জাতীয়

পদে পদে সুশাসনের অভাব : ফিরোজ রশীদ

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছেন, আমাদের সংসদের বয়স বেড়েছে কিন্তু ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া গত ৬০ বছরে কোথায় গেছে? পৃথিবী অনেক দূর এগিয়েছে। আমরা অনেক পিছিয়েছি। এই পেছানোর একমাত্র কারণ হচ্ছে সুশাসনের অভাব। প্রতি পদে সুশাসনের অভাব রয়েছে।

Advertisement

রোববার জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ সালের সম্পূরক বাজেট সম্পর্কে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে স্পিকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, সংসদে কেউ যাতে অবৈধ কিছু নিয়ে না ঢোকে সে জন্য আপনি পুলিশ রেখেছেন, ডগ স্কোয়াড রেখেছেন। কিন্তু আমরা যে ভেজাল তেল, ঘি নিয়ে সংসদে প্রবেশ করি এটি কিন্তু আপনি কিছুতেই বারণ করতে পারবেন না। আমরা কিন্তু সেটাই এ সংসদকে, আপনাদেরকে বারবার খাওয়ায়ে তুষ্ট করি এবং জনগণকে আমাদের জবাবদিহি করতে হয়। জনগণ বুঝতেই পারে না আমরা কোনদিকে আছি।

কাজী ফিরোজ রশীদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী রাগ করবেন, এটা আমি জানি। একঘণ্টা যদি বৃষ্টি হয় ঢাকা শহর ডুবে যায়। কত বছর আমরা সহ্য করবো? ৬০ বছর? কেন এটা হবে?

Advertisement

তিনি বলেন, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কটি ৯ মাস ধরে বন্ধ। সেখানে লেখা আছে সেনাবাহিনীর প্রকল্প। কিন্তু আসলে তা নয়, একজন ঠিকাদার চাটুকার সুকৌশলে সেনাবাহিনীর নাম ব্যবহার করছে। এ রাস্তা বন্ধ থাকার জন্য বাদানুবাদের কারণে একজনকে গুলি করে হত্যা করা হলো। এটাকে আমরা উন্নয়ন বলবো? এটা অপশাসন। মন্ত্রীরা বেশিরভাগ বিদেশ থাকেন। কিন্তু দেশের জন্য তারা কী এনেছেন? আমরা বিদেশ গেলে রাতে ঘুম হয় না। যে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম, সেই দেশের অবস্থা এমন কেন? আমার এক বন্ধুর কথা শুনে মনে হয় তাজমহল ছাড়া তারা সব কিছু করেছেন!

সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রীর বাজেটে এরশাদের উন্নয়নের কিছু উল্লেখ নেই।

আর্থিক খাতের দুর্নীতি নিয়ে তিনি বলেন, আজকে আপনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছেন। একটা কথা মনে রাখবেন ক্ষমতা চিরস্থায়ী না। যেদিন ক্ষমতা থাকবে না, আল্লার দরবারে আপনাদের বিচার হবে। কাদের টাকা আপনারা নিয়ে যাচ্ছেন?

তিনি বলেন, ব্যাংকওয়ালা কি আপনাকে ভোট দেবে? আপনি সাধারণ জনগণের দিকে তাকালেন না, মধ্যবিত্তের ভোটের দিকে তাকালেন না। এটা ভোট নষ্ট করার বাজেট। এই ব্যাংকমালিকরা একজনও দেশে থাকবেন না। আপনি লিখে রাখেন নির্বাচনের আগে এসব বড়লোক দেশ ত্যাগ করবে। কেউ চলে যাবে আমেরিকা, কেউ অস্ট্রেলিয়া, কেউ কানাডা। দেশে একজন বড়লোকও থাকবেন না। ওই গরিব, ওই হালের মজুররা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেবে। ওই খালেদা জিয়া যদি আবার বোমাবাজি করে তাহলে এসব গবির মানুষই কিন্তু আপনাকে ভোট দেবে। এই বড়লোকদের আপনি পাবেন না। তারা কামাই করে ফেলেছেন। আকামা হয়ে গেছে। তাদের খুঁজেও পাবেন না।

Advertisement

তিনি বলেন, কতগুলো ব্যাংক ডাকাতি হয়ে গেল। এ সংসদেই বসেন তারা। হঠাৎ দেখি সংসদে নাই। ফারমার্স ব্যাংক কি সংসদ থেকে উধাও হয়ে গেল? আপনারা কী বিচার করলেন? জনগণ কী বিচার পেল? কিছুই পেল না। আপনারা ব্যাংক দেবেন। জনগণ অর্থ লগ্নি করবে, আর তারা লুটপাট করে চলে যাবেন । সেই ব্যাংককে জনগণের ভর্তুকি দিয়ে খাওয়াবেন তা হতে পারে না। আপনারা ভোট বাড়াচ্ছেন না, তেলের মাথায় তেল দিচ্ছেন। তাই আপনারা এসব লেজ নাড়ানো কুকুরদের বিশ্বাস করবেন না। বিশ্বাস করলে ঠকে যাবেন। পাশে একজনকেও পাবেন না। বঙ্গবন্ধুও পায় নাই।

তিনি বলেন, ঋণ খেলাপি কারা আপনারা জানেন না? কেন টাকা আদায় করেন না? কেন তাদের সম্পদ নিলাম দেন না? একজন কৃষক ২৪ হাজার টাকা দিতে পারেন নাই বলে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট বেরিয়েছে। আর ২৪ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে তাদের তো ওয়ারেন্ট দেখি না। এ সময় তিনি এই বাজেটকে ভুয়া আখ্যা নিয়ে বলেন, ঘুম পাড়ানো গান শুনিয়ে কোনো লাভ নাই।

এইচএস/এমএমজেড/এমএস