বাজেটের সুফল সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর জন্য আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) সভাপতি হাফিজুর রহমান খান।
Advertisement
বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সোমবার তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য খাতভিত্তিক পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রয়োজন। কৃষি ও উৎপাদন খাতের ভিত মজবুত করা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের উন্নয়নে নজর বৃদ্ধি, অনুন্নত এলাকার উন্নয়নকল্পে প্রণোদনা, আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণে উপযুক্ত ব্যবসায়ের পরিবেশ সৃষ্টি ও বেসরকারি খাতকে এগিয়ে নেয়ার জন্য বরাদ্দ, বাজেট বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। মোটকথা সব ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করাই ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের বিশেষ প্রতিপাদ্য হওয়া প্রয়োজন বলে আইবিএফবি বিশ্বাস করে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আইবিএফবির ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. ওমর সাফায়াত কাউছার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ, আইবিএফবির ডিরেক্টর এম এস সিদ্দিকি প্রমুখ।
আইবিএফবির সভাপতি বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে অনুন্নয়ন ব্যয় ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাজেটে অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় সামগ্রিক ব্যয়ের ৬১ দশমিক ৩২ শতাংশ, যার অর্ধেকের বেশি প্রধান তিনটি খাতে যেমন- প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, ঋণের সুদ পরিশোধ ও ভর্তুকিতে ব্যয় হবে। অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ব্যয়ের মাত্র ৩৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে। সেক্ষেত্রে জিডিপি বৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষ অবদান রাখা উৎপাদনশীল খাতে ব্যয় বাড়ানোর পরিবর্তে অনুৎপাদনশীল খাতে সরকারের সিংহভাগ অর্থ ব্যয় করতে হবে।
Advertisement
আইবিএফবি বিশ্বাস করে, একটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি তরান্বিত করার জন্য সেদেশের বাজেটের কমপক্ষে ৪৫ শতাংশ উন্নয়ন খাতে ব্যয় করা উচিত। তা না হলে আমাদের রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামী তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং তৎপরবর্তীতে ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার স্বপ্ন বাস্তবায়ন বিলম্বিত হতে পারে।
সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দের মাত্রা ও ক্ষেত্র বাড়ানোসহ ব্যক্তিখাতের জন্য আলাদা পেনশন স্কিম চালু করার চিন্তা প্রস্তাবিত বাজেটের অন্যতম প্রশংসনীয় দিক, যার জন্য অর্থমন্ত্রীকে আইবিএফবি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
হাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘বাজেট বাস্তবায়নের হারের প্রবণতা পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাজেট বাস্তবায়নে আমাদের সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটের বিপরীতে প্রকৃত বাজেট বাস্তবায়নের হার মাত্র ৭৯ দশমিক ১২ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত এ হার মাত্র ৪১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এখানে উল্লেযোগ্য যে, প্রতি বছর বাজেটের বড় অংশ কাটছাট করা হলেও কাটছাটকৃত বাজেটও সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন হয় না, যা বাজেট বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই বিশেষ দৃষ্টি দেয়ার জোর দাবি রাখে।’
‘তাই বাজেট বাস্তবায়নের হারকে যথাযথ বৃদ্ধি এবং কাজের গুণগতমান সবক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে বাজেট বাস্তবায়নের কারিগরি এবং প্রায়োগিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর বেশি জোর দেয়া প্রয়োজন।এর জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকা উচিত বলে আইবিএফবি মনে করে।’
Advertisement
‘বাজেট বাস্তবায়ন সক্ষমতা পর্যালোচনা ও পরিবীক্ষণ জন্য বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করে একটি স্বাধীন সংস্থা গঠন করা বা একটি কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে। একই সঙ্গে জাতীয় সংসদে সম্পূরক বাজেট পাশ করার সময় জবাবদিহিমূলক পর্যালোচনা জোরদার করা গেলে বাজেট বাস্তবায়নের গতি বৃদ্ধি পাবে’,- বলেন হাফিজুর রহমান খান।
এমইউএইচ/জেডএ/এমএস