তথ্যপ্রযুক্তি

সস্তা ফোনে কমে শ্রবণশক্তি

যেকোনো মোবাইল ফোন দিয়ে কথা বলার সময় ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন হয়, যা শ্রবণশক্তি হ্রাসসহ মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। কম দামের মোবাইল ফোনে এ রেডিয়েশন বেশি হয় বলে এতে ক্ষতির প্রভাবও বেশি হয়।

Advertisement

হেয়ারিং এক্সপার্ট ও কানের চিকিৎসকদের মতে, মোবাইল ফোন থেকে যে পরিমাণ রেডিয়েশন হয়, তা একটি মাইক্রোওয়েভ ওভেনের সমান। আর কথা বলার জন্য মোবাইল ফোন একটানা ১৫ মিনিট কানে লাগিয়ে রাখলে রেডিয়েশনের প্রভাবে মুখে ও মাথায় অস্বাভাবিক পরিমাণ তাপ লাগে। মোবাইল ফোনে কথা বলার সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে তাপমাত্রার পরিমাণও। যেমন, ৫ মিনিট কথা বললে তাপমাত্রা বাড়ে মাত্র ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু একটানা ১৫ মিনিট কথা বললে এই তাপমাত্রা বেড়ে হয় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর অর্থ হচ্ছে দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট হিসেবে সে সময় একজন মোবাইল ব্যবহারকারীর দেহের বিশেষত মাথার তাপমাত্রা হয় ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এর ফলে মানবদেহে খিঁচুনি হতে পারে। আর কম দামের অর্থাৎ অধিক ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন ছড়ানো মোবাইল সেটের বেলায় এই ঝুঁকির পরিমাণ ৭০ শতাংশ বেশি।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইএনটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হাসানুজ্জামান বাবর জাগো নিউজকে বলেন, ‘মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে মাথাব্যথা, ঘুম না হওয়া, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, হাতের হাড়ে ব্যথা এবং শ্রবণশক্তি কমে যাওয়ার মতো ঘটনাগুলো বেশি হয় মাত্রাতিরিক্ত ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশনে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখন আপনি উচ্চমাত্রার শব্দ শোনেন তখন আপনার কানের ভেতরে থাকা পাতলা চুলের মতো কাঠামো (এটি মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়) ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তাদের বাইরের অংশ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। ফলে শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। এ ধরনের ক্ষতি হতে পারে মাত্রাতিরিক্ত ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন কানে প্রবেশ করলে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যত প্রকার শব্দ দূষণ হয় ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন তার অন্যতম। এর থেকে বাঁচার উপায় মোবাইল ফোন ব্যবহার কমানো এবং কম রেডিয়েশন ছড়ানো সেট ব্যবহার করা।’ অধ্যাপক ডা. হাসানুজ্জামান বাবর বলেন, ‘কানের ক্যানেলের শেষে একটি পাতলা কোষের অংশ রয়েছে, যার নাম ইয়ার ড্রাম। এখানে শব্দের কম্পনগুলো এনার্জিতে রূপান্তরিত হয়। এরপর তা একটি পাতলা হাড়কে অ্যামপ্লিফায়ার হিসেবে ব্যবহার করে এবং তরলযুক্ত একটি লম্বা কয়েলের টিউব পার হয়। কানে শোনার জন্য যে নার্ভগুলো ব্যবহৃত হয় সেগুলো এখানেই থাকে। এখানে শব্দ তরঙ্গগুলো বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত এবং মস্তিষ্কে প্রেরিত হয়। মাত্রাতিরিক্ত ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন হলে তখন মস্তিষ্ক অচেতন হয়ে পড়ে।’

Advertisement

রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট জেনারেল হাসপাতালের (সিজিএইচ) নিউরো সার্জন জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ব্রেন ক্যান্সার এবং মোবাইল ফোনের মধ্যে সম্পর্ক আছে । একই কথা প্রযোজ্য ব্রেন টিউমারের ক্ষেত্রেও। মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে ব্রেনসেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেলের ডিএনএ। ক্ষতিগ্রস্ত বা অস্বাভাবিক ডিএনএর ক্রমাগত পুনরুৎপাদনই এক সময় সৃষ্টি করে টিউমার। গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, পাঁচ বছর ধরে যারা দিনের বেশির ভাগ সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে, অ্যাকুস্টিক নিউরোমার ঝুঁকি তাদের বেড়েছে ১২৫ ভাগ। যারা ৫-১০ বছর ধরে টানা দীর্ঘ সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছে তাদের বেড়েছে ২৫০ ভাগ। আর যারা ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে এর যথেচ্ছ ব্যবহার করেছে তাদের ঝুঁকি বেড়েছে ২৭৫ ভাগ।

উল্লেখ্য, বর্তমান প্রজন্মের কাছে বহুল ব্যবহৃত উপকরণ হচ্ছে মোবাইল ফোন। আর সাশ্রয়ের জন্য বেশির ভাগ মানুষ কম দামের ফোন ব্যবহার করেন, যা হাই ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন ছড়ায়। কম দামের ফোনে নিম্নমানের স্পিকার ব্যবহারের ফলে অনেকেই কানের রোগ এবং ব্রেন টিউমারসহ নানা জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে।

আরএম/এমএমজেড/ওআর/আরআইপি

Advertisement