দেশজুড়ে

প্রতি ঈদে নীরবে চোখের পানি ফেলেন লাকী

লাকী বেগম একজন চাতাল কন্যা, একজন মা। স্বামী ওয়াহেদ মিয়ার সঙ্গে কাজ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা সদরের একটি চাতাল কলে। চার সন্তান নিয়ে চাতাল কলেই তাদের বসবাস। আর ক’দিন বাদেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। সবাই যখন ঈদের নতুন জামা-কাপড় কেনায় ব্যস্ত তখন ভিন্ন চিত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার চাতাল কলগুলোতে। ঈদের কথা ভুলে গিয়ে প্রচণ্ড খরতাপে ধান শুকাতে ব্যস্ত চাতাল শ্রমিকরা।

Advertisement

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যতগুলো চাতাল কল রয়েছে তার সিংহভাগই আশুগঞ্জ উপজেলায়। এসব চাতাল কলে নামমাত্র পারিশ্রমিকে যুগ যুগ ধরে বঞ্ছনার জীবন যাপন করে আসছে চাতাল শ্রমিকরা। প্রতি বছর মহান মে দিবসে তাদের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় বদলায় না তাদের জীবনমান।

শুক্রবার (৮ জুন) দুপুরে ধান শুকানোর ফাঁকে কথা হয় ভাই ভাই রাইস মিলের চাতাল কন্যা লাকী বেগম সঙ্গে। এ ঈদে সন্তানদের জন্য নতুন জামা কিনতে পারবেন না বলে ঈদ নিয়ে তিনি বাড়তি কিছু ভাবছেন না। এ জন্য কিছুটা আক্ষেপও রয়েছে লাকীর।

লাকী বেগম জাগো নিউজকে বলেন, তার বাড়ি হবিগঞ্জের আজমেরীগঞ্জ উপজেলার শিবপুর গ্রামে। স্বামী ওয়াহেদ মিয়াও ওই গ্রামেরই বাসিন্দা। বিয়ের পরপরই জীবিকার তাগিদে চলে আসেন আশুগঞ্জের চাতাল কলে। এক মাঠ ধান শুকালে লাকী পান ৫০ টাকা ও তিন কেজি চাল এবং শুকানোর পর ধান থেকে চাল করে গোদামে তোলা পর্যন্ত ওয়াহেদ মিয়া পান ২৫০ টাকা ও তিন কেজি চাল। এক মাঠ ধান শুকাতে সময় লাগে দুই থেকে চার দিন।

Advertisement

লাকী বলেন, চাতাল কল মালিক আমাদের জন্য ঈদ উপলক্ষে কোনো বোনাসের ব্যবস্থা করেন না। নিয়মিত যে মজুরিতে কাজ করি তাতে তো সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়ে। তাই ইচ্ছা থাকলেও সবসময় ঈদে সন্তানদের জন্য নতুন জামা-কাপড় কিনতে পারি না। যখন কেনার সুযোগ হয় সেটাও ফুটপাত থেকে কিনে দেই। এক বছরের মজুরি জমালেও তো আর বড় মার্কেট থেকে কাপড় কিনে দিতে পারবো না।

লাকী আরও বলেন, গরিবের আবার কিসের ঈদ? মালিক যদি হিসাবের বাইরে টাকা দেন তাহলে ঈদ করবো, না হলে করবো না।

ঈদ নিয়ে লাকীর মতো একই কথা বলেন আরেক চাতাল কন্যা মরিয়ম বেগম। তিনিও স্বামীর সঙ্গে ভাই ভাই রাইস মিলে কাজ করেন। নিজেরা তো আনন্দ করতে পারেন না বরং প্রতি ঈদে সন্তানদের জন্য নীরবে চোখের পানি ফেলেন লাকী ও মরিয়ম।

বাংলাদেশ রাইস মিলের আরেক চাতাল কলের শ্রমিক আমিন হক জাগো নিউজকে বলেন, যে টাকা মজুরি পাই তা দিয়ে সংসারই চালাতে পারি না। ঈদের কেনাকাটা করবো কীভাবে? যখন বৃষ্টির মৌসুম থাকে তখন ৮ থেকে ১০ দিন লাগে এক মাঠ ধান শুকাতে। তখন সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়। বাইরে গিয়ে অন্য কাজ করে সংসারের খরচ যোগাই।

Advertisement

তাদের মতোই অবস্থা অন্য চাতাল কলগুলোতে কাজ করা শ্রমিকদের। তাই ঈদ কিংবা অন্য কোনো উৎসব নিয়ে কোনো ভাবনা থাকে না এ সব চাতাল শ্রমিকদের।

এ বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা চাতাল কল মালিক সমিতির সভাপতি জিয়াউল করিম খান সাজু বলেন, ঈদে মিল মালিকরা শ্রমিকদের জন্য কিছু না কিছু করে থাকেন। প্রতিবারই আমরা মিল মালিকরা শ্রমিকদের বউদের শাড়ি দিয়ে থাকি। তবে আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে ঈদে শ্রমিকদের জন্য কোনো কিছু করছি না।

আজিজুল সঞ্চয়/আরএ/জেআইএম