মালয়েশিয়ায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে বিদেশি কর্মীরা। দেশটিতে বিদেশি কর্মীদের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন থেকে শুরু করে দেশটির সাধারণ জনগণের মধ্যে চলছে যুক্তিতর্ক। তারা বলছেন, দেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে অবৈধ অভিবাসী কর্মী কমিয়ে আনতে হবে। আবার কেউ কেউ বলছেন, বিদেশি কর্মীদের জীবনমান নিশ্চিত করতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। অনসন্ধানে জানা গেছে, দেশটিতে কর্মরত বিদেশি কর্মীদের মধ্যে বেশি আলোচিত সমালোচিত বাংলাদেশি কর্মীরাই।
Advertisement
বাংলাদেশি কর্মীদের কাজের মান ভালো থাকলেও পেছন থেকে কালো থাবায় তাদের এ অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে আরেক বাংলাদেশি। মালিকের কাছে একে অন্যের কুৎসা রটনা ও একে অন্যের বিরুদ্ধে অযাচিত টাকার বিনিময়ে পুলিশি হয়রানি, অপহরণ, দালালদের দৌরাত্ম্য এবং নানামুখী অপচেষ্টায় ভাবিয়ে তুলেছে দেশটির প্রশাসনকেও। বৈধকরণ প্রক্রিয়ার অন্যতম ধাপ হলো ইমিগ্রেশনে ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়া। তারপর অন্যান্য প্রসেসিং শেষ হলে বৈধতা। কিন্তু হাইকমিশন থেকে নতুন পাসপোর্ট পাওয়াটাই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুত সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চলছে।
৩০ জুনের মধ্যে ইমিগ্রেশনে দাঁড়াতে পারবে কি না, এ নিয়ে দুশ্চিন্তা আর হতাশায় দিন কাটছে অবৈধ বাংলাদেশিদের।
এদিকে দেশটিতে কর্মরত অবৈধ বিদেশি কর্মীদের বৈধকরণের শেষ সময় ৩০ জুন পর্যন্ত বেধে দিয়েছে অভিবাসন বিভাগ। বিভাগটি বলছে, ইমিগ্রেশনে ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়ার জন্য নিজ দেশের পাসপোর্ট সাথে করে নিয়ে যেতে হবে। অপরদিকে, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে নতুন করে পাসপোর্টের আবেদন করার কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও পাসপোর্ট হাতে না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন অনেকে।
Advertisement
কক্সবাজার জেলার একজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান, ছয় মাস গত হয়েছে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছি। হাইকমিশনে যোগাযোগ করার পরও পাসপোর্ট পাচ্ছি না। পুলিশ ভেরিফিকেশন না পাওয়ার কারণে তার পাসপোর্ট ইস্যু হচ্ছে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে, পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ বড় অঙ্কের টাকা দাবি করেছে বলেও তার অভিযোগ। তিনি বলেন, টাকা না দিলে ভেরিফিকেশন সনদ দিচ্ছে না।
বৈধকরণ প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন করে পাসপোর্ট ও বয়স জটিলতায় প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশির বৈধতা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বৈধকরণের এ সুযোগকে কাজে লাগাতে দ্রুত পাসপোর্ট দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন প্রবাসীরা।
এদিকে দেশটির অভিবাসন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অবৈধভাবে বসবাসরত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে জুলাই মাস থেকে কঠোর অভিযান শুরু করবে প্রশাসন। মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকদের বৈধকরণ প্রক্রিয়ায় আঙুলের ছাপ নেয়ার সময় শেষ হচ্ছে ৩০ জুন। এরপরই ‘ওপস মেগা থ্রি-জিরো’ সাঁড়াশি অভিযান শুরু হবে। ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চালু হওয়া বৈধকরণ প্রকল্পে যেসব কর্মী ও নিয়োগকর্তারা নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের আটক করাই এ অভিযানের প্রথম লক্ষ্য। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক সেরি মুস্তাফার আলি এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
Advertisement
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৮ মে পর্যন্ত গত আড়াই বছরে মালয়েশিয়ায় সাড়ে সাত লাখ কর্মী এবং ৮৪ হাজার নিয়োগদাতা বৈধকরণ প্রকল্পে নিবন্ধিত হয়েছেন। নিবন্ধিতদের মধ্যে এক লাখ আট হাজার ২২৩ জন অবৈধ কর্মীকে বৈধতার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এই বৈধ হওয়ার প্রক্রিয়ায় প্রায় ৪ লাখ বাংলাদেশি কর্মী নিবন্ধিত হলেও ৫০ হাজার নাম-জটিলতায় বৈধতা পাবে না বলে জানা গেছে। বাকি দেড় লাখেরও বেশি লেভি (আরোপ ও আদায়) পরিশোধ করে ভিসার অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। দেশটিতে যারা অবৈধভাবে কর্মরত রয়েছেন, তাদেরকে আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে ‘থ্রি প্লাস ওয়ান’র আওতায় তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে নিয়োগকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
৩০ জুনের রি-হেয়ারিং (পুনরায় শুনানি) প্রোগ্রাম শেষ হওয়ার পর অনুলিপিপ্রাপ্ত অভিবাসী কর্মীদের উপর পরিকল্পিত অভিযানের পুনর্বিবেচনার জন্য ক্লাং এমপি চার্লস সান্তিয়াগো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
৬ জুন ক্লাং একটি অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। চার্লস সান্তিয়াগো বলেছেন, যে কোনো পদক্ষেপ নেয়া উচিত, অভিবাসী শ্রমিকদের বিচার করা উচিত। কারণ, তাদের অনেকে তাদের নিয়োগকর্তার দোষের কারণে অনথিভুক্ত হয়েছে। সান্তিয়াগো বলেন, ‘মালয়েশিয়ার প্রায় ১.৯ মিলিয়ন নিবন্ধিত অভিবাসী শ্রমিক এবং ছয় মিলিয়ন অনথিভুক্ত অভিবাসী কর্মী রয়েছে। ২০১৭ সালে সরকারের পুনর্বিবেচনা এবং অ্যামনেস্টি প্রোগ্রামের মাধ্যমে ১ লাখ ৬১ হাজার নথিভুক্ত অভিবাসী শ্রমিক নিবন্ধিত হয়; যা মোট সংখ্যার ২৭ শতাংশ ‘ ২০১৭ সালে ইমিগ্রেশন অভিযান চালানো হয়। এ অভিযানে ৩ হাজারেরও বেশি নথিভুক্ত অভিবাসীদের গ্রেফতার ও আটক রাখা হয়েছে ।’
এসআর/এমএস