হাম্মাদ সাফি। বয়স মাত্র ১১। অথচ এই বয়সেই সে পাকিস্তানকে কাঁপিয়ে তুলেছে। বিস্ময় এ বালকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ পকিস্তান। ১১ বছর বয়সেই প্রথম সারির একজন মোটিভেশনাল স্পিকার বনে যাওয়া সাফির বক্তব্য শোনার জন্য কান পেতে থাকেন শ্রোতারা। অনলাইন স্টার সাফির বক্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গভীর আগ্রহ নিয়ে শুনে থাকেন। তার এই প্রতিভা ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ইউটিউবে।
Advertisement
সাফির ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা এক লাখ ৪৫ হাজার। তার অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্যের কিছু ভিডিও লাখ লাখ মানুষ দেখেছেন।
সাফি কথা বলে তারবিহীন মাইক্রোফোন দিয়ে। কথা বলার সময় তার শারীরিক অঙ্গভঙ্গিও বেশ আকর্ষণীয়। তবে তার কিছু উপদেশ একেবারে গতানুগতিক ধারার। একটি ভিডিওতে সাফি বলে, ‘প্রতিটি সেকেন্ড একটি চ্যালেঞ্জ।’ অন্য এক ভিডিওতে সে বলছে, ‘ব্যর্থতাই সাফল্যের ভিত্তি।’
বিলাল খান। তার বয়স সাফির বয়সের দ্বিগুণ। তিনিও সফির বক্তব্য শুনতে এসেছেন। বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি জানান, এই বালক বিস্ময়করভাবে তার উপর প্রভাব ফেলেছে। ‘কয়েকমাস আগে, আমি আমার জীবন নিয়ে হতাশায় ভুগছিলাম। আমি আত্মহত্যার পরিকল্পনা পর্যন্ত করেছিলাম। কারণ, আমার কোনো চাকরি ছিল না- জীবনে সাফলতা ছিল না।’
Advertisement
তিনি বলেন, হঠাৎ একদিন সাফির ভিডিও দেখলাম। ভিডিও দেখে ভাবলাম, ১১ বছরের বালক যদি কিছু করতে পারে, তাহলে আমি কেন পারব না। অনলাইন মন্তব্যগুলোও প্রশংসায় ভরপুর। লোকে তাকে পছন্দ করে, কারণ সে কথা বলে। তার কথাগুলো দারুণভাবে মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। এ মন্তব্য সামিউল্লাহ ওয়াকিল নামের একজন ইংরেজি শিক্ষকের।
মহাকবি আল্লামা ইকবাল সম্পর্কে বলতে গিয়ে সাফি বলে, তিনি যদি না থাকতেন, তাহলে আমি কিংবা আপনারা, আমাদের সবাইকে ইংরেজের বাড়িতে টয়লেট পরিষ্কার করতে হতো। সে পেশোয়ারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ইউনিভার্সিটি অব স্পোকেন ইংলিশ (ইউসেকস্) এ লেকচার দেয়। এ ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি তাকে ইতোমধ্যে ‘নানহা প্রফেসর’ বা ‘ক্ষুদে শিক্ষক’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
সাফি পাকিস্তানের সাধারণ একটি স্কুলে লেখাপড়া করেছে। কিন্তু এখন সে ইউসেকসে ইংরেজি ক্লাস নেয়। ওই স্কুলের পরিচালক আমের সোহেল জানান, তার মধ্যে বিস্ময়কর আত্মবিশ্বাস রয়েছে দেখেই আমরা তাকে এ দায়িত্ব দিয়েছি।
খুব দ্রুতই সে আগের স্কুল ত্যাগ করে ইউসেকসে ফুল টাইমের জন্য যোগ দেবে। তার ইচ্ছা, এখানে সে তার ইংরেজি পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। পাশাপাশি মোটিভেশনাল ক্যারিয়ারও ধরে রাখবে সে। সাফি এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে একবার মোটিভেশনাল লেকচার দেবে।
Advertisement
সোহাইল বলেন, তার এ কাজ গরিব শিক্ষার্থীদের সাহস দেবে, আশা দেবে; যাতে করে তারা দেশের বিরাজমান শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে পারে। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, পাকিস্তানে ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠী নিরক্ষর।
সাফির বাবা আব্দুল রেহমান খান একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, সে আট-দশটা ছেলের মতো না। লোকে তার মধ্যে বিশেষ কিছু দেখেছে। আমিও তার ক্ষমতা বুঝতে পেরেছি। এজন্য আমি তার জন্য আলাদা শিক্ষকের ব্যবস্থা করেছি।
আমি তাকে ভবিষ্যতে একজন বিশেষ নেতা হিসেবে দেখতে চাই। তার কর্মক্ষমতা, তার বুদ্ধিমত্ত্বার জন্য আমি সত্যিই খুবই গর্বিত, জানান তার বাবা।
সাফি বার্তা সংস্থা এএফপিকে একটু বিরক্তি নিয়ে বলে, ‘আমি শুধুমাত্র পাকিস্তানের জন্য নই বরং সারাবিশ্বের অনুপ্রেরণা। আমি পুরো বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করি। তার প্রফেসর বলছেন, সে মাঝেমধ্যে টানা ১০-১২ ঘণ্টা পড়াশোনা করে।
সাফি যে কক্ষে থাকে সেটি খুবই সাধারণ। কক্ষে থাকা একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইসলামাবাদে চীনা রাষ্ট্রদূত এবং রাজনীতিবিদ ইমরান খান তার হাতে বিছানার চাদর তুলে দিচ্ছেন। কক্ষটিতে কোনো কার্টুন বা খেলোয়াড়ের ছবি নেই। অল্প কিছু খেলনা রয়েছে।
সাফি বলছে, ব্যাটমান আর সুপারম্যান হলো ‘ভুয়া হিরো।’ কিন্ত ওইগুলোই আসল হিরো। দেয়ালে টানানো মহাকবি আল্লামা ইকবাল, বিল গেটস, আলবার্ট আইনস্টাইনের ছবির দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে সে।
পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর বখতে জামান বলেন, তার মধ্যে শিশুত্বভাব কই? সেটা চলে গেছে। কারণ, সে যা চিন্তা করে তা তার বয়সের ঊর্ধ্বে। তিনি সাফির একটি লেকচারে উপস্থিত ছিলেন। ওই লেকচার পরে ইউটিউবে শেয়ার দেয়া হয়। এই মেধাবী শিশু একজন ভালো মোটিভেশনাল কোচ।
সূত্র: এএফপি।
এসআর/এসআইএস/জেআইএম