দেশজুড়ে

শ্রাবণেও তাপদাহে কাহিল নীলফামারী

সারাদেশের অনেক অঞ্চলে শোনা যাচ্ছে বন্যা আর দিনভর বৃষ্টির খবর। অথচ নীলফামারীতে দাবদাহে অতিষ্ঠ এ অঞ্চলের মানুষ। ঘরের সিলিং ফ্যান থেকে গরম হাওয়া নির্গত হয়। ঘরের বাইরেও যেন বাতাস নেই। শ্রাবণের দহনে নাজেহাল হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলর সকল পেশার মানুষ। এখানে তাপমাত্রা গড়ে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস সূত্র মতে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দুপুর ১২টায় এসে দাঁড়ায় ৩৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বিকেল ৩টায় তা বেড়ে ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে যায়। এসময় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।তবে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় গত ২৯ জুলাই দিনাজপুরে ৩৬ দশমিক ৯। এ ধরনের তাপমাত্রা লু-এর চেয়েও কম শক্তিশালী নয়। চোখ মুখ ঝলসে যাচ্ছে। গত এক দশকের মধ্যে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে তাপমাত্রা এতটা বাড়েনি। বর্ষার সময়ে এমন গরম আবহাওয়া উত্তরবঙ্গের দিনাজপুরে গত দশ বছরের রেকর্ড। দিনের বেলাতে তো বটেই, রাতেও উষ্ণতা কয়েক ডিগ্রি বেড়ে গিয়েছে।নীলফামারীর বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা যেন সকলেই এখন চাতক পাখির মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন বৃষ্টির জন্য। তবে চটজলদি বৃষ্টিতে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া অফিসগুলো। মৌসুমি অক্ষরেখা এখন দক্ষিণবঙ্গে সক্রিয়। উত্তরমুখে গুমোট। আগামী ৪৮ ঘণ্টা উত্তরবঙ্গে টানা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা তেমন নেই। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের উপরে নিম্নচাপ ঘনীভূত হয়ে মৌসুমী অক্ষরেখাকে কিছুটা উপর দিকে টেনে না তুলছে, ততক্ষণ বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে চলতি সপ্তাহের দ্বিতীয়ার্ধে হয়তো ফের বৃষ্টির দেখা মিলতে পারে।রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক কৃষি অফিস বলছে এ অঞ্চলে বৃষ্টি নেই ২৫ জুলাই থেকে। তার আগে ভালোই বৃষ্টিপাত ছিল। এ অঞ্চলের সকল মানুষ আমন ধান চাষের উপরে বেশি নির্ভরশীল। বেশিরভাগ কৃষক বৃষ্টির উপরে নির্ভর করেই ধান চাষ করেন। এসময় ধানের বীজতলা রোপণ শুরু হয়েছে। কৃষকরা জানান, ক্ষেতে পানি না থাকলে বীজতলা শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উঁচু জমির ক্ষেতগুলিতে ইতোমধ্যে পানি শুকিয়ে গিয়েছে। এ আবহাওয়া চলতে থাকলে নিচু জমির পানিও শুকিয়ে যাবে। কৃষকরা জানান, অনেক জমির বীজতলা ইতোমধ্যে হলুদ হতে শুরু করেছে। দুইদিনের মধ্যে বৃষ্টি শুরু না হলে সেগুলি নষ্ট হওয়া শুরু করবে। ধানবীজ নষ্ট হলে খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়তে হবে আমাদের। এখন বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি। কারণ, চার দিন ধরে প্রখর দাবদাহে শুকিয়ে যাচ্ছে ক্ষেতের পানি। আমন ধানের বীজতলা হলুদ হয়ে যাচ্ছে। আর কয়েকদিন এমন চললে আমন ধানে চাষে বড় ক্ষতি ডেকে আনবে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন, জমিতে যে বৃষ্টির পানি রয়েছে এটি ধরে কাজে লাগিয়ে ধান গাছের চারা রোপণ করা এবং সেগুলি বাঁচিয়ে রাখার কাজ করতে হবে। এখনকার আবহাওয়ায় ওই পানি দিয়ে তারা ধানের বীজতলা রক্ষা করতে পারবেন। সবজি চাষের ক্ষেত্রে রোগের হাত থেকে বাঁচতে কী ওষুধ দিতে হবে, সে ব্যাপারেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে বৃষ্টিহীন অবস্থা আর দুই-তিন দিন এমন থাকলে আমন ধানের বীজতলায় ক্ষতি হবে। এখনই যা অবস্থা, তাতে বহু উঁচু জমিতে পানি শুকিয়ে গিয়েছে। ভারি বৃষ্টিপাত না হলে সমস্যায় পড়বেন কৃষকরা। তবে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় চলতি আমন মৌসুমে কৃষকরা বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে সেচের মাধ্যমে আমনের চারা জমিতে রোপণে বাধ্য হচ্ছে। ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের সুন্দরখাতা গ্রামের কৃষক সহিদুল ইসলাম জানান, গত ১৩ দিন থেকে বৃষ্টির পানি না হওয়ায় আমন ক্ষেত ফেটে চৌচির ও তাপদাহের কারণে ক্ষেত মরে যাচ্ছে। একই গ্রামে গোলাম মোস্তফা জানান, শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি দিয়েও আমন ক্ষেত রক্ষা করা যাচ্ছে না। উত্তর তিতপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম জানান, প্রতিদিন শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি দিয়েও আমন ধান রক্ষা করা যাচ্ছে না।কৃষি বিভাগ সূত্র মতে এবার ৫ লাখ ৬১ হাজার ২৩৯ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে উত্তরবঙ্গের রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৫ জেলায়  রোপা আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ১৫ আগস্ট পর্যন্ত চলবে আমন রোপণের কাজ। কিন্তু পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে ২৮ জুলাই পর্যন্ত এই ৫ জেলায় আমন রোপণ সম্ভব হয়েছে  দুই লাখ ৮২ হাজার ৯২৫ হেক্টরে। এখন বৃষ্টির অতি প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।তীব্র গরমে বাড়ছে রোগ ব্যাধি। প্রচণ্ড গরমে রাতে ঘুমোতে না পেরে কারো মাথা ব্যাথা, ঘামে ভিজে জ্বর, সর্দি, পেটের ব্যথা ও রক্তচাপ বৃদ্ধি পেয়েছে।গত কয়েকদিনের গরমে জেলা ও উপজেলা হাসপাতালের বহির্বিভাগে যত রোগী এসেছেন, তাদের সিংহভাগের এমনই নানা উপসর্গ দেখা গিয়েছে। চিকিৎসকদের কথায়, এসবই তাপমাত্রার প্রভাবে অর্থাৎ তাপমাত্রাজনিত প্রভাব। শুধু সরকারি হাসপাতালে নয় রোগীদের ভিড় বেড়েছে বেসরকারি ক্লিনিকেও। একশ শয্যা নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালে বুধবার রোগি ভর্তি ছিল ২২৩ জন। এর মধ্যে শিশু রোগি ৪৪ জন, নারী ৯৮ জন, পুরুষ ৭৬ জন। এদের মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগি রয়েছে ৭ জন। আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছনি প্রায় ৯শ জন।নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডা. আব্দুর রশিদ জানান, জেলার সকল হাসপাতালে তীব্র গরমে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখনো সানস্ট্রোকের কোনো রোগি হাসপাতালে আসেননি। গরম বলে নয়, এমনিই এ সময়ে রোগির সংখ্যা বেশিই থাকে। তাপমাত্রা বাড়লে রোগ সংক্রমণও বাড়বে। চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। সে কারণে সকল চিকিৎসককে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। নীলফামারীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা আফতাব হোসেন জাগো নিউজকে জানান, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে উঁচু এলাকার কিছু জমিতে ফাটল দেখা দিলেও কৃষি বিভাগ মাঠ কর্মীদের মাধ্যমে সেচ প্রদানের জন্য বলা হয়েছে। ২/৩দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত হয়ে গেলে ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না। এমজেড/পিআর

Advertisement