ধর্ম

কুরআনের শ্রেষ্ঠ দোয়ার বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত

কুরআনুল কারিম আল্লাহ তাআলার বাণী। এ মহাগ্রন্থ হজরত জিবরিল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে সুদীর্ঘ ২৩ বছরে আল্লাহ তাআলা প্রিয়নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর প্রয়োজনে অবস্থার প্রেক্ষিতে নাজিল করেন।

Advertisement

কুরআনুল কারিমকে আল্লাহ তাআলঅ মানুষের সার্বিক কল্যাণ ও সঠিক পথের দিক-নির্দেশিকা হিসেবে নাজিল করেছেন। এ মহাগ্রন্থের ভূমিকা স্বরূপ তুলে ধরেছেন ‘সুরা ফাতিহা’কে। এ সুরাটি শুধু ভূমিকা নয় বরং এটি এ মহাগ্রন্থের শ্রেষ্ঠ দোয়া।

শ্রেষ্ঠ দোয়া সুরা ফাতিহার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো নামাজ ফরজ ওয়াজিব সুন্নাত নফল যা-ই হোক না কেন, সুরা ফাতিহা ছাড়া কোনো নামাজই হবে না। সংক্ষেপে এ সুরার বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত তুলে ধরা হলো-

সুরা ফাতিহার বৈশিষ্ট্য> কুরআনুল কারিমের বিস্তারিত আলোচনা এ সুরা বিস্তারিত ব্যাখ্যাস্বরূপ।> কুরআনুল কারিমের যত নেক আমল ও ঈমানের আলোচনা রয়েছে; সবই এ সুরায় সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে।> অন্য কোনো আসমানি কিতাবে এ সুরার সমতুল্য মর্যাদাবান কোনো সুরা নাজিল করা হয়নি।> সুরা ফাতেহা এবং সুরা বাক্বারার শেষ তিন আয়াত আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত বিশেষ নূর; যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যতিত অন্য কোনো নবি-রাসুলকে দেয়া হয়নি।> সুরা ফাতেহা প্রত্যেক নামাজে তেলাওয়াত করতে হয়; এ সুরার তেলাওয়াত ছাড়া নামাজ হবে না।> সুরা ফাতেহায় যে সব ছিফাত রয়েছে, তা অন্য কোথাও নেই। এ জন্যই কুরআনকে উম্মুল কুরআন বা আল-কুরআনুল আজিম বলা হয়েছে।

Advertisement

এ সুরার বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য হলো-

‘আল্লাহ তাআলা এ সুরায় নিজের ও বান্দার মধ্যে করণীয় ভাগ করে নিয়েছেন। এ সুরাকে বাদ দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন সম্ভব নয়।’ (সূরা আল হিজর, কুরতুবি, বুখারি, মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, মুসলিম, মিশকাত)

আরও পড়ুন > যে কথার কারণে জান্নাতে যাবে মুসলিম

সুরার ফজিলতসুরা ফাতেহা কুরআনের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সুরা হওয়ায় এ সুরার ফজিলতও অনেক বেশি। এর ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যার কয়েকটি তুলে ধরা হলো-

Advertisement

> হজরত উবাই ইবনু কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ উম্মুল কুরআনের মতো তাওরাত ও ইঞ্জিলে কিছু্ নাজিল করেননি। এটিকেই বলা হয়, ‘আস-সাবউল মাছানি’ (যা বারবার পঠিত সাতটি আয়াত), যাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। আর আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, সে যা চাইবে’। (নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ)

