বিশ্বকাপ জয়ের স্মারকই তো ১৪.৪ ইঞ্চি উচ্চতার, ৫ কেজি ওজনের সোনালি ট্রফিটা। এই ট্রফিটা হাতে তুলে ধরার জন্যই তো আজীবন ফুটবল মাঠে লড়াই করে যান ফুটবলাররা; কিন্তু ক’জন পারেন এই সৌভাগ্য লাভ করতে। অনেক বড় বড় ফুটবলারও তো এই সৌভাগ্যের মালিক হন না। এই যেমন বর্তমান বিশ্বের সেরা ফুটবলার বলতে আমরা যাদের বুঝি, সেই মেসি-রোনালদোদের হাতে এখনও পর্যন্ত সোনালি ট্রফিটা ওঠেনি। যদিও বা, এখনও সুযোগ রয়েছে তাদের সামনে।
Advertisement
তবে, যে ৩২টি দল বিশ্বকাপে খেলার জন্য যোগ্য নির্বাচিত হয়, তাদের সবাই যে বিশ্বকাপ জিততে পারবে না সেটাও জানা আছে সব ফুটবলারের। শিরোপা হাতে তুলে নেয়ার সুযোগ পাবে মাত্র একটি দেশের ২৩ জন ফুটবলার। বাকিরা সবাই একে একে এই শিরোপা জয়ের পথ থেকে পর্যায়ক্রমে ঝরে যাবে; কিন্তু কৌতূহলী মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, শুধু বিশ্বকাপ ট্রফিটাই কী বিশ্বকাপের একমাত্র পুরস্কার? যে ৩২টি দল খেলতে আসে, তাদের জন্য কি কিছুই নেই?
এ প্রশ্নের জবাব, ‘হ্যাঁ আছে।’ প্রতি ৪ বছর পর ফিরে আসে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ বিশ্বকাপ ফুটবল। বিশ্ব কাঁপানো এই টুর্নামেন্টের বিজয়ী হবে কে, তা নিয়ে যেমন মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই, তেমনি চ্যাম্পিয়ন, রানার্স আপসহ, অন্য অংশগ্রহণকারী দেশগুলো কে কত টাকা পুরস্কার পাচ্ছেন সে সব জানা নিয়েও মানুষের আগ্রহের শেষ নেই।
২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপের তুলনায় রাশিয়ায় বিশ্বকাপে প্রাইজ মানি বেড়েছে। আগেরবার প্রাইজ মানি ছিল ৩৫৮ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ হাজার ১৮ কোটি)। যা বেড়ে এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে দাঁড়িয়েছে ৪০০ মিলিয়ন ডলারে (বাংলাদেশি টাকায় প্রায়, ৩ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা)। এই টাকার পুরোটাই পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে ভাগ করে দেয়া হবে চ্যাম্পিয়ন-রানার্স আপসহ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে।
Advertisement
বিশ্বকাপে যে ৩২টি দল অংশ নিচ্ছে, তাদের প্রত্যেকের জন্যেই প্রাইজ মানি নিশ্চিত। কেউ বিশ্বকাপ জিততে পারুক আর না পারুক, পুরস্কারের অর্থ থাকছেই প্রতিটি দলের জন্য। বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করা প্রতিটি দলের জন্যই নিশ্চিত হয়ে যায় ৮ মিলিয়ন ডলার করে অর্থ প্রাইজ মানি।
তবে, প্রতিটি দল আবার ফিফার পক্ষ থেকে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের খরচবাবদ আরও দেড় (১.৫) মিলিয়ন ডলার (১২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা) করে পাবে। যেটাকে প্রাইজমানির মধ্যে গণ্য করা হয় না। গ্রুপ পর্বে অংশগ্রহণকারীদের জন্য ৮ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৬৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা) করে বরাদ্দ। তবে, এই অর্থ পাবে ৩২ দলের সবাই নয়, ১৬টি দল। কারণ, তারা গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেবে।
