কমলাপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মগুলোর কোথাও ফাঁকা নেই, সব দিকে যাত্রী আর যাত্রী। স্টেশনে পৌঁছানোর পর যারা কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের দেখা পেয়ে যাচ্ছেন তারা ছুটছেন গন্তব্যে, বাকিরা থাকছেন অপেক্ষায়।
Advertisement
প্ল্যাটফর্মগুলোর যে চিত্র একই চিত্র ট্রেনের ভেতরেও। যাত্রীর ভিড়ে ট্রেনের ভেতরে যে পা ফেলার জায়গা নেই। তার মধ্যেই আরও যাত্রীকে উঠতে হচ্ছে ট্রেনে। দরজা ও জানালা দিয়ে, তাও যদি না হয় ছাদে উঠে পড়ছেন অনেকে।
এই হলো বৃহস্পতিবার ট্রেনে ঘরের ফেরার সার্বিক চিত্র।
ট্রেনে ঈদযাত্রা শুরু হওয়ার পর আজই সবচেয়ে বেশি মানুষের ঢল নেমেছে কমলাপুরে। একটি ট্রেন প্ল্যাটফর্মে এসে পৌঁছানো মাত্রই যাত্রীরা ছুটে যাচ্ছেন দরজার খোঁজে। প্রায় সবার হাতেই ছিল ব্যাগ-ব্যাগেজ। যারা টিকিটে আসন পাননি তারা ট্রেনের বগির ভিতরে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন অথবা উঠে পড়ছেন ছাদে।
Advertisement
ইট-পাথরের শহর ছেড়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে রাজধানীবাসী। ঈদ এলেই টিকিটপ্রাপ্তি থেকে শুরু করে বাড়ি পৌঁছানো পর্যন্ত পথে পথে ভোগান্তি পোহাতে হয় ঘরমুখো মানুষদের। রাজধানীর একঘেয়েমি জীবনের সাময়িক বিরতি দিয়ে কর্মজীবী মানুষের সামনে আসে প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার মুহূর্ত। সেই ঈদের আনন্দ প্রিয়জনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। এসব মানুষের ভিড়ের সব স্রোত যেন এসে মিলেছে কমলাপুরে।
রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের ছাদে ওঠার চেষ্টা করছিলেন তরিকুল ইসলামসহ আরও ছয়জন। তারা সবাই নির্মাণ শ্রমিক। ঈদ উদযাপনে যাচ্ছেন গ্রামে। আলাপকালে তরিকুল ইসলাম বলেন, এসে স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটেছি, কিন্তু ট্রেনের ভিতরে এত মানুষ যে ঢোকার মতো পরিস্থিতি নেই, যে কারণে বাধ্য হয়ে ছাদে উঠেছি আমরা।
অন্যদিকে একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট থাকার পরও নির্দিষ্ট আসন পর্যন্ত স্ত্রীকে নিয়ে পৌঁছাতে পারছিলেন না বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী ইউনুস আলী। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘১৩/১৪ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে হয়েছিল, কিন্তু আজ এসে ভিড়ের কারণে নিজের সিট পর্যন্ত পৌঁছাইতেই পারছি না। ঈদের সময় এত মানুষের ভিড়ের কথা মাথায় রেখে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠ ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।’
সকাল ৮টার চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি কমলাপুর ছেড়েছে বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে। ট্রেনটির জন্য অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী নিলয় আহমেদ। তিনি বলছিলেন নিজের ক্ষোভের কথা। বলেন,দুই ঘণ্টার বেশি হল ট্রেনটির কোনো খবর নেই, রোজা রেখে ঈদযাত্রা এমনিতেই কষ্টের, তারমধ্যে আবার ট্রেন এতটা লেট। ছোট সন্তান ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ আমাদের খুবই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। এমন পরিস্থিতি থেকে আমরা সাধারণ যাত্রীরা মুক্তি চাই।
Advertisement
এ ছাড়া বিলম্বে ছেড়েছে খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস, ধূমকেতু এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, লালমনি ঈদ স্পেশাল।
ঈদযাত্রার সার্বিক বিষয় নিয়ে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, আজ সারিদনে কমলাপুর থেকে ৬৯টি ট্রেন ছেড়ে যাবে। দুই-একটি ট্রেন বিলম্বিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘অগ্রিম টিকিট বিক্রির দিনই আমরা ধারণা করতে পারছিলাম আজ উপচেপড়া ভিড় হবে। এরমধ্যেই চেষ্টা করছি সিডিউল ঠিক রাখতে। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে যাওয়া-আসার সময় স্টেশনে ওঠা-নামা করতে যেখানে ২ মিনিট অপেক্ষা করার কথা সেখান ৫/১০ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এই কারণে ট্রেনটি পৌঁছাতেও কিছুটা দেড়ি হচ্ছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি যেন সঠিক সময়েই সব ট্রেন ছেড়ে যেতে পারে।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহকারীদের ঈদ যাত্রা শুরু হয়েছে গত ১০ জুন। শুক্রবার পর্যন্ত ট্রেনের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহকারীরা যাত্রা করবেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজও কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে নাড়ির টানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটবে মানুষ।
সব মিলিয়ে যেসব আজ কমলাপুর ছেড়ে গেছে সে ট্রেনগুলো দেখে কবিগুরুর লেখা সোনার তরী কবিতাটিই মনে আসতে পারে। মনে পড়বে সেই লাইনটি- ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোটো সে তরী/আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
এএস/এনএফ/আরআইপি