রাজশাহী নগরী ছেয়ে রয়েছে সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের লাখো বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন। আগামী ৩০ জুলাইয়ের সিটি নির্বাচন সামনে রেখে অবৈধ এসব প্রচারপত্র ছড়িয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেয়াললিখন ও পোস্টার। আর এসবে সৌন্দর্য হারিয়েছে পরিপাটি ও দৃষ্টিনন্দন এ নগরী।
Advertisement
রাসিক বলছে, রাজনৈতিক কারণেই অবৈধ প্রচারপত্র উচ্ছেদে যেতে পারছে না নগর সংস্থা। এতে প্রতি বছরই মোটা অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সিটি কর্পোরেশন।
রাসিকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, নগরীতে বিলবোর্ড রয়েছে ৫৩টি। এছাড়া ২২টি রোড ওভারহেড এবং ৮টি ইউনিপোল রয়েছে। এগুলোর সবগুলোই ব্যক্তিমালিকানাধীন। এর বাইরে কেবল নগরীর আরডিএ মার্কেট ফুটওভার ব্রিজ বিলবোর্ডের মালিকানা রয়েছে রাসিকের হাতে। তবে ব্যানার-ফেস্টুন নেই রাসিকের ওই তালিকায়।
রাসিক বলছে, সিটি কির্পোরেশনের মডেল ট্যাক্স সিডিউল অনুযায়ী প্রতি বর্গফুট বিলবোর্ডের জন্য ধার্য কর ১০০ থেকে দেড়শ টাকা। আর প্রতিটি ব্যানার ফেস্টুনে ১৫ দিনের জন্য কর ধরা হয়েছে ৫০০ টাকা। এছাড়া কাঠের ফ্রেমের ক্যানভাস প্রতিটির জন্য মাসে কর ৩০ হাজার টাকা। সাইজভেদে পোস্টারের জন্য দিনে ৭ থেকে ১০ টাকা করে আদায় করার কথা।
Advertisement
মডেল ট্যাক্স সিডিউল অনুযায়ী গত ছয় বছরে বিলবোর্ড, ব্যানার, রোড ওভারহেড ও ইউনিপোল থেকে ৫ কোটি ১৩ লাখ ৯১ হাজার ৪৭৮ টাক রাজস্ব আয় করেছে রাসিক।
সিটি কর্পোরেশন আরও বলছে, নগরীর আরডিএ মার্কেট সংলগ্ন সড়কের ফুটওভার ব্রিজ বিলবোর্ড ইজারা দিয়ে আসছে রাসিক। এর মধ্যে সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের মেয়াদকালে (২০০৯-২০১৩) এখান থেকে ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৪০০ টাকা রাজস্ব আদায় হয়।
এরপর পরের কেবল দুটি অর্থবছরে ইজারা দিতে পেরেছে রাসিক। এর মধ্যে ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে ২ লাখ ১৯ হাজার টাকা এবং ২০১৪-২০১৫ অর্থবছর ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় হয়। এরপর থেকে অবৈধ দখলে চলে যাওয়ায় এ বিলবোর্ড ইজারা দিতে পারেনি রাসিক।
রাসিকের একমাত্র এ বিলবোর্ডে এখন শোভা পাচ্ছে সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নির্বাচনী ব্যানার। ফলে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করেও ক্রেতা পায়নি রাসিক। এতে বড় অংকের আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে নগর সংস্থা।
Advertisement
কেবল এ বিলবোর্ডই নয় নগরজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের আরো কয়েক হাজার নির্বাচনী ব্যানার। অনেকটা বিলবোর্ড আকার দিয়ে শক্ত বাঁশের কাঠামোতে নগরীর জনগুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে টানানো হয়েছে ব্যানারগুলো। লিটনের ব্যানারে ঢাকা পড়েছে বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর বেশকিছু বিলবোর্ড এবং রোডসাইন।
এছাড়া বিভিন্ন স্থাপনা, সড়কদ্বীপ এমনকি নগরীর গাছে গাছেও ঝুলছে ব্যানার ও ফেস্টুন। এসব প্রচারপত্রে আসন্ন সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকায় ভোট চেয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এই সদস্য। লিটন নিজেই না তার পক্ষে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠন, এমনকি দলের নেতাকর্মীরা এসব প্রচারপত্র প্রদর্শন করছেন। আর এসবে ঢাকা পড়েছে নগরীর নান্দনিকতা।
এতকিছুর পরও গত কয়েক বছর অবৈধ বিলবোর্ড-ব্যানার অপসারণ অভিযানে নামেনি নগর সংস্থা। বিষয়টি স্বীকার করেছেন রাসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা শাহানা আখতার জাহান। তিনি বলেন, তিন বছরের বেশি সময় ধরে রাসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেই। ফলে বড় ধরনের অভিযানে নামা হয়নি নগর সংস্থার। তবে মাঝেমধ্যেই ছোটখাট অভিযান চালিয়েছেন তারা। নগরীর রাজনৈতিক প্রচারপত্র অপসারণ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্তব্য করতে রাজি হননি প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা।
নগরীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থানা অবৈধ প্রচারপত্রের বড় অংশ সাবেক রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের। এতে নগর সংস্থা রাজস্ব হারানোর বিষয়টি স্বীকার করেন লিটন। তিনি বলেন, এনিয়ে তেমন কোনো নীতিমালা নেই। এবার সিটি মেয়র নির্বাচিত হলে রাসিকের রাজস্ব বৃদ্ধিতে নীতিমালা প্রণয়ন করবেন তিনি।
এসব প্রচারপত্রে নগরীর নান্দনিকতা হারাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে নগরীর চেহারা পাল্টে দেয়া সাবেক এই মেয়র বলেন, সামনে নির্বাচন। আর বিষয়টি রাজনৈতিক। তাছাড়া এগুলো নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। তাই এনিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
এদিকে অবৈধ বিলবোর্ড-ব্যানার অপসারণে ঈদের আগেই বড় ধরনের অভিযানে নামার কথা জানিয়েছেন রাসিক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তিনি বলেন, অবৈধ ব্যানার-বিলবোর্ডের পুরোটাই রাজনৈতিক। নগরীর পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই চালানো হবে ওই অভিযান।
অবৈধ বিলবোর্ড-ব্যানার ট্যাক্সের আওতায় নেয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, এটি করা গেলে রাসিকের রাজস্ব বাড়তো। কিন্তু এটি করা সম্ভব নয়। কারণ-সারাদেশই আজ ডাকাতের দেশ। এনিয়ে রাসিক কঠোর অবস্থানে গেলে নগরজুড়ে অরাজকতা সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা নেবে দখলদাররা।
এফএ/এমএস