ভুল তথ্য দিয়ে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে মিথ্যা জন্মদিন পালনের অভিযোগে দায়ের করা মানহানির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর ও জামিন নিষ্পত্তিতে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট ভুল পথে পরিচালিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বলেছেন আদালত।
হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে দুই বিচারপতির স্বাক্ষরের পর প্রকাশিত লিখিত আদেশে এমন মতামত দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে গত ৩১ মে এই আদেশ দেন আদালত। আজ সাত পৃষ্ঠার আদেশ প্রকাশ করা হয়।
Advertisement
খালেদার মামলা নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ পর্যালোচনা করে হাইকোর্ট বলেছেন, আমাদের বলতে দ্বিধা নেই যে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকরসহ জামিন আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ভুল পথে পরিচালিত হয়েছে।
আদালত আরও বলেছেন, খালেদা জিয়া ইতোমধ্যেই অন্য মামলায় কারাগারে রয়েছেন। ফলে গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকরের জন্য আর অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এরপরেও গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর সংক্রান্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করে জামিন আবেদন নথিভুক্ত করে আদেশ দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট গুরুতর ভুল করেছেন।
ওই লিখিত আদেশে আরও বলা হয়, মামলার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এটা প্রতীয়মান হয় যে, গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর প্রতিবেদন গ্রহণের নামে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট অপ্রয়োজনীয়ভাবে তার জামিন আবেদন নিষ্পত্তিতে বিলম্ব করেছেন। যেটা আদালতের প্রক্রিয়ার অপব্যবহারের শামিল।
একই সঙ্গে ঢাকার মূখ্য মহানগর হাকিম এবং সংশ্লিষ্ট হাকিমকে হাজিরা পরোয়ানা ইস্যু করতে এবং জামিন চেয়ে খালেদা জিয়ার আবেদন দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তি করতে বলেছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
এর আগে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জন্মদিন পালনের অভিযোগে ঢাকায় দায়ের করা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মামলাটি বিচারিক আদালতকে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন আদালত।
গত ৩১ মে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ওই দিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুর্টি অ্যার্টনি জেনারেল ফরহাদ আহমদ, একে এম আমিন উদ্দিন, সহকারী অ্যার্টনি জেনারেল মো. নুরুল ইসলাম মাতব্বর, মো. ইউসুফ মাহবুব মোরশেদ ও সাবিনা পারভীন।
অন্যদিকে, খালেদার পক্ষে শুনানি করেন, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এজে মুহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও অ্যাডভোকেট মাসুদ রানা। পরে সেই আদেশের বিচারপতিদের স্বাক্ষরের পর আজ বুধবার সাত পৃষ্ঠার আদেশ প্রকাশ পায়।
এর পর সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুর্টি অ্যার্টনি জেনারেল একে এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, বেগম খালেদা জিয়া ভিন্ন ভিন্ন দিনে ৫টি জন্মদিন পালন করেন। এ সংক্রান্ত মামলায় বিচারিক আদালতে জামিন আবেদন করেন ওনার (খালেদার) আইনজীবীরা। হাইকোর্ট এ বিষয়ে তার পর্যালোচনায় দিয়েছেন, ভুল এবং বিলম্বের কথা বলা হয়েছে। ভুল হাইকোর্ট ধরতেই পারেন। অন্যদিকে, দেরি হওয়ার পর্যবেক্ষণ নিয়ে আদালত যা বলেছেন তা খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের সময় আবেদন করার কারণে দেরি হয়েছে।
তবে এই মামলায় বিচারিক আদালতে খালেদাকে জামিন দিতে পারবেন কি-না তার কোনো নির্দেশনা হাইকোর্ট দেয়নি বলেও জানান তিনি।
আদেশ প্রকাশ করা মামলাটি হলো-
মিথ্যা তথ্য দিয়ে জন্মদিন পালনের অভিযোগ :
মিথ্যা তথ্য দিয়ে জন্মদিন পালনের অভিযোগে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২২ এ মামলাটি করেন। এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এরপর গত ২৫ এপ্রিল এ মামলায় খালেদা জিয়া জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
এফএইচ/এমবিআর/আরআইপি