বিশেষ প্রতিবেদন

বাস্তবমুখী শিক্ষা ও গুণগত উন্নয়নই বড় চ্যালেঞ্জ

আ হ ম মুস্তফা কামাল, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মুস্তফা কামাল এখন পর্যন্ত তিনবার এমপি হিসেবে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। ২০১৪ সালে তৃতীয় মেয়াদে কুমিল্লা-১০ সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কুমিল্লা জেলার (দক্ষিণ) আহ্বায়কেরও দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।

Advertisement

সম্প্রতি জাগো নিউজ’র সঙ্গে কথা হয় অভিজ্ঞ গাণনিক এ রাজনীতিকের। কথা প্রসঙ্গে উঠে আসে দেশে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম, আসন্ন বাজেট, অর্থনীতির ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা, সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং বিভিন্ন খাতের সংস্কার নিয়ে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মামুন আব্দুল্লাহ। দুই পর্বের ধারাবাহিকের আজ থাকছে শেষটি।

আরও পড়ুন >> উন্নয়নের সঙ্গে অপচয়ও হচ্ছে

জাগো নিউজ : আগামী দিনে কোন বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছেন?

Advertisement

আ হ ম মুস্তফা কামাল : আমি আগেই বলেছি, আগামী দিনের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ হবে শিক্ষা। এ শিক্ষা হতে হবে বাস্তবমুখী- ইনোভেশন (নতুনত্ব) ও টেকনোলজি বেইজড (প্রযুক্তি ভিত্তিক)। কারণ শিক্ষায় পিছিয়ে থাকলে আমরা ইনোভেশন ও টেকনোলজিতে পিছিয়ে পড়ব। এখন যদি শিক্ষাকে শক্তিশালী করতে না পারি তবে আমরা এসব খাতে পিছিয়ে থাকব। ইনোভেশন ও টেকনোলজিতে পিছিয়ে থাকলে সামনের দিকে আমরা এগিয়ে যেতে পারব না।

আমাদের ইনোভেশনে যেতে হবে, টেকনোলজিতেও যেতে হবে। এডুকেশন বলতে সময়ের দাবি (নিড বেইজড) অনুযায়ী শিক্ষা। ২০৪১ সালে আমাদের কী লাগবে, সেটা এখনই নির্ধারণ করতে হবে। এখন থেকে উদ্যোগ নিলে ২০৩০ সাল নাগাদ এডুকেশনের প্লাটফর্ম গড়ে তুলতে পারব। তার ওপর ভিত্তি করে ২০৪১ এ পৌঁছাতে পারব।

জাগো নিউজ : অন্য চ্যালেঞ্জটি কি তাহলে এডিপি তথা প্রকল্পের গুণগত মানোন্নয়ন?

আ হ ম মুস্তফা কামাল : হ্যাঁ। এখন সময় এসেছে উন্নয়ন প্রকল্পের গুণগত মান নিশ্চিত করা। এডিপি বাস্তবায়ন নিয়ে অনেকে সমালোচনা করে। কিন্তু বুঝতে হবে আমাদের সমস্যা কোথায়। সব প্রকল্পের কোয়ালিটি খারাপ, সেটা বলা যাবে না। কিছু কিছু প্রকল্পের কোয়ালিটি খারাপ হচ্ছে। এ বিষয়ে অনেক সময় কিছুই করার থাকে না।

Advertisement

আরও পড়ুন >> আবারও ভিজিএফ কার্যক্রম চালু করতে হবে

অনেক সময় দেখা যায়, বৃষ্টি হবে না। পরে দেখা গেলো টানা তিনদিন বৃষ্টি। এতে পিচঢালা রাস্তা বা বিটুমিনের কমফেকশন (মিশ্রণ) ঠিক মতো হয় না। বৃষ্টির সাথে সাথেই শেষ। এজন্য আমরা যতই চেষ্টা করি ভালো করতে, কিন্তু হয়ে ওঠে না। এজন্য আমরা লজ্জিত। এর চেয়েও বড় কথা, দেশের জনগণের টাকা অপচয় হয়, নষ্ট হয়। এজন্য আমরা কনস্ট্রাকশন মেথড (নির্মাণ পদ্ধতি) চেঞ্জ করব। বিটুমিন বাদ দিয়ে আমরা কংক্রিটের রাস্তার দিকে যাব।

জাগো নিউজ : কর্মসংস্থান নিয়ে কী বলবেন?

আ হ ম মুস্তফা কামাল : যখন হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স (মানবসম্পদ সূচক) বাড়বে, তখন এমনি এমনিই সব হবে। কারণ শিল্প-কারখানা চলে মেশিন ও মানুষের মাধ্যমে। মানুষের যদি সৃষ্টিশীলতা না থাকে তবে তো শিল্প-কারখানা এগোতে পারবে না।

জাগো নিউজ : প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, কিন্তু কর্মসংস্থানবান্ধব নয়। মানুষের রিয়েল ইনকামও কমছে। এসব তথ্য সরকারি সংস্থার। কেন এমন হচ্ছে?

