উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সুটেডবুটেড দৌড়রত নিরাপত্তারক্ষীদের এক ঝলক দেখার সুযোগ পেলো বিশ্ব। সিঙ্গাপুরে রোববার দুপুরে পৌঁছানোর পর উত্তর কোরিয়ার এই নেতার গাড়ি ঘিরে চৌকশ নিরাপত্তারক্ষীদের তৎপরতা চোখে পড়ে। তবে তাদের এই তৎপরতা চোখে পড়ার চেয়েও বেশি কিছু, কারণ যখন এই বিষয়টি চলে আসে দেশটির নেতার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে। নিরাপত্তায় কোনো দুর্বলতা রাখেনি তারা।
Advertisement
রহস্যময় এই নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন মাইকেল ম্যাডেন। উত্তর কোরিয়ায় কোনো অনুষ্ঠানে কিম জং উন যখন অংশ নেন, তখন ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তারক্ষীরা ভিন্ন ভিন্ন তিন সারিতে ঘিরে রাখেন তাকে। তবে সিঙ্গাপুরে দেখা গেছে এর ব্যতিক্রম এবং সবার চোখ ছিল কালো পোশাকের পরিপাটি রক্ষীদের দিকে।
কিমের বিলাসবহুল লিমোজিন গাড়ির চারপাশ ঘিরে দৌড়াচ্ছেন এই নিরাপত্তারক্ষীরা। যারা কিমের একেবারে কাছাকাছি ঘেঁষে দৌড়ান তারা সেন্ট্রাল পার্টি অফিস #৬ অথবা মেইন অফিস অব অ্যাডজুট্যান্টস নামে পরিচিত। কোরীয় পিপলস আর্মিতে বাধ্যতামূলক নিয়োগ শেষে তাদের জাতীয় দায়িত্ব পালনের পর এই সেন্ট্রাল পার্টি অফিসে নিয়োগ দেয়া হয়। গাড়ি থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিম জং উনের চারপাশে ঘিরে অবস্থান নেন তারা।
কোরিয়ান পিপলস আর্মিতে নিয়োগ লাভের পর যখন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে বাছাই করা হয় তাদের; তখন শারীরিক গঠন ও উচ্চতাকে গুরুত্ব দেয়া হয়। তবে শর্ত হচ্ছে, উচ্চতায় দেশটির সর্বোচ্চ নেতার বেশি হওয়া যাবে না। পাশাপাশি শারীরিক কোনো সমস্যা থাকতে পারবে না।
Advertisement
লক্ষ্যবধ, গুলি বর্ষণ ও মার্শাল আর্টে উচ্চ দক্ষতা দেখানো ও উঁচু স্তরের প্রশিক্ষণ শেষ করতে হয় তাদের। পরে চূড়ান্তভাবে যে বিষয়টির মুখোমুখি হতে হয় একজন নিরাপত্তারক্ষীকে; সেটি হচ্ছে তার পরিবারের খোঁজখবর নেয়া।
এমনকি নিয়োগপ্রাপ্ত নিরাপত্তারক্ষীর দুই পূর্বপ্রজন্মের খোঁজ নেয় গোয়েন্দারা। তবে মেইন অফিস অব অ্যাডজুট্যান্টসের অনেক সদস্যেরই কিমের পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে অথবা তারা উত্তর কোরীয় এলিট কোনো পরিবারের সদস্য।
একবার নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে নিয়োগ লাভ করলে আর চাকরি ছেড়ে দেয়ার সুযোগ থাকে না। নিবিড় প্রশিক্ষণের অংশ নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। কোরিয়ান পিপলস আর্মির স্পেশাল অপারেশনস ফোর্সের মতোই এ নিরাপত্তারক্ষীরা কঠোর অনুশীলন করেন।
এই প্রশিক্ষণের মধ্যে বন্দুক চালানো, আক্রান্ত হলে কৌশলে তা ঠেকানো ও বিভিন্ন ধরনের মার্শাল আর্ট শেখানো হয়। নিরাপত্তারক্ষীরা সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মানুষের কাছ থেকে আলাদা করতে ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে বেষ্টনী তৈরি করেন কিমের চারপাশে। হাঁটা, সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া অথবা কিমের কাছে যেতে পারেন তিন থেকে পাঁচজন নিরাপত্তারক্ষী। এদের মধ্যে মেইন অফিস অব অ্যাডজুট্যান্টসের পরিচালকও থাকেন।
Advertisement
কিমের কাছাকাছি থাকেন ৪ থেকে ৬ জন। এছাড়া তার ডান এবং বামপাশে ২ থেকে ৩ জন এবং পেছনের দিকে ৪ থেকে ৫ জন অবস্থান নেন। উত্তর কোরীয় শাসনে দেশটির একমাত্র নাগরিক হিসেবে এই নাগরিকরাই পারেন নেতার কাছে গুলি ভর্তি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যেতে। সচরাচর তাদের কাছে থাকে আধা-স্বয়ংক্রিয় বন্দুক ও একটি ব্যাকআপ অস্ত্র।
আগ্নেয়াস্ত্র বহন ছাড়াও এই নিরাপত্তারক্ষীদের প্রধান কাজ হচ্ছে কিম জং উনের আশপাশের লোকজন ও স্থাপনার ওপর নজরদারি চালানো। কোনো ধরনের হুমকি দেখা দিলে তাদের হাত এবং শরীর দিয়ে তা নিষ্ক্রিয় করেন।
কিমের বাবা কিম জং ইল যখন জীবিত ছিলেন তখন তার সঙ্গে ছিলেন এক থেকে দুজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তবে বর্তমান এই নেতার নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে তার বাবার নিরাপত্তাব্যবস্থায় বিস্তর ফারাক রয়েছে। পশ্চিমা ধাঁচের সুটে এবং টাইয়ে পরিপাটি দেখা যায় এই নিরাপত্তারক্ষীদের; যা সিঙ্গাপুরে দেখা গেছে। এছাড়া দলীয় কর্মকর্তাদের দেখা গেছে ঝংশান সুটে।
কিমের গাড়িচালক স্টিয়ারিং নিয়ন্ত্রণের জন্য সবসময় লিনেন অথবা চামড়ার গ্লোভস পরেন। প্রত্যেকের কানে রয়েছে বিশেষ বেতার যোগাযোগ যন্ত্র।
কোনো অনুষ্ঠানে নিজেদের অবস্থান এবং পারস্পরিক যোগাযোগের জন্য একই ধরনের ব্যাজ পরেন। পাশাপাশি কিছু পাসওয়ার্ড ও কোড ব্যবহার করেন।
মেইন অফিস অব অ্যাডজুট্যান্টসের সদস্য রয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ জন; যাদের অর্ধেকের বেশিই নিরাপত্তারক্ষী। অন্যরা চালক এবং টেকনিক্যাল স্টাফ। কিছু নিরাপত্তা প্রধানের চাকরির বয়স দীর্ঘ হলেও অধিকাংশই মাত্র ১০ বছরের জন্য কাজ করতে পারেন। (সংক্ষেপিত)
সূত্র : বিবিসি।
এসআইএস/জেআইএম