মালয়েশিয়ায় ইতিহাস গড়া বাংলার প্রমীলাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত মুহা. শহীদুল ইসলাম। অভিনন্দন জানিয়েছেন সে দেশে বসবাসরত সকল প্রবাসীরা।
Advertisement
নারী ক্রিকেট ফাইনাল খেলার স্বপ্ন নিয়ে দুর্দান্ত খেলেই সেই স্বপ্ন পূরণ করল বাংলাদেশের নারী দল। প্রথমবারের মতো দেশের হয়ে কোন বহুজাতিক টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতার। স্বপ্নপূরণের আত্মবিশ্বাস নিয়ে ইতিহাস গড়ল বাংলার প্রমীলারা। মালয়েশিয়ার ওভাল কিনরার বাংলাদেশের জন্য একটি ইতিহাস রচনা করলো।
প্রমীলাদের খেলা উপভোগ করতে মাঠে ওভাল কিনারায় ছুটেযান রাষ্ট্রদূত মুহা. শহীদুল ইসলাম। সকাল থেকে মালয়েশিয়ার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে সেলাঙ্গুরের কিনরার ওভাল স্ট্রেডিয়ামে ছুটে জড়ো হতে থাকেন প্রবাসীরা। হাজার হাজার প্রবাসী গ্যালারিতে বসে খেলা উপভোগ করেন এবং সাবাস বাংলাদেশ বলে উৎসাহ দিতে থাকেন প্রমীলাদের।
রাষ্ট্রদূত মুহা. শহীদুল ইসলাম বলেন, মেয়েরা আমাদের অহংকার। তারা দেশের জন্য বিরাট সম্মান নিয়ে এসেছে। এশিয়া কাপে ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এই শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। যে কোনো পর্যায়ের ক্রিকেটে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এটাই সেরা সাফল্য। গ্রুপ পর্বে ভারতকে হারানোর অভিজ্ঞতা ফাইনালে বেশ কাজে দিয়েছে। ওই ম্যাচের চেয়ে ফাইনাল ম্যাচে আরও বেশি আক্রমণাত্মক ছিল মেয়েরা।
Advertisement
২০০৪ থেকে শুরু হয়েছে মেয়েদের এশিয়া কাপ। ভারত গত ৬ আসরের সবগুলোতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বাংলাদেশ এবারের আসরসহ তিনটি আসরে মাঠে নেমেছে। আগের দুই আসরে সাদামাটা পারফরম্যান্স করলেও তৃতীয় আসরে শিরোপা জেতার স্বাদ পেয়েছে সালমারা। শুধু তাই নয়, আরও একটি বৃত্ত ভেঙেছে বাংলাদেশ। এতদিন ভারতের বিপক্ষে খেলা মানেই ছিল বাংলাদেশে হার। ভাগ্যদেবীর ছোঁয়ায় এবার সেই অসাধ্য সাধন করেছে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে ১০টি টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হওয়া দুই দলের মধ্যে ভারত জিতেছে ৮টিতে। হারের বৃত্ত ভেঙে বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্টেই জিতলো দুটিতে।
কুয়ালালামপুরে ভারতের দেয়া ১১৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি বাংলাদেশের। জাহানারা-শুকতারার ব্যাটে সহজেই এসেছে জয়। ওপেনিং জুটিতে আয়েশা ও শামিমা শুরুটা ভালোই করেছিলেন। তবে ভারতীয় স্পিনার পুনম যাদবের পর পর দুই বলে আয়েশা (১৬) ও শামিমা (১৭) সাজঘরে ফিরলে কিছুটা বিপদে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এই জুটিতে আসে ৩৫ রান। দুই ওপেনারকে হারিয়ে ভারতের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে হাফ সেঞ্চুরি করা ফারজানা হক ও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান নিগার সুলতানা দেখে শুনে খেলতে থাকেন। যদিও অফস্ট্যাম্পের বাইরের একটি বল খেলতে গিয়ে উইকেট কিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ফারজানা (১১)।
চতুর্থ উইকেটে নিগার ও ওয়ানডে অধিনায়ক রুমানা মিলে জয়ের কাছেই নিয়ে যাচ্ছিলেন দলকে। আচমকা বাংলাদেশ শিবিরে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেন ক্যাচ আউট হয়ে। পুনম যাদবের ফুলটস বল মিড অনে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলে দারুণ একটি ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। ২৪ বলে ৪ চারে ২৭ রানের ইনিংস খেলেন নিগার।
বাকি দায়িত্বটুকু ঠিকভাবেই সামলাচ্ছিলেন ফাহিমা-রুমানা। আর শেষ দিকেই নড়বড়ে পরিস্থিতিতে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সাত রান করে আউট হন ফাহিমা। ৬ষ্ঠ উইকেটে সানজিদা ও রুমানা মিলে জয়ের কাছেই ছিলেন। কিন্তু সানজিদা বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেয়ার পর পর রুমানাও ফিরে যান রান আউটে। ফেরার আগে ২২ বলে ২৩ রানের ইনিংস খেলেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার।
Advertisement
শেষ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল দুই রান। জাহানারা বলটি বাঁ পাশে ঠেলেই দেন ছুট। দৌড়ে দুই রান নিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপ জয়ের উপলক্ষ এনে দিলো মেয়েরা।
এর আগে টসে জিতে আগে ব্যাটিং করা ভারত সালমাদের বোলিং তোপে ৯ উইকেটে মাত্র ১১২ রানের পুঁজি তুলতে সক্ষম হয় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। শুরুতেই ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরতে সক্ষম হয়েছিল বাংলাদেশ। দলীয় ১২ রানে স্মৃতি মন্ধানাকে ফিরিয়ে ত্রাস ছাড়ানো শুরু সালমাদের। তাকে রান আউটে শিকার করেন অধিনায়ক সালমা। ৩২ রানে চার উইকেট হারিয়ে সেই চাপটা আরও বাড়ে ভারতের। যদিও শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক হারমানপ্রীতের অসাধারণ ইনিংসের কল্যাণেই মান বাঁচে ভারতের।
একপ্রান্তে থেকে রানের চাকা সচল রেখেছেন কেবল শেষ পর্যন্ত তার দায়িত্বশীল ৫৬ রানের ইনিংসে ভর করে ৯ উইকেটে ১১২ রানে থেমেছে ভারত। ইনিংসের শেষ বলে বিদায় নিয়েছেন ভারতীয় অধিনায়ক। যোগ্য সঙ্গী না পাওয়া শেষ দিকে কিছুটা চড়াও হয়েছিলেন একাই। তার ৪২ বলের ইনিংসে ছিল ৭টি চার।
বাংলাদেশের পক্ষে দুটি করে উইকেট নেন খাদিজা তুল কুবরা ও রুমানা আহমেদ। একটি করে উইকেট নেন সালমা খাতুন ও জাহানারা।
এমআরএম/পিআর