দেশজুড়ে

‘সমাজ গড়তে প্রতিবন্ধীরাও ভূমিকা রাখবে’

তাপস চন্দ্র দাস বয়স আটাশ। আর মো. আবুল বশারের বয়স বাইশ। এদের মধ্যে তাপস চন্দ্র দাসের জন্মের দুই বছর পরে হটাৎ জ্বর হলে পায়ে সমস্যা দেখা দেয়। আর মো. আবুল বশারের জন্মের পর থেকে পায়ে সমস্যা। দু’জনেই শারিরীক প্রতিবন্ধী। ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে সমাজে নিজেদের একটা পরিচয় তৈরি করবেন। কিন্তু তাদের বেড়ে ওঠাও অন্যদের মতো স্বাভাবিক না। অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে অনেক কাঠখড় পুড়ে তাদেরকে আসতে হয়েছে এতদূর। সব বাঁধা ডিঙিয়ে পৌঁছাতে চায় কাঙ্খিত লক্ষ্যে।

Advertisement

পটুয়াখালীর বাউফলের বগা বন্দরের রাজনগর গ্রামের বাসিন্দ বাবুল চন্দ্র দাসের ছেলে তাপস। বর্তমানে শহরের চক বাজার এলাকার ভাড়া বাসায় থাকছে এই পরিবারটি। আর ১নং লাউকাঠি গ্রামের লাউকাঠি গ্রামের বাসিন্দা আফেজ হাওলাদারের ছেলে বশার। বর্তমানে তারা ওই এলাকারই বাসিন্দা।

ব্যবসায়ী তাপস চন্দ্র দাস বলেন, ‘সেলিম মিয়ার কাছ থেকে মোবাইল সাভিসিং আর স্থানীয় দিপা কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার থেকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি। পরে শহরের চকবাজার এলাকায় তাপস টেলিকম চালু করেন। কম্পিউটার থেকে মোবাইলে সফটওয়ার, মোবাইল ফেলাস, গান লোড করা হয়। প্রতিদিন সকাল ১০ থেকে দুপুর ২টা আবার বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকে। এতে ২০০-৫০০ টাকা প্রতিদিন আয় হয় তার।’

পরিবার সম্পর্কে তিনি বলেন,‘আট বছর আগে শিল্পি দাসকে বিয়ে করেন তিনি। এর কিছু দিনের মাথায় এই দম্পতির ঘর আলো করে আশে তন্ময় (৭)। তন্ময় শহরের আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।

Advertisement

অশ্রুসিক্ত চোখে তাপসের মা লক্ষী রানী দাস বলেন, ‘জন্মের দুই বছর পর হটাৎ তার ছেলের গায়ে জ্বর হয়। পরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। প্রথমে জ্বর ভালো হওয়ার পরে পায়ে সমস্যা দেখা দেয়। এরপরে অনেক চিকিৎসকেই দেখালাম কিন্তু তাতে ওর পা ঠিক হয়নি।’

ব্যবসায়ী তাপসের বাবা বাবুল চন্দ্র দাস বলেন,‘এক বছর যাবৎ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তিনি। অনেক সময় ভেবেছি আমার ছেলে মনে হয় কিছু করতে পারবে না। আমার দুই ছেলের মধ্যে তাপস বড় আর বিধান চন্দ্র দাস ছোট ভাই সে বিদ্যুৎ শ্রমিকের কাজ করে। বর্তমানে নাতী নিয়ে সময় ভালো কাটে আমার।’

ব্যবসায়ী মো. আবুল বশার বলেন,‘প্রায় চার বছর আগে বড় ভাই টিটুর কাছে কম্পিউটারের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তিনি। বড় ভাইর অনত্র চাকরি হলে তিনি আমার চলার জন্য তার কম্পিউটার দিয়ে যায়। পরে তার সহযোগিতায় শহরের চকবাজার এলাকায় বশার টেলিকম চালু করি। কম্পিউটার থেকে মোবাইলে সফটওয়ার, মোবাইল ফেলাস, গান লোড করা হয়। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে। দিনে ৩০০-৮০০ টাকা আয় হয়।

পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই বছর আগে শিরিন বেগমকে বিয়ে করেন তিনি। এর কিছু দিনের মাথায় তাদের ঘর আলো করে আশে আতিকুর রহমান।

Advertisement

ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বশারের মা কহিনুর বেগম বলেন, ‘জন্মের পর থেকে বশার হাঁটতে পারতো না। আমি ভাবতে পারি নাই আমার ছেলের আয় আমি খেতে পারবো। আমার বড় ছেলেও বিয়ে করবে।’

বশারের বাবা আফেজ হাওলাদার বলেন, ‘আমি চায়ের দোকান করি। আমার দুই ছেলের মধ্যে বশার বড় আর ছোট ছেলে শাকিল। আমার সঙ্গে দোকানে সাহায্য করে। তিনি বলেন, ছেলে আমার অনেক ভালো মানুষ। সে টাকা দিয়ে পরিবারে আমাকে সহায়তা করেন।’

বশারের স্ত্রী শিরিন বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীর অন্যদের মতো স্বাভাবিক না। তার মতো মানুষ হয় না। সে সারাদিন অনেক পরিশ্রম করে আমাদের ভালো রাখার জন্য। আল্লাহর রহমতে স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে আছি।’

তাপস আর বশার বলেন, ‘আমরা সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছি। আমরাও পারি। সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে আমাদের মতো প্রতিবন্ধীরা কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস রয়েছে।’

মহিব্বুল্লাহ্ চৌধুরী/আরএ/জেআইএম