দেশজুড়ে

পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে ১৫ হাজার মানুষ

রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে তিন হাজার ৩৭৮ পরিবারের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন এ তালিকা তৈরি করেছে।

Advertisement

জানা গেছে, রাঙ্গামাটি পৌরসভাসহ ১০ উপজেলায় মোট তিন হাজার ৩৭৮টি পরিবারের ১৫ হাজারেরও বেশি লোক পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছেন। এর মধ্যে রাঙামাটি পৌর সদরের ৯টি ওয়ার্ডে ৩৪টি এলাকায় ৬০৯ পরিবারের প্রায় আড়াই হাজার লোক ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। এর বাইরে রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ৭৫০ পরিবারের তিন হাজার ৪২৪ জন লোক পাহাড়ের ঢালে ঝুঁকিতে রয়েছে।

এদিকে, রাঙ্গামাটিতে গত শুক্রবার থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও রোববার বিকেল থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছ। টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পাহাড়ি জনজীবন। ভারী বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় জেলা প্রশাসন লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতেই বাস করছে সাধারণ মানুষ।

রোববার দুপুরে শহরের উন্নয়ন বোর্ড এলাকায় দেয়াল ধস পড়ে। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারী বর্ষণে শহরর চম্পকনগর, শিমুলতলি, ভেদভেদী ও কলেজ গেইট এলাকায় বেশ কয়েক স্থানে পাহাড় ধস হয়েছে।

Advertisement

অপরদিকে ঘাগড়ার শালবন এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি রাস্তায় পড়লে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক যোগাযোগ দীর্ঘ দুই ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়ে। এছাড়া ঘাগড়ায় লোকবসতিতে পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

আবহাওয়া দেখে রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসন লোকজনদেরকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে রোববার সকাল থেকে মাইকিং করেছে। এ ছাড়া রাঙামাটির জেলা প্রশাসক রোববার মধ্য রাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরে যেতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। তার আহ্বানের পর রাতে অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে গেলেও পাহাড়ের পাদদেশে রয়ে গেছেন অনেকেই।

রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ বলেন, সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বৃষ্টিপাতের কারণে যে কোনো সময় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটতে পারে। তাই সবাইকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান করছি।

জেলা প্রশাসকের আহ্বানের পরও দেখা গেছে জেলার ভেদভেদী, উত্তর-দক্ষিণ মুসলিম পাড়া, সনাতন পাড়া, শিমুলতলী, রুপনগর, নতুন পাড়া, মনতলা, হাজংতলা, কলেজ গেইট, আমানত বাগ, মন্ত্রী পাড়াসহ বেশ কিছু এলাকায় ঝুঁকি নিয়েই মানুষ বসবাস করছে। প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলেও তা মানছেন না।

Advertisement

সনাতন পাড়ার বাসিন্দা রতন কান্তি ঘোষ বলেন, বৃষ্টি হলে সবার মনে ভয় কাজ করে। গত বছর নিজের চোখে যা দেখলাম এখনও তা ভুলতে পারিনি। বিধাতা জানে এ বছর কি হয়। স্ত্রী, সন্তান, নাতিদের নিয়ে ভয়ে আছি। প্রার্থনা করছি যেন আর পাহাড় ধস না হয়। তবে আশ্রয় কেন্দ্রে যাব না।

নতুন পাড়ার বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, বৃষ্টি শুরু হলেই সবার মনে ভয় কাজ করে। ভোর রাতে যখন বৃষ্টি পড়ছিল তখন থেকে ঘুম আসেনি। তবুও ভয় নিয়ে এখানেই আছি। কোথায় যাব, নিজের ভিটা-মাটি ছেড়ে কেউ কি যেতে চায়।

সাইফুল উদ্দিন/এএইচ/এমএস