কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যয়ভার দলের পক্ষ থেকে বহন করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেছেন, আমরা দেশনেত্রীর উপযুক্ত চিকিৎসা চাই বলেই আপনাদের মাধ্যমে সরকারকে জানাতে চাই যে, প্রয়োজনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সমুদয় ব্যয় আমাদের দল বহন করবে। কাজেই কালবিলম্ব না করে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হোক।
Advertisement
চিকিৎসা ব্যয়ভার নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানোর কথাও বলেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘তিনবারের নির্বাচিত এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীর স্বাস্থ্যের যে অবস্থা, তাতে তাকে সর্বক্ষণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা রাখা একান্তই জরুরি বলে মতামত দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সার্জনগণ।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল থেকে দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিএসএমএমইউ-তে নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। বিষয়টি দেশনেত্রীকে জানানো হলে তিনি সেখানকার ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ এবং চিকিৎসা সেবার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। আইজি প্রিজন গণমাধ্যমে বলেছেন যে, কারাবিধি অনুযায়ী প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। এমন কোনো সিদ্ধান্ত না থাকায় দেশনেত্রীকে ওই হাসপাতালেই নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, প্রাইভেট হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার চিকিৎসা ব্যয় কে বহন করবে-সে সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হবে। তার এই বক্তব্য থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামত এবং আমাদের বারংবার অনুরোধ সত্ত্বেও ইউনাইটেড হাসপাতালে দেশনেত্রীকে ভর্তির ব্যাপারে সরকারের অনীহার কারণ বোঝা গেল।’
Advertisement
তথাকথিত ১/১১ এর সরকারের সময়েও প্রথমবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছিল জানিয়ে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘তিনবারের নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দেশের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি এবং সাবেক সেনাবাহিনী প্রধানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারি অনুমোদন ও অর্থ সংস্থানের বিষয়ে এতদিনেও সিদ্ধান্ত না হওয়া রহস্যজনক এবং নিন্দনীয়।’
তিনি বলেন, ‘গত ৫ জুন সংঘটিত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সম্পর্কে সরকারের মন্ত্রীবর্গ, এটর্নি জেনারেল ও আইজি প্রিজন প্রায় এক সপ্তাহ পরে ১১ জুন মুখ খুললেন কেন? কেন এতদিন ঘটনাটি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করা হলো? কেন ইতোমধ্যে তার হঠাৎ এত বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধানের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়নি?
এটর্নি জেনারেলের সমালোচনা করে বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘এটর্নি জেনারেল বলেছেন যে, ৯ জুন ডাক্তারগণ খালেদা জিয়ার ‘অজ্ঞান’ হওয়ার কথা বলে নাকি আদালতের সহানুভুতি লাভের চেষ্টা করেছেন। অথচ তিনি অবশ্যই জানেন যে, ডাক্তারদের সাক্ষাতের দিনক্ষণ স্থির করে সরকার। তারা ৯ জুন সাক্ষাতের দিন স্থির করেছে বলেই ওইদিন ডাক্তারগণ প্রেস ব্রিফিং করেছেন। মামলার দিন সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষের জানার কথা, ডাক্তারদের নয়। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মরিয়া এই দলবাজ এটর্নি জেনারেল একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অসুস্থতা নিয়েও অশোভন ও অযৌক্তিক মন্তব্য করার আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার বিষয়ে রাজনৈতিক কারণে অবহেলা কিংবা বিলম্ব করা হলে তার পরিণাম সরকারের জন্য শুভ হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘দেশবাসী বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা সরকারের অমানবিক আচরণে ক্ষুদ্ধ। আমরা দাবি করছি যে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণের পরামর্শ অনুযায়ী বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হোক। একই সাথে আমরা দাবি করছি যে, মূল মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালতে জামিন পাওয়ার পরেও সরকার নানা অপকৌশলে দেশনেত্রীর মুক্তির পথে যেসব বাধার সৃষ্টি করছে তা বন্ধ করা হোক, যাতে জামিনে মুক্ত হয়ে দেশনেত্রী তার পছন্দের হাসপাতালে নির্ভরযোগ্য ডাক্তারদের চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দুইবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে, এসব বিষয় উল্লেখ করে, তাকে (খালেদা জিয়া) অনতিবিলম্বে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা এবং এমআরআইসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর দাবি করা হলে স্বরাষ্টমন্ত্রী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কিছুই করা হয়নি।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/আরএস/এসআর/জেআইএম