বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপের কারণে দেশের সব সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত জারি করা হয়েছে। এছাড়া বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
Advertisement
একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উপর দিয়ে যে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে আগামী ২৪ ঘণ্টায় তাও প্রশমিত হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
শনিবার সকালে আবহাওয়ার সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর বা উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার (বজ্রমেঘ) সৃষ্টি হচ্ছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
Advertisement
এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করারও পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত মানে হলো- বন্দর ও বন্দরে নোঙর করা জাহাজগুলোর দুর্যোগ কবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্দরে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণি বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার হতে পারে।
প্রাকৃতিক নানা কারণে সমুদ্রের একটি অঞ্চলে কেন্দ্রাভিমুখী ঝড়ো হাওয়ার অঞ্চল বা লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। ক্রমান্বয়ে এ ঝড়ো হাওয়ার অঞ্চলটি শক্তি সঞ্চয় করে (বাতাসের গতি বৃদ্ধি পেয়ে) সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ ও শেষে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।
Advertisement
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বাতাসের গতি ১৭ কিলোমিটার থেকে ৪০ কিলোমিটার হলে তা লঘুচাপ। নিম্নচাপ হচ্ছে একটি ঝড়ো হাওয়ার অঞ্চল, যেখানে বাতাসের গতিবেগ থাকে ৪১ থেকে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে। গভীর নিম্নচাপের ক্ষেত্রে বাতাসের গতিবেগ ৫১ থেকে ৬১ কিলোমিটারের মধ্যে থাকে।
কোনো ঝড়ো হাওয়ার অঞ্চলে বাতাসের গতিবেগ ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটারের মধ্যে হলে তাকে বলে ঘূর্ণিঝড়।
এদিকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, ঢাকা, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চলের উপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কি.মি. বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এসব এলাকার নদীবন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু (বর্ষা) চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগে বিস্তার লাভ করেছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু আরও অগ্রসর হওয়ার অনুকূলে রয়েছে।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি না হওয়ায় জ্যৈষ্ঠের গরমে কষ্ট পাচ্ছে মানুষ। ভ্যাপসা গরমে অনেকে শুক্রবার রাতে ঘুমাতে পারেননি।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু দেশের বাকি অংশে বিস্তার লাভ করতে পারে এবং বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে গরম অনেকটাই কমে যেতে পারে।
অপরদিকে শনিবার সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়া এবং বিজলী চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এতে আরও বলা হয়, সেই সঙ্গে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরণের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোর অঞ্চলের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা প্রশমিত হতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা এক থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সাতক্ষীরায় ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আরএমএম/এমএমজেড/জেআইএম