সৌদি আরব, জর্ডান ও লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের নারী শ্রমিকরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের সম্মুখীন হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। একই সঙ্গে এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
Advertisement
রোববার সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে দাবি জানানো হয়। বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কাজ করতে গিয়ে শারীরিক-মানসিকসহ নানাবিধ নির্যাতনের সম্মুখীন হচ্ছেন বাংলাদেশ থেকে যাওয়া নারীকর্মীরা। অনেকেই সরকারিভাবে বা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সহায়তায় নিঃস্ব-মুমূর্ষু অবস্থায় শুধুমাত্র জীবন বাঁচিয়ে দেশে ফিরছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র রাষ্ট্রীয়ভাবে নারীদের নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে।
সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে নারী গৃহশ্রমিকরা নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরছেন। অনেকেই আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ (আসক) বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে ব্যক্তিগতভাবে বা পরিবার-স্বজনদের মাধ্যমে দেশে ফিরে আসার জন্য আবেদন করছেন।
‘এসব নারী শ্রমিকেরা সবাই প্রায় একই রকম অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। বেতন না দেয়া, বাড়ির পুরুষ সদস্যদের দ্বারা যৌন নির্যাতন, গৃহকর্তা ও গৃহকত্রীর মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, ফোন কেড়ে নেয়া, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না দেয়া, কাজের নির্দিষ্ট সময়সীমা না থাকা, ছুটি না থাকা।
Advertisement
এছাড়াও, নির্যাতনের পর পালিয়ে গেলে থানায় চুরি ও নাশকতার মামলা দেয়া, নির্যাতনের পর পালিয়ে পুলিশের আশ্রয়ে গেলে আবার আগের নিয়োগকর্তার কাছে ফেরত পাঠানো, অসুস্থ হলে চিকিৎসা না করা, বেশি অসুস্থ হলে রাস্তা কিংবা দূতাবাসের সামনে ফেলে যাওয়া এবং দূতাবাসকে না জানিয়ে ক্রীতদাসের মতো এক এজেন্সি থেকে অন্য এজেন্সিতে বিক্রি করে দেয়াসহ বিভিন্ন রকমের পাশবিকতার শিকার হচ্ছেন তাদের কাছ থেকে নিয়মিত এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে’ বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
আরও বলা হয়, সৌদি আরবে ধর্ষণসহ নানারকম নির্যাতনের শিকার হয়ে অন্তত ২২ জন বাংলাদেশি নারী শ্রমিককে জীবন দিতে হয়েছে। ২০১৫ সালের মে মাস থেকে ২০১৮ সালের মে মাস পর্যন্ত সৌদি আরবের জেদ্দা এবং রিয়াদে অবস্থিত সেফ হোম থেকে প্রায় দেড় হাজার নারীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ফেরত আসা অধিকাংশ নারীই শারীরিক নির্যাতনের কারণে তাদের কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। পাশাপাশি, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন। তারা সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত অনিশ্চিত জীবনযাপন করছেন।
আসক মনে করে, সরকারি সকল নিয়ম-কানুন সম্পন্ন করে দারিদ্রতা থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে বিদেশে পাড়ি জমানো এসব নারীদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশি অভিবাসী নারী গৃহশ্রমিকদের ভয়াবহ নির্যাতনের যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এসব নারীদের নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যকীয়। যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি নারীদের অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসনের সম্মুখীন করছে তাদের চিহ্নিত করে রেজিস্ট্রেশন বাতিলসহ কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
এমএএস/আরএম/এমআরএম/পিআর
Advertisement