দেশজুড়ে

ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে দিনাজপুরের পাঁপড়

দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী পাঁপড় খাদ্য শিল্প, বর্তমানে বিনিয়োগের অভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে।। এখনো এ শিল্পের উপর জীবিকা নির্বাহ করছে দিনাজপুর শহরের প্রায় ৯০০ পরিবার।এক সময় দিনাজপুরের সুস্বাদু-মুখরোচক পাঁপড় গোটা ভারতবর্ষের ভোজন-বিলাসীদের কাছে ছিল অত্যন্ত প্রিয় খাদ্য। অথচ পাঁপড় তৈরির কোন শিল্প-কারখানা এ এলাকায় গড়ে না উঠায় হাতে তৈরি পাঁপড়ের চাহিদা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। হাতে পাঁপড় তৈরি করতে বেশি পুঁজি, যন্ত্রপাতি, মেশিন লাগে না। পরিবারের সব সদস্য মিলে যে কোন পরিবেশে পাঁপড় তৈরি করতে পারে। ফলে ভোজন-বিলাসীদের কাছে পাঁপড় ধীরে ধীরে অরুচিকর খাদ্যে পরিণত হচ্ছে। এদিকে হাতে তৈরি পাঁপড়ের ন্যায্যমূল্য কারিগররা পাচ্ছে না। আর সমুদয় মুনাফা চলে যাচ্ছে মহাজনদের কাছে।পাঁপড় তৈরিতে বেশিরভাগ মুগের ডাল, খেসারির ডাল, চালের গুঁড়া ও আলু ব্যবহার করা হয়। ডাল গুঁড়া করে তার সঙ্গে কালো জিরা ও অন্যান্য মসলা পানি দিয়ে মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করতে হয়। তারপর ছোট ছোট রুটি তৈরি করা হয়। পরে রুটির মতো বেলে রৌদ্রে শুকানো হয়। এরপর প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরে রং-বেরংয়ের লেভেল দিয়ে বাজারজাত করা হয়।পাঁপড় সুস্বাদু ও মুখরোচক খাবার হওয়ায় অভিজাত শ্রেণির পরিবারের টেবিলে নাস্তা ও চা-পানির সঙ্গে দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশের পৌষ-পার্বণের মেলা, পূজার মেলা, ঈদের মেলাসহ বিভিন্ন মেলায় ভোজন-বিলাসীদের জন্য পাঁপড় এক বিশেষ আকর্ষণ। যুগ যুগ ধরে বাংলার জনপদে পাঁপড় একটি ঐতিহ্যবাহী মুখরোচক খাদ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। পাঁপড়ের চাহিদা বাঙালি ভোজন-বিলাসীদের নাস্তার তালিকায় আবহমান কাল থেকে অদ্যাবধি বিন্দুমাত্র কমেনি।কিন্তু পরিতাপের বিষয় পাঁপড় শিল্পের উন্নয়নের প্রতি কোন সরকারেরই দৃষ্টি নেই। অথচ পাঁপড় শিল্পকে কুটির শিল্পের আওতায় এনে স্বল্প মেয়াদি ঋণ বিনা সুদে প্রদান এবং পাঁপড় কারিগরদের উন্নতমানের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যাপারে সরকারের ছোট যন্ত্রপাতি, দিয়ে সহযোগিতা করা প্রয়োজন বলে অভিজ্ঞমহল মনে করেন। পাঁপড় শিল্প দেশের গলি পেরিয়ে দেশ-বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা সম্ভব।দিনাজপুর শহরের শেরশাহ পাড়া, চকবাজার, দপ্তরিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঁপড় কারিগররা নিজ উদ্যোগে পাঁপড় তৈরি করছে। পাঁপড় কারিগর শেরশাহ পাড়ার রহিমা জানায়, তিন বছর আগে রহিমার স্বামী তাকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করে আলাদা হয়ে যায়। নিরুপায় হয়ে রহিমা এক মেয়ে সন্তান নিয়ে বাঁচার তাগিদে অল্প পুঁজি দিয়ে পাঁপড় তৈরি করা শুরু করে। পাঁপড় তৈরি করে বিভিন্ন দোকানে দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৮০/৯০ টাকা আয় করে, যা দিয়ে কোনমতে তার ছোট্ট সংসার চলে। একই অবস্থা পাঁপড় কারিগর বিউটি, পারভীন, রোজি, হাসনা, মনা ও আঞ্জুয়ারার। পাঁপড় তৈরির কাজে নিয়োজিত আঞ্জুমান আরা জানায়, তারা মহাজনদের সঙ্গে পাঁপড় তৈরিতে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিল। মহাজনরা দীর্ঘ আন্দোলনের পর ১০০ পাঁপড় তৈরিতে মজুরি ৭ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১০ টাকা করেছে।পাঁপড় তৈরিতে যে সকল নারী ও শিশু জড়িত রয়েছে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের ১৫০ টাকার স্ট্যাম্পে যৌথ স্বাক্ষর রয়েছে। আগামী তিন বছর তারা পাঁপড় তৈরির জন্য মূল্যবৃদ্ধি করতে পারবে না এমন শর্তে।উলে­খ্য, বর্তমানে দিনাজপুরের ভোনজ-বিলাসীদের কাছে পাঁপড় অরুচিকর খাদ্যে পরিণত হতে চলেছে। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করা হয়েছে।এমদাদুল হক মিলন/এআরএ/এমএস

Advertisement