবান্ধার সাইফুল ইসলাম। সদর থানার এ ঈদ যাত্রী থাকেন কুমিল্লায়। ঢাকায় আসার পর গাবতলীতে তিনি বলেন, ‘এখনও টিকিট পাইনি, কাউন্টারগুলোতে খোঁজ নিচ্ছি। যে বাসেরই টিকিট পাব, উঠে পড়বো। মন চলে গেছে বাড়িতে, আর তর সইছে না ‘

Advertisement

গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, ঈদের আগের সেই চিরচেনা রূপ। সকাল থেকে যাত্রীর আনাগোনা বাড়তে থাকে। কেউবা হন্যে হয়ে খুঁজছেন টিকিট। সময় মতো আসা বাস মুহূর্তেই যাত্রীতে মধ্যে ভরে যাচ্ছে।

অনেককে আবার টিকিট কিংবা সিট না পেয়ে বাসের ইঞ্জিন কাভারে, কাউকে কাউকে লোকাল বাসের ছাদেও উঠতে দেখা যায়। পরিবারের কাছে যাওয়ার আনন্দ যেন তাদের সব কষ্ট, দুর্ভোগ এবং ঝুঁকিকে ম্লান করে দিচ্ছে।

পাবনার যাত্রী সেলিম বসেছেন বাসের ইঞ্জিন কাভারে। তিনি বলছিলেন, মা অপেক্ষা করছেন। এমনটা ভাবলেই উড়ে যেতে ইচ্ছে করছে বাড়ি। কতোক্ষণে বাড়ি যাব সেই অপেক্ষাই এখন কষ্টের।

কল্যাণপুর হানিফ এন্টারপ্রাইজের সহকারী ম্যানেজার সফিকুল ইসলাম বাবু জানান, অনেক বছর পর এবারই প্রথম সিডিল বিপর্যয় ছাড়া সময় মতো বাস ছেড়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইলে গিয়ে বাসের গতি কমে গেলেও যানজট নেই। আশা করছি আজও স্বস্তিতে ঘরে ফিরবেন ঈদ যাত্রীরা।

জেইউ/এমএমজেড/পিআর