রাজধানীসহ অন্যান্য জেলার সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগ আরো সহজতর করতে নির্মাণ হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প ‘পদ্মা সেতু’। মুন্সীগঞ্জ প্রান্তে সেতু প্রকল্পের কর্মযজ্ঞের পরিধি মাওয়া থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার উত্তরে বাবুবাজার লিংক রোড পর্যন্ত। আর ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কেই তৈরি হচ্ছে চারলেন সড়ক।
Advertisement
কিন্তু বর্তমানে এই সড়কটি নির্মাণ কাজে ব্যাবহৃত বিভিন্ন উপকরণ দ্বারা সংকুচিত। ফলে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহনগুলোকে পড়তে হচ্ছে বিপাকে। আর এই অবস্থায় ভোগান্তির স্বীকার হতে হচ্ছে যাত্রী ও ভোক্তাদের। এছাড়া মহাসড়কের পাশে রাখা বালুর দীর্ঘ স্তুপে ভোগান্তি পোহতে হচ্ছে চলাচলকারীদের। সড়কটি দিয়ে চলাচলের সময় ধুলায় যেন অন্ধকার নেমে আসে। এমনকি নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয় চালক ও যাত্রীদের।
এদিকে আসন্ন ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কটিতে ইতোমধ্যে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুই-একদিনের মধ্যে এ চাপ বৃদ্ধি পাবে কয়েক গুন। এমন পরিস্থিতিতে ঘরমুখো মানুষদের দুর্ভোগও পোহাতে হবে কয়েকগুণ বেশি। এমনটাই আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, মাওয়া চৌরাস্তা এলাকায় বেরিকেড দিয়ে রাস্তা সংকুচিত করা হয়েছে। চার লেনের কাজের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে এক লেনে গাড়ি চলাচল করছে। তাই একটি গাড়ির বেশি যাতায়াত করতে পারছে না। এমনকি মহাসড়কের পাশ থেকে বালুবাহী ট্রাকগুলোর লোড-আনলোড করতে সময় লাগায় যাত্রীবাহী গাড়িগুলোকে বাড়তি সময় অবস্থান করতে হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে ডাইভারশন ও সড়ক সংকুচিত হওয়ার কারণে ধীরগতি নিয়ে চলাচল করতে হবে আসন্ন ঈদে চলাচলকারীদের।
Advertisement
এ রুটের চলাচলকারী চালকরা জানান, চলমান পরিস্থিতি পরিবর্তন না হলে ঈদে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছাবে। এমতাবস্থায় পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে পারাপারের জন্য ঘাট এলাকায় অবস্থান করতে হবে দিনের পর দিন। অবশ্য এই দুর্ভোগ এই রুটের চিরাচরিত ঘটনা। তবে এ বছর মহাসড়কের কাজের জন্য দুর্ভোগের ব্যাপ্তি হবে বেশি।
তারা বলেন, যদি ঈদের আগে ও পরে অন্তত ১০ দিন সড়কের কাজ বন্ধ রাখা হয় তাহলে গাড়িগুলো স্বাভাবিক গতিতেই চলতে পারবে এবং যাত্রীসাধারণ নির্দিষ্ট সময়ে গৌন্তব্যে পৌঁছাতে পারতো। এছাড়া এই সড়কের বালুর উপদ্রব থেকে নিস্তার চায় চলাচলকারী ভুক্তভোগীরা।
মাওয়া ট্রাফিক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, মাওয়া চৌরাস্তা এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ নজর থাকবে। মহাসড়কের কোথাও যাতে যান চলাচলে কোনো বাধা না আসে তার জন্য পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে। শিমুলিয়া ঘাটে নির্বিঘ্নে গাড়ি প্রবেশের জন্য ঈদপূর্ব ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া মহাসড়কে ঈদ উপলক্ষে তিনদিন ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকবে।
তিনি আরও জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে যানজট নিরসনে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব পালনের কথা রয়েছে।
Advertisement
সেনাবাহিনী একটি সূত্র থেকেও জানা গেছে, ঈদে বাড়িতি চাপ কমাতে মহাসড়কের ঢাকার জুরাইন অংশে দুইটি বিকল্প পথ করা হয়েছে। তাছাড়া মহাসড়কে দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিক সেবা প্রদানের জন্য সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দল গঠন করা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাট এজিএম (বাণিজ্য) মো. খালিদ নেওয়াজ জানান, ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছরের মতো এবারও বিআইডব্লিউটিসি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এতদিন ১৬টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হয়েছে। তবে ঈদকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে আরও ৪টি ফেরি যুক্ত করা হয়েছে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে।
তিনি বলেন, ঈদের শুরুতে কাঁঠালবাড়ী যাওয়ার যাত্রী ও বাসের চাপ বৃদ্ধি পাবে তাই প্রয়োজন হলে ওপার থেকে ফেরি আনা হবে। ইতোমধ্যে মাওয়ার তিনটি ঘাটে ফেরি রানিং পজিশনে রয়েছে। এছাড়া যাত্রী পারাপারে ৮৭টি লঞ্চ ও সাড়ে ৪ শ’ স্পিড বোট চলমান রয়েছে।
তিনি আরও জানান, গতবার নাব্যতা সংকটের জন্য ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে। এবছর লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে কিছুটা পলি দেখা গেলেও ড্রেজিং কাজ অব্যাহত রয়েছে। আশা করা যায় এবার কোনো সমস্যা ছাড়াই যাত্রীরা নদী পার হতে পারবে।
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনির হোসেন জানান, তিনদিন আগের থেকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকবে। মাওয়া চৌরাস্তা এলাকায় রাস্তা সংকুচিত এবং চার লেনের কাজে ব্যবহৃত ভারী যানবাহন ও ট্রাক চলাচলের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত সুবিধার্থে প্রস্তাব করা হয়েছে চার লেনের কাজ কয়েকদিন বন্ধ রাখার জন্য।
ভবতোষ চৌধুরী নুপুর/এফএ/পিআর