কোনো বিশৃঙ্খলা নেই, অন্যান্য বারের তুলনায় এবার ঈদে মানুষের মধ্যে আনন্দ উচ্ছ্বাসের পরিমাণটা অনেক বেশি এমন উল্লেখ করে পুলিশের সর্বোচ্চ কর্তা আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, ‘আমাদের প্রতিটি সদস্য রোযা রেখে সারা দিনরাত আপনাদের সেবা করছে। কালকে আমি রাত দুইটার সময় ফোন করেছি ডিআইজি হাইওয়েকে। সে তখন বললো, স্যার আমি এখন চন্দ্রাতে দাঁড়িয়ে আছি, সারা রাত এখানে থাকবো।’
Advertisement
ঈদে সাত দিনব্যাপী পুলিশের বাড়তি বিশেষ নিরাপত্তা থাকার কথা জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকটা সদস্যের কমিটমেন্ট সিনসিয়ারিটি আমাকে সত্যিকার অর্থে অবিভূত করেছে।’
শুক্রবার সকালে রাজধানীর সদর লঞ্চটার্মিনাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন পুলিশ প্রধান।
এ সময় ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) সহেল ফেরদৌসসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
Advertisement
গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হয়ে প্রথমেই কুশল বিনিময় করেন আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী। তিনি বলেন, ‘কেমন আছেন আপনারা, ভালো আছেন? আপনারা ভালো থাকলে দেশবাসীও ভালো থাকবে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন আছে কি না?’
এ সময় একজন সাংবাদিক লঞ্চ টার্মিনাল পরিদর্শনসহ সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, ‘আমি আপনাকে প্রশ্ন করি, আপনি কেমন দেখছেন? বলেন, আপনারা কেমন দেখলেন পরিস্থিতি?’
আইজিপি আরও বলেন, ‘একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে, সাংবাদিক হিসেবে আপনার চোখ দিয়ে কেমন দেখলেন?
একসঙ্গে বেশ কিছু গার্মেন্ট ছুটি হওয়ার যাত্রীদের বাড়তি চাপের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘চাপটা বেশি থাকবে এটাই কি স্বাভাবিক নয়? ঈদের সময় আপনারা কি আশা করেন, অন্য সময় যে চাপ থাকে, ঈদের সময়ও সেরকম চাপ থাকবে? তা তো নিশ্চয়ই থাকবে না, তাই না?’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘আসলে চাপটা বেশি আছে, বিকজ আপনারা জানেন ঈদের ছুটিতে শুধু ঢাকায় নয়, আশপাশেও যারা থাকেন তারা সবাই না হলেও বিশাল একটা অংশ কিন্তু গ্রামে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে যান। সেজন্য ঈদের সময় চাপটা অন্যান্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি থাকে।’
আইজিপি বলেন, ‘কিন্তু আপনি দেখেছেন যে এখানে কোনো বিশৃঙ্খলা নাই। অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে যাত্রীরা যাচ্ছেন। লঞ্চ ঘাটে ভিড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভরে যাওয়ার পর পরই অটোমেটিক্যালি যাতে ছেড়ে দিতে পারে এবং ছেড়ে যায় সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তার আগের দিন আমরা হাইওয়ে পরিদর্শন করেছি। দেখেছি যে, আমাদের প্রতিটি সদস্য রোযা রেখে সারা দিনরাত আপনাদের জন্য পরিশ্রম করছে। আমাদের প্রত্যেকটি সদস্য সে যেখানে থাকুক না কেন, যেখানেই দায়িত্ব পালন করুক না কেন, তারা অত্যন্ত নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পেরেছে বলেই আমি মনে করি। কালকে যদি ঈদ হয়, আজকের মধ্যে সবাই যাতে নিজ নিজ গন্তব্যে গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারে সে জন্য আমাদের প্রচেষ্ঠা অব্যাহত থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘শুধু লঞ্চ নয়, যারা বাস-ট্রেনে করে অথবা অন্যান্যভাবে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন, সবার জন্য আমাদের কিছু টিপস আছে, যেটা আপনারাও জানেন। আপনাকে যাত্রী হিসেবে কিছু টিপস মেনে নিতে হয়। গতকালও এই সদরঘাট থেকে বেশ কিছু দুস্কৃত ধরা পড়েছে। যারা অজ্ঞান পার্টি বা মলম পার্টির সদস্য ছিল। আপনারা এখানে অনেক ইউনিফর্মধারী পুলিশ সদস্যকে দেখছেন। এছাড়াও আমাদের অনেক সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। শুধু লঞ্চঘাটে নয়, বাস স্টেশন, ট্রেন স্টেশন এবং অন্যান্য জায়গায়ও আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘আমরা মনে করি অন্যান্য বারের তুলনায় এবার মানুষের মধ্যে আনন্দ উচ্ছ্বাসের পরিমাণটা অনেক বেশি। আপনারা দেখেছেন সারারাত ধরে কেনাকাটা হচ্ছে। প্রত্যেকটি শপিংমল ভরপুর, আপনি রাত ২টায় যান, ৩টায়, ৪টায় যান, সেহরি খেয়ে তারপর লোকজন দোকানপাট বন্ধ করছে। সবার মধ্যে একটা সবাই আনন্দের সঙ্গে কেনাকাটা সেরে এখন গ্রামে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।’
তিনি বলেন, ‘আর যেটা আপনি বললেন এক সাথে গার্মেন্টস ছুটি হওয়ার কারণে এটা আমাদের জন্য অতিরিক্ত চাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে। যেমন কালকে বিকেলের দিকে হঠাৎ করে বেশ কিছু গার্মেন্টস ছুটি দিয়েছে। লাখ লাখ গার্মেন্টসকর্মী একসঙ্গে রাস্তায় নেমে আসে বাড়ি যাওয়ার জন্য। আলহামদুলিল্লাহ সারারাত চেষ্টা করে আমরা তাদের বাড়ি পৌঁছাতে পেরেছি। আমি মনে করি দুপুরের পর থেকে চাপ কিছুটা কমে আসবে। ’
ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঈদের পরেও আমাদের এই স্পেশাল অ্যারেজমেন্ট থাকবে সাত দিন পর্যন্ত। সুতরাং ফেরার পথেও যাতে যাত্রীরা নির্বিঘ্নে বাসা বাড়িতে পৌঁছাতে পারে আমাদের সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। কেএইচ/আরএস/এমএমজেড/জেআইএম/এমএস