আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) বগুড়ার একটি দলের বিরুদ্ধে রাজশাহীতে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা নিয়ে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া ছাড়াও টাকা না পেলে নকল হেরোইন দিয়ে ফিটিং মামলা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে দলটির বিরুদ্ধে।
Advertisement
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক মাস ধরে বগুড়া এপিবিএনের একটি দল এসআই আতাউর রহমান ও এএসআই শিহাবের নেতৃত্বে মাইক্রোবাস নিয়ে শুধুমাত্র রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকাতে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এই দলটিকে কখনো কখনো রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কে সড়ক ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন তল্লাশি করতেও দেখা যায়।
গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়ী এলাকার লোকজন জানান, গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এসআই আতাউর ও এএসআই শিহাবের নেতৃত্বে এপিবিএন বগুড়া বিশেষ এই দলটি মহিষালবাড়ী আপকের সামনে থেকে হেরোইন ব্যবসায়ী রেলবাজারের সাইফুলকে আটক করে। তাকে আটকের পর মাইক্রোবাসে করে দলটি তার রেলবাজারের বাড়িতে নিয়ে যায়। এসময় এপিবিএনের দলটি সাইফুলের স্ত্রী হেরোইন সম্রাজ্ঞী রিনাকে উঠতে বলেন। কিন্তু রীনা বাড়ির ভেতর থেকে দরজা বন্ধ রাখেন। ফলে পুলিশের এই দলটি এক ঘণ্টা বাড়িটি ঘিরে রেখেও ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি।
পরে পুলিশ সাইফুলকে নিয়ে মহিষালবাড়ী মোড়ের পরিতোষের ‘ভাই ভাই’ হোটেলে নিয়ে বসেন এবং সেখানে পুলিশের দু’জন দালাল এসে উপস্থিত হন। ওইসময় এসআই আতাউর ও এএসআই শিহাবের সঙ্গে দরকষাকষির পর সাইফুলকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে সাইফুল তার বাড়িতে চলে যান।
Advertisement
কীভাবে ছাড়া পেলেন জানতে চাইলে হেরোইন ব্যবসায়ী সাইফুল বলেন, আমার কাছে কোনো মাদক ছিল না। তারপরও তারা ধরে আটকে রাখে কয়েক ঘণ্টা। ছাড়া পেতে কত টাকা লেগেছে জানতে চাইলে সাইফুল বলেন, সেটা বলা যাবে না।
সাইফুলের স্ত্রী রীনাও বলেন, মীমাংসা হয়েছে বলে ছেড়ে দিয়েছে।
এদিকে এপিবিএনের অভিযানিক দলের দুই কর্মকর্তা এসআই আতাউর রহমান ও এএসআই শিহাব জানান, তারা ওই রাতে কাউকে ধরেননি এবং কাউকে ছেড়েও দেননি।
মহিষালবাড়ীতে গিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে থাকি।
Advertisement
এছাড়া অভিযানিক দলের এসআই আতাউর ও এএসআই শিহাব সম্পর্কে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জানা গেছে, এএসআই শিহাব আগে গোদাগাড়ী থানায় কনস্টেবল ছিলেন। শিহাবের বাড়ি গোদাগাড়ী থানার পার্শ্ববর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে। শিহাব দীর্ঘসময় রাজশাহী জেলা ডিবিতে ছিলেন।
এ সময় আতাউরও ডিবিতে ছিলেন। এই দু’জনের বিরুদ্ধে মাদক ধরে বিক্রি করা, টাকা না পেলে মাদক দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার অভিযোগ থাকায় এই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে এপিবিএনে বদলি করা হয় বছর খানেক আগে।
কিন্তু তারা বিভিন্ন উপায়ে গোদাগাড়ী ছাড়তে পারেননি। অভিযানের কথা বলে তারা রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকাতেই ঘোরাঘুরি করেন দিন রাতের বেশির ভাগ সময়।
মাইক্রোবাস ভাড়ায় নিয়ে এপিবিএনের দলটি গোদাগাড়ী এলাকাতেই থাকেন। বিভিন্ন জনকে ধরে ধরে টাকা আদায়ের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে শিহাব ও আতাউরের বিরুদ্ধে।
এছাড়া সোর্সের মাধ্যমেও বিভিন্ন জনকে ফাঁসিয়ে টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, এপিবিএন বগুড়ার এই দলটি শুধুমাত্র গোদাগাড়ীতেই অভিযান চালায় তবে থানা পুলিশের অনুমতি ছাড়াই। ফলে মাঝে মাঝে থানা পুলিশের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।
ধরে ধরে টাকা আদায় ও নকল হেরোইন ও ইয়াবা দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো প্রসঙ্গে আতাউর ও শিহাব বলেন, অভিযোগগুলো মিথ্যা। তারা কোনো টাকা আদায় করেন না। তবে গোদাগাড়ীর সারাংপুরের বাসিন্দা মতিউর রহমান অভিযোগে বলেন, গত শনিবার সন্ধ্যার পর আতাউর ও শিহাবের নেতৃত্বে একদল আর্মড পুলিশ তার ভাই সেরাজুল ইসলাম ওরফে দারোগাকে ধরে সরমংলা মাঠের দিকে নিয়ে যায়।
সেখানে গিয়ে তিন লাখ টাকা দাবি করেন। এসময় সেরাজুল মাদক ব্যবসা করেন না এবং টাকা দিতে পারবেন না বলে জানালে তার পকেটে ১০০ গ্রাম নকল হেরোইন ঢুকিয়ে দিয়ে মামলা দেয়া হয়।
এলাকার লোকজন আরও জানান, এপিবিএনের দলটি এভাবেই বেশ কিছুদিন ধরে টাকা আদায় করে আসছে।
ফেরদৌস সিদ্দিকি/এফএ/এমএস