> হজরত সাঈদ ইবনু মুআল্লা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি মসজিদে নামাজ আদায় করছিলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ডাকলেন। কিন্তু তিনি তাঁর ডাকে সাড়া দেননি। অতঃপর নামাজ শেষ হলে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমি নামাজ পড়ছিলাম।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ কি বলেননি? ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ডাকে সাড়া দাও, যখন তোমাদেরকে ডাকা হয়।’ (সুরা আনফাল : আয়াত ২৪)।অতঃপর আমাকে বললেন, মসজিদ থেকে তোমার বের হওয়ার আগেই আমি তোমাকে অবশ্যই কুরআনের সবচেয়ে মহান সুরাটি শিক্ষা দেব। অতঃপর তিনি আমার হাত ধরলেন। যখন তিনি মসজিদ থেকে বের হতে চাইলেন, তখন আমি তাকে স্মরণ করিয়ে দিলাম, আপনি কি আমাকে বলেননি যে, তোমাকে আমি কুরআনের সবচেয়ে মহান সূরাটি শিক্ষা দেব?রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সূরাটি হচ্ছে الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ এটিই সাবউল মাছানি এবং কুরআনুল আজিম। যা আমাকে দেয়া হয়েছে’। (নাসাঈ, আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ, মুসনাদে আহমদ)

> হজরত ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, ছাহাবাদের একটি দল এক পানির কূপওয়ালার কাছে গেলেন। তাদের (কূপওয়ালাদের) একজনকে বিচ্ছু অথবা সাপে দংশন করেছিল।কূপওয়ালাদের এক ব্যক্তি এসে বলল, আপনাদের মধ্যে কোনো মন্ত্র জানা লোক আছে কি? এ পানির ধারে বিচ্ছু বা সাপে দংশন করা একজন লোক আছে।ছাহাবাদের মধ্যে একজন (আবু সাঈদ খুদরি) গেলেন এবং কয়েকটি ভেড়ার বিনিময়ে তার ওপর সুরা ফাতেহা পড়ে ফুঁ (দম করলেন) দিলেন। এতে সে ভাল হয়ে গেল এবং তিনি ভেড়াগুলো নিয়ে সঙ্গীদের কাছে আসলেন।তারা (সাহাবারা) এটা অপছন্দ করল এবং বলতে লাগল, আপনি কি আল্লাহর কিতাবের বিনিময় গ্রহণ করলেন?অবশেষে তারা মদিনায় পৌঁছে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি আল্লাহর কিতাবের বিনিময় গ্রহণ করেছেন।তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা যেসব জিনিসের বিনিময় গ্রহণ করে থাক, তার মধ্যে আল্লাহর কিতাব অধিকতর উপযোগী’। (বুখারি)

> অন্য বর্ণনায় আছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমরা ঠিক করেছ। ছাগলের একটি ভাগ আমার জন্য রাখ’। (বুখারি ও মুসলিম)

> হজরত ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জিবরিল আলাইহিস সালাম উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ জিবরিল আলাইহিস সালাম ওপর দিকে এক শব্দ শুনতে পেলেন এবং আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, এ হচ্ছে আকাশের একটি দরজা যা আগে কখনো খোলা হয়নি।সে দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, ‘আপনি দুটি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন। যা আপনাকে প্রদান করা হয়েছে। তা আপনার পূর্বে কোনো নবীকে প্রদান করা হয়নি। তাহলো-- সুরা ফাতেহা এবং- সুরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত।আপনি সে দু’টি থেকে কোনো অক্ষর পড়লেই তার প্রতিদান আপনাকে প্রদান করা হবে।’ (মুসলিম, ইবনে হিব্বান)

পরিশেষে…সর্বাধিক পঠিত সুরা ফাতেহার ফজিলত মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। সুতরাং এ মর্যাদাপূর্ণ সুরার ফজিলত লাভ তথা সুরা ফাতেহার হক আদায় করে আল্লাহর ইবাদত করা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের একান্ত কর্তব্য।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুরা ফাতেহার বৈশিষ্ট্য ও ফজিলতের দিকে লক্ষ্য রেখে হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী আমল করে দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন। আল্লাহর সঙ্গে নৈকট্য অর্জনে এবং দোয়া কবুলে নিয়মিত সুরা ফাতেহার যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/পিআর