রাজনীতি

প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণ হতাশ : রিজভী

২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটকে বিশাল ঘাটতির ঋণনির্ভর বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী। একই সঙ্গে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত এ বাজেট জনকল্যাণমূলক না হওয়ায় জনগণ হতাশ হয়েছে।

Advertisement

শুক্রবার সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ভোটারবিহীন জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিশাল ঘাটতির ঋণনির্ভর ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেছেন। প্রস্তাবিত বাজেট জনকল্যাণমূলক না হওয়ায় জনগণ হতাশ। তারা (আওয়ামী লীগ) যেহেতু জনগণের সরকার নয়, সংসদ সদস্যরা যেহেতু জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন, তাই তাদের কাছ থেকে জনকল্যাণমূখী বাজেট আশাও করা যায় না।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না। মূলত নির্বাচনকে সামনে রেখে সর্বশেষ লুটপাটের জন্যই এ বিশাল বাজেট পেশ করা হয়েছে। ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বাজেট বড় করা হয়েছে। বাজেটের আকার বড় করে জনগণের সঙ্গে ধাপ্পাবাজি করা হয়েছে। এ বাজেট বাস্তবায়ন অসম্ভব।

Advertisement

বিএনপির এ নেতা বলেন, বাজেটে যে বড় ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ করা অসম্ভব। সে জন্য ঋণ ও সঞ্চয়পত্রের ওপর ঝুঁকতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেট কর, ঋণ আর বিদেশি অনুদান নির্ভর। বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা, এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা আদায় করা হবে। যা জনগণের রক্ত চুষে আদায় করতে হবে। এক কথায় বলা যায়, প্রস্তাবিত বাজেট জনগণের রক্তচোষার লুটের বাজেট।

চলতি আয়-ব্যয়ে বিশাল ঘাটতি থাকবে, কারণ আমদানি ব্যয় বাড়ছে, রফতানি আয় কমছে। রফতানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মূলস্ফীতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলেও জানান তিনি।

রিজভী বলেন, এ বাজেট জনকল্যাণে কোনো কাজে আসবে না। প্রস্তাবিত বাজেট গরীবকে আরও গরীব করবে, ধনীদেরকে আরও ধনী করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। বাজেটে ব্যাংক লুটপাটকারীদের আরও সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। ব্যাংকের কর্পোরেট কর কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যাংক মালিকরা যা চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী তাই করেছেন।

প্রস্তাবিত বাজেটে জনকল্যাণমূলক কাজে যেমন- শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক খাতে বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল। ফলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে কোন উন্নয়ন হবে না। পোশাক খাতসহ কর্পোরেট খাতে কর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পোশাক খাতে বর্তমানে যে দুরাবস্থা চলছে তাতে সে খাতে দুরাবস্থা আরও বেড়ে যাবে -বলেন রিজভী।

Advertisement

বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, বাজটে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোনো সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা নেই। দেশে সুশাসন না থাকায় বর্তমানে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নেই। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে দেশে কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি। প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে সকল জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির প্রশস্ত মহাসড়কে মানবজাতির বিচরণ। এ অবৈধ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে, অথচ বাজেটে ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল ব্যবহারের ওপর কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭.৮। বিশ্বব্যাংকসহ বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, প্রবৃদ্ধি ৭ এর নিচে থাকবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ৭.৮ প্রবৃদ্ধি অসম্বব। প্রস্তাবিত ৭.৮ প্রবৃদ্ধি ডাহা মিথ্যাচার। এ বাজেট গণবিরোধী। নির্বাচনের আগে দলীয় নেতাকর্মীদের পকেট ভারী করার সুযোগ সৃষ্টি, জনগণের সঙ্গে ধাপ্পাবাজি ছাড়া এ বাজেট আর কিছুই নয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এ বাজেট সম্পূর্ণরুপে প্রত্যাখান করছে।

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রিজভী বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করতে বিএনপি না চাইলেও ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। সিইসি সরকারের সাথে এক অলিখিত বশ্যতায় আবদ্ধ। আগামী নির্বাচনের ফল ক্ষমতাসীনদের পক্ষে নিতে নানা কারসাজি ও নতুন নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে সিইসি।

কেএইচ/আরএস/এমএস