‘অ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা, আমরা তো তাকে ডিক্টেট (নির্দেশ) করতে পারি না।’ বৃহস্পতিবার কুমিল্লায় নাশকতার ঘটনায় বিশেষ আইনে দায়ের করা মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেলের সময় আবেদনের বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে এমন মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য ১০ জুন দিন ধার্য করা হয়। হাইকোর্টের বিচারপতি মো. শওকত হোসেন ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জামিন শুনানির শুরুতে আদালত বলেন, ‘অবকাশকালীন বেঞ্চে আমরা সবমিলিয়ে দুই ঘণ্টার মতো সময় পাই। সেখানে কিছু মামলা শুনি। এটা তো বড় মেটার, সময় লাগবে। এখন এ সময়টাও আপনারা নষ্ট করবেন? আপনারা এটা নিয়মিত বেঞ্চে শুনানি করেন।’
Advertisement
তখন খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘মামলাটা সাধারণই, শুধু নামটা বড়।’ জবাবে আদালত বলেন, ‘নাম বড় বলেই তো সমস্যা। অন্য কোনো মামলা কি মিডিয়ায় আসে এভাবে?’ এ কথা বলেই খন্দকার মাহবুব হোসেনকে আবেদনের ওপর শুনানি শুরু করতে বলেন আদালত। পরে খন্দকার মাহবুব হোসেন খালেদা জিয়ার আবেদনের ওপর শুনানি শুরু করেন। তিনি বলেন, এ মামলায় খালেদা জিয়ার নাম এজাহারে ছিল না। চার্জশিটে তার নাম এসেছে ১২১ নম্বরে। মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে। অন্য আসামিরা জামিনে আছেন। আমরা তার বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারিপূর্বক জামিন চেয়েছি। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আবেদন নামঞ্জুর করেছে। এ বিষয়ে অন্য একটি বেঞ্চ থেকে আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির একটি আদেশও দেয়া হয়েছে।’ আদালত বলেন, ‘হাইকোর্ট থেকে অন্য মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে দ্রুত জামিন শুনানি নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে। এটা কি সেই একই ধরনের বিষয়? তখন খন্দকার মাহবুব হোসেন ‘হ্যাঁ’ সূচবক জবাব দেন। আদালত বলেন, ‘জামিনের আবেদন নিষ্পত্তি না করার বিষয়ে অন্য একটি ডিভিশন বেঞ্চ থেকে একটা অর্ডার এসেছে। সিনিয়র বেঞ্চ থেকে যেহেতু একটা অর্ডার এসেছে, আমাদের তো সেটা ফলো করা উচিত।’ তখন খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘তাহলে আপনারাও ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি ও জামিন আবেদন নিষ্পত্তির বিষয়ে আদেশ দিতে পারেন।’ এ সময় আদালত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘যেহেতু ডিভিশন বেঞ্চ থেকে আবেদন নিষ্পত্তির বিষয়ে একটা অর্ডার এসেছে। ওয়েবসাইটেও দেয়া হয়েছে, পত্রপত্রিকাতেও আমরা দেখেছি। তাহলে আমরা একই ধরনের আদেশ দিলে আপনার মতামত কী?’ তখন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমরা আদেশটি দেখি নাই। রোববার পর্যন্ত সময় দেন, সেদিন দেখে এসে শুনানি করব।’ তখন আদালত রোববার পর্যন্ত মামলার শুনানি মুলতবি রাখেন।
খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী জয়নুল আবেদীন এ সময় বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল সাহেব তো আদেশটা এখনই পড়ে একটা মতামত দিতে পারেন।’ জবাবে আদালত বলেন, ‘উনি তো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা। রোববার পর্যন্ত সময় চেয়েছেন, অর্ডারটা দেখার জন্য। আমরা তো উনাকে ডিক্টেট (নির্দেশ) দিতে পারি না। সিনিয়র হিসেবে তো আপনারাও প্রিভিলাইজটা এনজয় করেন। এই বলে আদালত ১০ জুন রোববার শুনানি মুলতবি করেন। বিশদলীয় জোটের অবরোধ চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামে বাসে দুষ্কৃতকারীদের ছোড়া পেট্রোল বোমা হামলায় ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেন। গত ২৮ মে কুমিল্লার একটি আদালতে গ্রেফতার দেখানোপূর্বক জামিন আবেদন করেন খালেদা জিয়া। সেই আবেদন নামঞ্জুর করে ৮ আগস্ট পরবর্তী দিন ধার্য করেন আদালত। বিচারিক আদালতের ওই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে গত ৫ জুন হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন খালেদা জিয়া। উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের দণ্ড নিয়ে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগারে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া।
এফএইচ/এমএআর/জেআইএম
Advertisement