খেলাধুলা

১৯৯৮ : জিদানের হাত ধরে প্রথম চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স

ফিফার জন্ম ফ্রান্সে। ফরাসি নাগরিক জুলে রিমে প্রচলন করলেন ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ বিশ্বকাপের। কিন্তু ফ্রান্সই এর আগের ১৫টি আসরে জিততে পারেনি বিশ্বকাপের শিরোপা। জ্যাঁ ফঁন্তে, মিশেল প্লাতিনিদের মতো সেরা তারকারা এসেছেন; কিন্তু ফ্রান্সকে শিরোপার স্বাদ এনে দিতে পারেননি। ১৯৩৮ সালের আয়োজনের ৬০ বছর পর ১৯৯৮ সালে আবারও বিশ্বকাপের আয়োজক ফ্রান্স। জিনেদিন জিদানের হাত ধরে আয়োজক হয়েই প্রথম শিরোপা জিতল ফরাসিরা।

Advertisement

১৯৯৮ সালেই প্রথম বিশ্বকাপের দল ২৪ থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৩২টি। আট দল বাড়িয়ে ১৯৯৮ থেকেই বিশ্বকাপকে আরও বড় আসরে রূপান্তর করল ফিফা। এশিয়া, আফ্রিকা এবং ওশেনিয়া অঞ্চল থেকে আরও বেশি দেশ বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেল। এবারই প্রথম বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেল ক্রোয়েশিয়া, জ্যামাইকা, জাপান এবং দক্ষিণ আফ্রিকা।

বিশ্বকাপে গোল্ডেন গোলেরও সূচনা এই বিশ্বকাপ থেকে। বিশ্বকাপে প্রথম গোল্ডেন গোল করেন লরাঁ ব্লাঁ। দ্বিতীয় রাউন্ডে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ১১৩ মিনিটে গোল্ডেন গোল করে জেতান ফ্রান্সকে। এই বিশ্বকাপেই প্রথম ড্র অনুষ্ঠিত হয় কোনো স্টেডিয়ামে। ফ্রান্সের স্টেডে ডি মার্সেইয়ে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপের ড্র।

আবার কোনো কারণে মোট কত মিনিট খেলা বন্ধ থাকল, তা ইলেকট্রনিক বোর্ডে দেখানোর নিয়ম করা হয় এ বিশ্বকাপ থেকেই। ফাইনালের আগে সামান্য বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছিল। ফাইনালের সেরা একাদশে কে কে খেলবেন, সে তালিকা মিডিয়াকে একদিন আগে দিয়েছিল ব্রাজিল। ওই তালিকায় নাম ছিল না রোনালদোর; কিন্তু ফাইনালে খেলানো হয় তাকে। তবে শেষ পর্যন্ত জিনেদিন জিদানের অসধারণ নৈপুণ্যে ব্রাজিলকে ৩-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারেরমত বিশ্বকাপ ট্রফি জয় করে নেয় ফ্রান্স। সে সঙ্গে ৭ম দেশ হিসেবে ট্রফি জিতলো তারা।

Advertisement

অংশগ্রহণকারী ৩২ দলকে ভাগ করা হয় ৮ গ্রুপে। প্রতি গ্রুপ থেকে সেরা দুটি দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়, ১৬ দলের দ্বিতীয় রাউন্ড। বিশ্বকাপে সবচেয়ে চমক সৃষ্টিকারী দল ছিল ক্রোয়েশিয়া। যুগোস্লাভিয়া ভেঙে বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলতে এসেই সেমিফাইনালে চলে যায় দলটি।

ক্রোয়েশিয়ার স্ট্রাইকার ডেভর সুকার সর্বোচ্চ ৬ গোল করে জেতেন গোল্ডেন বুটের পুরস্কার। ফাইনালে একেবারে ফ্লপ হলেও টুর্নামেন্টসেরা গোল্ডেন বলের পুরস্কার জেতেন ব্রাজিলের রোনালদো। ফেভারিট হয়ে বিশ্বকাপে এসে আবারও ব্যর্থ স্পেন। নাইজেরিয়ার কাছে প্রথম ম্যাচেই ৩-২ গোলে হেরে স্পেনের বিশ্বকাপ যাত্রায় বাধা শুরু। এরপর প্যারাগুয়ের সঙ্গে ড্র এবং বুলগেরিয়াকে ৬-১ গোলে হারালেও প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিতে হয় তাদের।

স্পেনের গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে যায় নাইজেরিয়া এবং প্যারাগুয়ে। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল স্কটল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে দারুণ সূচনা করে। ব্রাজিলের সঙ্গে নরওয়ে ওঠে দ্বিতীয় রাউন্ডে। গ্রুপ ‘সি’তে দ্বিতীয় ম্যাচে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে লাল কার্ড দেখে দুই ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন জিদান। সেই জিদানই শেষ পর্যন্ত ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ের বড় নায়কে পরিণত হন।

এর আগে বিশ্বকাপে নতুন আসা দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩-০ গোলে হারিয়ে দারুণ সূচনা করেছিল ফ্রান্স। ইতালি, জার্মানি, ইংল্যান্ড, আর্জেন্টিনা- ফেভারিটরা সবাই বিনা বাধায় পার হয়ে যায় প্রথম রাউন্ড।

Advertisement

দ্বিতীয় রাউন্ডে ডেনমার্কের কাছে ৪-১ গোলে হেরে থেমে যায় নাইজেরিয়ার জয়যাত্রা। এই রাউন্ডের স্মরণীয় ছিল আর্জেন্টিনা আর ইংল্যান্ডের ম্যাচটি। ২-২ গোলে খেলা ড্র হওয়ার পর অতিরিক্ত সময়েও গোল পায়নি কোনো দল। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। আর্জেন্টিনা জিতে যায় ৪-৩ গোলে।

কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্স-ইতালি খেলা গোলশূন্য ড্র হওয়ার পর টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে ইতালিকে হারিয়ে দেয় ফ্রান্স। ১৯৯৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে টাইব্রেকারে ব্রাজিলের কাছে হেরে শিরোপাবঞ্চিত হওয়ার পর এবারও টাইব্রেকারে বিদায় নিতে হলো ইতালিকে।

সেমিফাইনালে ব্রাজিলও নেদারল্যান্ডসকে হারায় টাইব্রেকারে। ১-১ গোলে সমতায় থাকার পর টাইব্রেকারে ব্রাজিল জেতে ৪-২ গোলে। অপর সেমিফাইনালে লিলিয়ান থুরামের জোড়া গোলে ফ্রান্স ২-১ গোলে হারায় ক্রোয়েশিয়াকে। স্টেডে ডি ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ব্রাজিলকে নিয়ে খেলেছিলেন গ্রেট জিদান। তার জোড়া গোলেই ব্রাজিলকে ফ্রান্স হারায় ৩-০ গোলে। প্রথমবারের মতো শিরোপা যায় ফ্রান্সে।

আইএইচএস/আরআইপি