আ হ ম মুস্তফা কামাল : এটা ছিল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রিলিমিনারি ডাটা। বছর শেষে এ তথ্য বদলাবে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি প্রাথমিকভাবে বলেছি ৭.৬৫ শতাংশ। ফাইনালি এটা হবে নাকি? বছর শেষে জিডিপি অবশ্যই বাড়বে। এটা কমপক্ষে ৭.৮ শতাংশ হবে। এর বেশিও হতে পারে।

দেশের প্রত্যেকটা ফ্যাক্টরির অর্ডার এখন ওভারলোডেড। সবাই বেশি বেশি অর্ডার পাচ্ছে। গত বছর আমাদের এক্সপোর্ট প্রবৃদ্ধি ছিল ১ দশমিক ৮ পার্সেন্ট। এবার এক্সপোর্টের গ্রোথ ১০ পার্সেন্ট। গত মাসে রেমিট্যান্স ছিল মাইনাস ফিগারে। এ মাসে আবার বেড়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতির সব এলাকায় আমাদের গ্রোথ ভালো। সে হিসাবে আমরা মনে হয়, এবারের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি হবে।

আরও পড়ুন >> নির্বাচনে ভোট পেতে প্রকল্প নিলে সমস্যা কোথায়?

জাগো নিউজ : কিন্তু রিয়েল ইনকাম তো কমে যাচ্ছে…

আ হ ম মুস্তফা কামাল : না, সেটা ঠিক নয়। বাইং ক্যাপাসিটি বাড়ছে। বাণিজ্য মেলায় জায়গা দিতে পারলে তিন হাজার গুণ লোক আসতো। আমি এক/দুই গুণ বলছি না। আগে পহেলা বৈশাখের কোনো মেলা হতো না। এখন গ্রামে গ্রামে মেলা হয়। এ সময় মার্কেটগুলোতে মানুষের ঢল নামে। আমার চোখের সামনে দেখা।

আর আন-এমপ্লয়মেন্টের (বেকারত্ব) ওপর ভিত্তি করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে- এটাও ঠিক নয়। আগে গ্যাস-বিদ্যুৎ দিতে পারিনি। এজন্য ইনফরমাল (বিধিবহির্ভূত) সেক্টরে কর্মসংস্থান হয়েছে। ইকোনমিক জোনে সে চিত্র পাল্টে যাবে। সম্প্রতি একটা ইকোনমিক জোনে সাড়ে আট হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে বলে শুনেছি। সবে তো শুরু। আরও হবে।

জাগো নিউজ : একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। এবার ধানের উৎপাদন বেড়েছে। চালের আমদানিও প্রচুর। তবুও দাম বেশি হওয়ার কারণ কী?

আ হ ম মুস্তফা কামাল : চালের দাম বেশি এটা ঠিক। এ থেকে উত্তরণে আমাদের প্রান্তিক পর্যায়ে যেতে হবে। গ্রোথ সেন্টারগুলো আইডেন্টিফাই (শনাক্ত করা) করতে হবে। প্রত্যেকটা গ্রোথ সেন্টারে সরকারের নিজস্ব সাপ্লাইং হাউজ থাকতে হবে। সময় মতো ধান-চাল কিনে আনতে হবে। তা না হলে পরে কৃষকরা প্রোপার প্রাইজ (ন্যায্য মূল্য) পাবে না। মাঝখানে এসে মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভ করে যাবে।

জাগো নিউজ : কবে থেকে এটা করতে চান?

আ হ ম মুস্তফা কামাল : কোনো সময় নষ্ট না করে এটা এখনই করা উচিত। এখনই অবকাঠামো শুরু করতে পারি আমরা। সারাদেশে একবারে যদি করতে না পারি, এলাকা ধরে ধরে তো করা যায়। কাজ শেষ করতে পারলে সঠিক সময়ে সঠিক দামে যদি সরকার ফসল কিনতে পারে, তাহলে কৃষক ভয়-ভীতির মধ্যে থাকবে না। আমরাও ন্যায্য মূল্য দেব, অথবা এমন দাম দেব যেন তারা পরবর্তীতে আরও বেশি উৎসাহিত হয়।

জাগো নিউজ : খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতসহ কৃষকের জন্য আর কী কী উদ্যোগ আপনারা নিচ্ছেন?

আ হ ম মুস্তফা কামাল : ফুড সিকিউরিটি নিশ্চিত করার জন্য আমরা দেশব্যাপী অনেকগুলো গুদাম তৈরির প্রকল্প হতে নিয়েছি। ইতোমধ্যে প্রকল্প পাশ হয়ে গেছে। এ অবকাঠামো নির্মাণের পর আমরা গ্রোথ সেন্টারের দিকে যাব।

আরও পড়ুন >> মাশরাফি নির্বাচন করবে, ভোট দিয়েন : পরিকল্পনামন্ত্রী

জাগো নিউজ : উন্নয়ন হচ্ছে, এটা কতটুকু সুষম বলবেন?

আ হ ম মুস্তফা কামাল : উন্নয়ন প্রকল্প সুষম করার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইকোনমিক জোন করা হচ্ছে। আগে এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন করা হতো। এতে সবাই বিনিয়োগ করতে পারতো না। এখন সেটা হবে না। দেশি উদ্যোক্তরাও বিনিয়োগ করতে পারবে, বিদেশিরাও পারবে। এজন্য সব রকম ফ্যাসিলিটিজ দেয়া হচ্ছে।

আগামী পাঁচ বছর হবে যুবকদের জন্য প্রোপার এডুকেশন ও এমপ্লয়মেন্ট নিশ্চিত করা। এমন কোনো পরিবার থাকবে না যেখানে কোনো ইকোনমির মেইনস্ট্রিমে (মূলধারা) কর্মসংস্থান হবে না। এটা সরকারের অঙ্গীকার। এজন্য কাজ এগিয়ে চলছে।

এমএ/এমএআর/এমএস