খেলাধুলা

মস্কোভা নদীর বুকে বিশ্বকাপ উৎসব

শেষটা মাতিয়ে দিলো আতশবাজির ঝলকানি। তারাসা শেভচেনকো এমব্যাংকমেন্ট মস্কো শহরের বিলাশবহুল এলাকা। মস্কোভা নদীর দুই তীরের এ জায়গায়টায় এমনিতেই আলোকিত থাকে রাতে। দুই কুলের নানা রঙের বাতির আলো নদীর পানিতে আছড়ে পড়ে যেন মিতালি করে ঢেউয়ের সঙ্গে। তীর আর পানিতে তখন তৈরি হয় মনোরম দৃশ্য। শনিবারের সন্ধ্যা হয়েছিল ব্যতিক্রম, অন্য রকম। এক কথায় অসাধারণ।

Advertisement

আতশবাজীর ঝলকানি আর কানফাঠানো শব্দের ছন্দে তাল মিলিয়ে নেচে উঠলো কুলের মানুষ। নেচে উঠলো নদীর পানি। মিনিট পাঁচেকের আতশবাজীর মধ্যে দিয়ে পর্দা নামলো বিশ্বকাপ শুরুর আগে গণমাধ্যমকর্মীদের হৃদয়ছোঁয়া এক অনুষ্ঠানের। শনিবার মস্কোভা নদীর কোলটা জানান দিয়ে গেলো এইতো কয়দিন পরই এখানে বিশ্বকাপ।

সব মিলিয়ে ঘণ্টাচারেকের অনুষ্ঠান। বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা ফিফার মিডিয়া ওয়েলকাম ডিনার। যে অনুষ্ঠানের পুরোটাই ক্রুজশিপে। ডিনার,আনন্দ-ফুর্তি সব কিছুই। বিশ্বকাপ কাভার করতে যে সব বিদেশি গণমাধ্যমকর্মী একটু আগেভাগে রাশিয়া পৌঁছেছেন তাদের জন্য অন্যরকম এক অভিজ্ঞতাই হয়ে থাকবে ফিফা ব্যবস্থাপনার এই মিডিয়া ওয়েলকাম ডিনার ও রিভারক্রুস।

স্থানীয় ও বিভিন্ন দেশ মিলিয়ে তিন শ’র মতো সাংবাদিক নিয়ে এ অনুষ্ঠান হৃদয় ছুঁয়েছে অনেকের। কী ছিল না? খাওয়া-দাওয়া, নাচ-গান, অভিজ্ঞতা বর্ণনা, কুইজ মিলিয়ে উৎসবমুখর বিকেল ও সন্ধ্যা উপভোগ করলেন বিভিন্ন দেশের সংবাদিকরা।

Advertisement

শনিবার ছিল মস্কোতে আমাদের তৃতীয় দিন। প্রথম দুইদিন মস্কোতে তেমন উত্তাপ টের পাওয়া যায়নি বিশ্বকাপের। মস্কোর দুই ভেন্যু লুঝনিকি স্টেডিয়াম ও স্পার্টাক স্টেডিয়ামের আশপাশ ছাড়া অন্য জায়গাগুলো কিছুতেই বিশ্বকাপের আমেজ দিতে পারছিল না। কিন্তু শনিবার বিকেল ও আর সন্ধ্যা বিশ্বকাপের আগমনী বার্তা হয়েই আসলো মস্কোতে।

অনুষ্ঠানে প্রাধান্য ছিল রাশিয়ান সাংবাদিকদেরই। অন্য দেশের সাংবাদিকরা তো রাশিয়ায় আসতে শুরু করেছেন। কেউ আকাশে, কেউ আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ৭ জুন মস্কোতে আসা বাংলাদেশী চার সাংবাদিকেরই অভিজ্ঞতা হয়েছে ফিফার মনমুগ্ধকর এমন একটি আয়োজন উপভোগের।

হোটেল রেডিসনের ক্রুসশিপটিকে এক সময় মনে হয়েছিল উম্মুক্ত মঞ্চ। মনে হয়েছিল অংশগ্রহনকারী গণমাধ্যমকর্মীদের কেউ কণ্ঠশিল্পী, কেউ নৃত্যশিল্পী। পেশাদার কণ্ঠশিল্পীরা গান গাইলেন অবিরাম। গাইলেন বিভিন্ন দেশের কয়েকজন সাংবাদিকও। যারা গাইলেন তাদের সবার হাতেই ধরিয়ে দেয়া হলো পুরস্কার। পুরস্কার ছিল কুইজ বিজয়ীদের জন্যও।

নাচ-গানের ফাঁকে ফাঁকে বিশ্বকাপের অন্যতম দুই ফেভারিট ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার লড়াইও যে হলো। দুই দেশের সাংবাদিকরা নিজেদের দলের কোরাশ গাইতে শুরু করলেন তখন প্রিয় দলের কাতারে চলে গেলেন অন্য দেশের সাংবাদিরাও।

Advertisement

রাশিয়া এই বিশ্বকাপের আয়োজক। কিন্তু খোদ রুশরাই মনে করেন না তাদের দেশ গ্রুপ পর্ব টপকাতে পারবে। তাতে কী? সেটাতো মাঠে ফুটবলারদের পারফরম্যান্সের বিষয়। এমন এক আনন্দঘন পরিবেশে রাশিয়ান সাংবাদিকরা কেন তাদের দেশের কোরাশ গাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করবেন। রাশিয়া-রাশিয়া শব্দ উঠতেই দ্রুত শব্দ দুটির আওয়াজ বাড়তে লাগলো। বাড়বেই তো, রাশিয়ান সাংবাদিকদের পাল্লাটা যে ভারীই ছিল।

আরআই/এসএএস/জেআইএম