খেলাধুলা

ঐতিহ্যের চ্যালেঞ্জ রাশিয়ার, ইতিহাস গড়ার প্রত্যয় সৌদির

বিশ্বকাপে রাশিয়া প্রথম নয়। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বর্তমানের রাশিয়া মিলে দশমবারের মতো অংশ নিচ্ছে ফুটবলের সবচেয়ে বড় ও মর্যাদার এ টুর্নামেন্ট। কিন্তু প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজন করে রাশিয়ার ফুটবল রঙ-বর্ণহীন। দেশটির ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় বিশ্বকাপ আয়োজন করছে রাশিয়া। ৩২ দেশের মধ্যে সবার নিচে থেকে আন্ডারডগ হিসেবেই মাঠে নামতে হচ্ছে লেলিনের দেশকে।

Advertisement

উদ্বোধনী ম্যাচে রাশিয়ার প্রতিপক্ষ সৌদি আরব। শক্তিতে দুই দেশের পার্থক্য বেশ। এশিয়ার দেশটিরও একটা রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে উদ্বোধনী ম্যাচ দিয়ে। এই প্রথম এশিয়ার কোনো দেশ খেলছে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ। ইতিহাসের অংশ হতে যাওয়া দিনটি কী রাঙিয়ে দিতে পারবে সৌদি আরব? বুধবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে সৌদি আরবের কোচ হুয়ান অ্যান্থনি পিজ্জি বলেছেন, তারা গ্যালারির দর্শকের উচ্ছ্বাসটা থামিয়ে দিতে চান।

সৌদি জিতলে তাদের রেকর্ড যেমন সমৃদ্ধ হবে তেমন ভেঙ্গে যাবে বিশ্বকাপের ৮৮ বছরের আরেকটি ইতিহাস। উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিকদের না হারার রেকর্ড হয়ে যাবে ধুলিষ্যাত। রাশিয়া কী পারবে স্বাগতিকদের সেই গৌরব ধরে রাখতে? জয় না হোক, অন্তত ড্র করতে পারলেও অটুট থাকে আগের আসরগুলোর রেকর্ড।

রাশিয়ার যে ১১ শহরে বিশ্বকাপ হবে তার মধ্যে প্রধান মস্কো। দেশটির রাজধানীর দুটি স্টেডিয়াম লুঝনিকি ও স্পার্টাক আছে ভেন্যুর তালিকায়। তবে সবার দৃষ্টি থাকবে লুঝনিকির দিকে। এখানে উদ্বোধন, এখানেই ফাইনাল। একটা ভেন্যুর ঐতিহ্য রাঙাতে আর কী লাগে।

Advertisement

কিন্তু রাশিয়ার মানুষ কী এ সব নিয়ে ভাবে? হয়তো ভাবে। কিন্তু ফুটবল নিয়ে তাদের আগ্রহের জায়গা যে আগের অবস্থানে নেই। এক সপ্তাহ হলো মস্কোতে আছি। কোনো রাশিয়ানকে দেখা যায়নি নিজ দেশের ফুটবল নিয়ে সেভাবে আগ্রহ প্রকাশ করতে। কেমন করতে পারে রাশিয়া? এমন প্রশ্নের উত্তরে বেশিরভাগ রাশিয়ানেরই এক উত্তর-‘নট গুড।’

বাংলাদেশ সময় রাত ৯ টায় বাঁজবে বিশ্বকাপের বাঁশি। বিশ্ব কাঁপিয়ে শুরু হয়ে যাবে বিশ্বকাপ। আর সে বাঁশি যে শহর থেকে বাজবে সেই মস্কোকে তো উৎসবের নগরী বানিয়ে রেখেছেন ভীনদেশিরা।

এই যেমন ১২ জুন রাশিয়ার জাতীয় দিবস উদযাপনতো রাঙিয়ে দিয়েছিল নানা দেশের নানা রঙের মানুষেরা। মস্কোর ঐতিহাসিক রেড স্কয়ারে হাজার হাজার বিদেশি মানুষ উৎসব করেছে দিনভর। বিদেশিদের সরব উপস্থিতি না থাকলে মস্কোকে বিশ্বকাপের শহর মনেই হতো না।

শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোয় বরং ভীনদেশিদের নানা ধরনের উৎসব উপভোগ করছে স্থানীয় মানুষ। স্থানীয়রা হেটে যাচ্ছেন-পাশে দেখা গেলো ভীন দেশি একদল সমর্থ ব্যস্ত নাচ-গানে। রাশিয়ানরা একটু মুচকি হেসে পাশ দিয়ে হনহন করে চলে যাচ্ছেন।

Advertisement

বুধবার রাতে যখন কাজ সেরে লুঝনিকি স্টেডিয়াম থেকে হোটেলে ফিরছিলাম তখন রাশিয়ান মানুষদের মধ্যে দেখা গেছে দ্রুত ঘরের ফেরার ব্যস্ততা। অন্য দিকে প্রায় মধ্যরাতে বিভিন্ন স্থানে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, পেরু, মেক্সিকো, চিলি, ইরান, কোরিয়া, জার্মানীসহ বিভিন্ন দেশের সমর্থকরা জটলা বেধে নিজেদের দলের পক্ষে কোরাশ গাইছেন।

বিশ্বকাপ মানেই ফিফার বড় চ্যালেঞ্জ। রাশিয়া বিশ্বকাপের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনেরও। এই তো এক মাস আগেও কয়েকটি দেশ সুর তুলেছিল বিশ্বকাপ বয়কটের। যদিও ফিফা আয়োজিত কোনো টুর্নামেন্টে বয়কটের মতো দু:সাহস কারো নেই। তারউপর এটা বিশ্বকাপ। সন্ত্রাসী গ্রুপের হামলার হুমকীও ছিল বিশ্বকাপ চলাকালীন। তবে এখানকার নিরাপত্তা ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা জানান দিচ্ছে ভালোয় ভালোয় শেষ হবে বিশ্বকাপ।

রাশিয়া দলের অবস্থা ভালো নয়। এটা দেশের মানুষের জন্য যখন মন খারাপের বিষয় তখন দেশটির প্রধান পুতিনেরতো হবেই। তাইতো তিনি ফুটবলারদের দেশের জার্সি, দেশের জন্য, দেশের ঐহিত্যের কথা মনে করে নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেলার উপদেশ দিয়েছেন। রাশিয়ার মানুষও বেশি কিছু চায় না ফুটবলারদের কাছে থেকে। গ্রুপ পর্ব পার হলেই সেটা হবে রাশিয়ানদের জন্য বিশাল অর্জন।

রাশিয়ার কোচ স্তানিস্লাভ চেরিসভ ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘লুঝনিকি স্টেডিয়ামের সমর্থন জানাবে আমাদের। এক ম্যাচ জিতলে সব চিত্রই বদলে যাবে। ফুটবলে সব কিছুই সম্ভব। আমরা দর্শকদের আনন্দ দিতে চাই।’

আরআই/এসএএস/আরআইপি