রাজধানীর সদরঘাটের আগে রায় সাহেব বাজার থেকেই চোখে পড়ছে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। নাড়ির টানে হাতে ও কাঁধে একাধিক ব্যাগ, কারো মাথায় বস্তা, মালামাল নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ চলছেন সদরঘাটের উদ্দেশ্যে। কারণ তারা এ নগরের অস্থায়ী বাসিন্দা।
Advertisement
আগামী ১৬ বা ১৭ জুন দেশে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হবে।
ঈদে ঘরমুখো মানুষ বুধবার সকাল থেকেই সদরঘাট আসতে শুরু করেন। দুপুরের মধ্যে বেশির ভাগ লঞ্চ যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে যায়। এজন্য কয়েকটি লঞ্চ সকালে সদরঘাট ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সদরঘাটে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাড়ি ফিরতে সদরঘাটে সবচেয়ে বেশি লোক হবে বৃহস্পতিবার (১৪ জুন)। শুক্রবার আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
বিআইডব্লিউটিএ-এর সদরঘাট বন্দরের যুগ্ম-পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা) আলমগীর কবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভরে যাওয়ায় সকালে রাঙ্গাবালী ও ভোলার দু’টি লঞ্চ সদরঘাট ছেড়ে গেছে, যদিও এই লঞ্চগুলোর ছেড়ে যাওয়ার সিডিউল ছিল বিকেলে।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘আজ যাত্রীদের চাপ আছে, কাল চাপটা হবে সবচেয়ে বেশি। নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে আমরাও প্রস্তুত। কোস্টগার্ড, পুলিশ, র্যাব সদরঘাটে দায়িত্ব পালন করছেন।’
বুধবার বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের জন্য ১২০-১২৫টি লঞ্চ প্রস্তুত আছে বলেও জানান আলমগীর কবির।
মূল টার্মিনালে ঢাকা-বরিশাল রুটে চালাচলকারী অ্যাডভেঞ্চার-৯, সুরভী-৭ ও ৯, সুন্দরবন-১০, কীর্তনখোলা-২, পারাবত-৯, ফরহান-৮ লঞ্চ দেখা গেছে। এছাড়া ঝালকাঠি রুটে চলাচলকারী সুন্দরবন-১২; মাদারীপুরে রুটে চলা পারাবত-১৫, ভান্ডারিয়া রুটের অগ্রদূত প্লাস, ফারহান-৭ ও ১০, টিপু-১২, মনিংসান-৯; আমতলী রুটের প্রিন্স অব হাসান-হোসেন-১; বরগুনা রুটের সুন্দরবন-৫, মানিক-৯, যুবরাজ-২; চরফ্যাশন রুটের কর্ণফুলী-২, ফারহান-৬; বোরহানউদ্দিন রুটের গাজী সালাহউদ্দিন; হাতিয়া রুটের ফারহান-৪ ও তাসরিফ-১; ভোলা রুটের গ্লোরী অব শ্রীনগর-৭, কর্ণফুলী-৪ ও ৯; ঘোষেরহাট রুটের প্রিন্স অব রাসেল-৪, গ্লোরী অব শ্রীনগর-৮ লঞ্চ ঘাটে দেখা গেছে।
পূর্বদিকের টার্মিনালে ছিল পটুয়াখালী রুটের সুন্দরবন-৭ ও ৯, প্রিন্স অব আওলাদ-৭, জামাল-৫, সাত্তার খান-১ লঞ্চ।
Advertisement
এ সব লঞ্চের বেশির ভাগের ছাদেও যাত্রীদের দেখা গেছে। টার্মিনালে জায়গা না থাকায় নদীর মধ্যে নোঙ্গর করা ছিল কিছু লঞ্চ। অনেক যাত্রীকে ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় চড়ে সেসব লঞ্চে যেতে দেখা গেছে।
মীরহাজিরবাগ থেকে স্ত্রী ও তিন বছরের সন্তান নিয়ে সদরঘাট এসেছেন শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, যাব পটুয়াখালী কিন্তু লঞ্চ দেখছি অন্য ঘাটে। ছোট বাচ্চা মহিলা নিয়ে তো নৌকা দিয়ে যেতে পারব না। লঞ্চ ঘাটে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করছি।’
ফারুক, রেজাউল, জাহাঙ্গীর হৈ হল্লা করে জামাল-৫ লঞ্চে উঠছেন। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই, তারা বাকেরগঞ্জ যাবেন। ঢাকায় সবাই পোশাক কারখানায় কাজ করেন। ফারুক বলেন, ‘ঈদের সময় দেশে একসঙ্গে সবাই যাওয়াটাই একটা আনন্দ। কিন্তু আমরা জানি না লঞ্চে একটু বসার জায়গা আমাদের হবে কিনা।’
সদরঘাটে বিআইডব্লিউটিএ’র নতুন ভবনের নিচতলায় বিভিন্ন লঞ্চের টিকিট কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেছে, সবগুলো কাউন্টার খালি পড়ে আছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা ও লঞ্চ মালিকরা জানিয়েছেন, লঞ্চের কেবিনের টিকিট নিতে কেউ কাউন্টারে আসে না। কেবিনের টিকিট যাত্রীরা তা ফোনে বা লঞ্চে এসেই কেটে ফেলেন। আর ডেকের যাত্রীরা লঞ্চে উঠেই সব সময় টিকিট কাটেন।
আরএমএম/জেএইচ/পিআর