দ্বিতীয় রাউন্ডে যারা উঠে যাবে তাদের জন্য নির্ধারিত ৮ মিলিয়ন ডলারের সঙ্গে যোগ হবে আরও ৪ মিলিয়ন ডলার। অর্থ্যাৎ দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হলেই ১২ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১০১ কোটি ১৬ হাজার টাকা) নিশ্চিত। যদিও এই অর্থ পাবে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নেয়া ৮টি দল।
কোয়ার্টার ফাইনালে উঠবে যে আটটি দল তাদের সবার জন্য নিশ্চিত আরও ৪ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, ১৬ মিলিয়ন ডলার। এই ১৬ মিলিয়ন ডলার করে পাবে মাত্র ৪টি দল। অর্থাৎ কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে যারা বিদায় নেবে তাদের জন্য বরাদ্ধ ১৬ মিলিয়ন ডলার (১৩৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা) করে।
Advertisement
সেমিফাইনালে এসে প্রাইজমানির অর্থের তারতম্য ঘটে যাবে। সেমিফাইনালে যে দুই দল হেরে যাবে সেই দুই দলের মধ্যে ভাগ করা হবে ৪৬ মিলিয়ন ডলার। যদিও সমানভাগে নয়। কারণ, তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ম্যাচে যে দল হেরে চতুর্থ হবে তারা পাবে ২২ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৮৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা)। তৃতীয় স্থান অধিকারী দল পাবে ২৪ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২০২ কোটি ৩২ লাখ টাকা)।
বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে যাবে যে দুটি দল, তাদের জন্য বরাদ্দ থাকছে ৬৬ মিলিয়ন ডলার। মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে যে দলটির হাতে উঠবে সোনালি ট্রফিটা, তাদের জন্য বরা্দ্দ ৩৮ মিলিয়ন ডলার (৩২০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা)। আর পরাজয়ের হতাশায় মুষড়ে পড়া দলটির জন্য বরা্দ্দ থাকবে ২৮ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৩৬ কোটি ৪ লক্ষ টাকা)।
২০১৪ বিশ্বকাপে বিজয়ী দল পেয়েছিল ৩৫ মিলিয়ন ডলার। এবার পাবে ৩৮ মিলিয়ন ডলার। আগেরবারের তুলনায় বেড়েছে ৩ মিলিয়ন ডলার অর্থ প্রাইজ মানি।
তবে ফিফার খরচের এখানেই শেষ নেই। ফিফার ক্লাব বেনিফিট প্রোগ্রামের আওতায় যে যে ক্লাব থেকে খেলোয়াড় বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করবে তাদের দেওয়া হবে মোট ২০৯ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। আর ক্লাব প্রোটেকশন প্রোগ্রাম অর্থাৎ, বিশ্বকাপে ক্লাব খেলোয়াড়দের ইনজুরি ভাতা হিসেবে ক্লাবগুলো পাবে আরও ১৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১ হাজার ১২৯ কোটি টাকা।
এছাড়াও আনুষঙ্গিক আরও খরচ মিলিয়ে ফিফা সর্বমোট ৭৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৬ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা খরচ করতে যাচ্ছে এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপে। যা কিনা ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি।
রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রাইজ মানি
অবস্থান
দল প্রতি প্রাইজ মানি
মোট প্রাইজ মানি
গ্রুপ পর্ব
৮
১২৮
দ্বিতীয় রাউন্ড
১২
৯৬
কোয়ার্টার ফাইনাল
১৬
৬৪
চতুর্থ স্থান
২২
২২
তৃতীয় স্থান
২৪
২৪
রানার্স আপ
২৮
২৮
চ্যাম্পিয়ন
৩৮
৩৮
মোট
-
৪০০
*প্রাইজ মানি ডলারের হিসেবে (মিলিয়ন)
এসএস/আইএইচএস/জেআইএম