যশোরের ব্যবসায়ী সাজেদুর রহমান সাজিদ হত্যার রহস্য ৯ মাস পর উদঘাটন করেছে সিআইডি। স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমের জের ধরেই খুন হয়েছেন সাজিদ। স্ত্রী সাদিয়া সুলতানা শাম্মী ও তার প্রেমিক মানিক পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে এমন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ হাতে এসেছে পুলিশের। প্রেমিক মানিকের সঙ্গে শাম্মীর মোবাইল ফোনে দীর্ঘ কথোপকথনের সূত্র ধরেই পুলিশ এমন তথ্য উদ্ধার করেছে।
Advertisement
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যশোর শহরতলীর খোলাডাঙ্গা পীরবাড়ি মুনতাজ আলীর মেয়ে সাদিয়া সুলতানা শাম্মীকে ৭ বছর আগে বিয়ে করেন শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের জালাল উদ্দিনের ছেলে সাজেদুর রহমান সাজিদ। শহরের বড় বাজারের ফেন্সিমার্কেটে সাজিদ স্টোর নামে তার একটি দোকান রয়েছে।
পুলিশ বলছে, শাম্মী খোলাডাঙ্গা এলাকার সলেমান গাজীর ছেলে মানিকের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু মানিকের সঙ্গে চলাফেরা করতে স্ত্রী শাম্মীকে নিষেধ করেন সাজিদ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত বছরের ৩০ আগস্ট শাম্মী তার বাবার বাড়িতে চলে যান।
৪ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে কয়েকজন সহযোগী নিয়ে শাম্মীকে তার বাবার বাড়ি থেকে তুলে আসেন সাজিদ। ওই দিন রাতেই শাম্মীর বাবা, মা ও প্রেমিক মানিকসহ আরও ২-৩ জন সাজিদের বাড়ি থেকে শাম্মীকে ফের নিয়ে যায়। পরদিন বিকেল ৪টায় সাজিদ বাড়ি থেকে চলে যায়। এরপর থেকে কোথাও আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Advertisement
৮ সেপ্টেম্বর সাজিদের বাবা জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে ৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে যশোর শহরের ডিসি বাংলো রোডের সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলীর বাসভবনের সামনে থেকে সাজিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সাজিদের বাবা জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে নিহতের স্ত্রী সাদিয়া সুলতানা শাম্মী ও তার মা-বাবা এবং প্রেমিক মানিকের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
প্রথমে থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) সামসুদ্দোহা এবং পরে সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক হারুন অর রশিদ মামলাটি তদন্ত করেন।
পুলিশ বিভিন্ন সময় শাম্মী, তার প্রেমিক মানিকসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করে। এরমধ্যে মানিকের ভাই সাকিল এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।
এছাড়া শাম্মী এবং মানিকের মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে পুলিশ জানতে পারে সাজিদ হত্যার ৫ দিন আগে ৩৮৮ বার শাম্মী ও মানিকের মধ্যে মোবাইল ফোনে কথোপকথন হয়েছে। এর মধ্যে মানিক রিং করেছে ২৬৬ বার এবং শাম্মী রিং করেছে ১২২ বার। তাদের দু’জনের মধ্যে একটানা ৪৯৪৪ সেকেন্ড কথা হয়েছে বলে কললিস্ট সূত্রে জানা গেছে।
Advertisement
মোবাইল ফোনের কললিস্ট এবং মানিকের ভাই সাকিলের আদালতে দেয়া জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে এ খুনের সঙ্গে শাম্মী এবং মানিক জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়। তাদের সঙ্গে অন্যরা হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেছে।
তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক হারুন অর রশিদ বলেন, সাজিদ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। দ্রুত চার্জশিট দেয়া হবে।
মিলন রহমান/এফএ/জেআইএম