কমলাপুর রেল স্টেশনে টিকিট প্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন। এই লাইন কাউন্টারের সামনে থেকে শুরু হয়ে বাহিরের অংশের দিকে গিয়ে ঠেকেছে।
Advertisement
লাইনে কারো কারো অপেক্ষা মধ্যে রাত থেকে। কেউবা এসেছেন সেহেরির পর। আবার কেউবা সকালে এসে লাইনে যুক্ত হয়েছেন। কমলাপুরে এই হাজার হাজার মানুষের অপেক্ষা কাঙ্ক্ষিত দিনের ট্রেনের টিকিট পাওয়ার জন্য।
বেলা বাড়ছে, লাইনও দীর্ঘ হচ্ছে। মধ্যরাত বা ভোরে যারা এসেছেন তাদের অনেকেই এখনও লাইনে দাঁড়ানো। তাদের সামনেও রয়েছে হাজারো অপেক্ষমাণ টিকিট প্রত্যাশী। তবুও আশা থেমে নেই।
এদিকে এখনও টিকিট পেতে কমলাপুর স্টেশনে নতুন করে আসছেন অনেকে। যারা নতুন করে আসছেন তাদের চোখ তো কপালে। কারণ সমানে এত ভিড়। তবে তাদের দুশ্চিন্তা দূরে করে দিতে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে কাজ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখানে বিক্রি হচ্ছে টিকিটের সিরিয়ালও।
Advertisement
মধ্যরাত থেকে অন্যান্য সাধারণ টিকিট প্রত্যাশীদের ভিড়ে বিভিন্ন কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের ফাঁকে ফাঁকে দাঁড়িয়ে আছেন একদল মানুষ। তারা যাত্রীবেশে দাঁড়িয়ে থাকছেন টিকিট প্রত্যাশীদের লাইনে। পরে সকালের দিকে যখন অন্যান্য টিকিট প্রত্যাশীরা টিকিট সংগ্রহ করতে আসছেন তারা সিরিয়ালের পেছনের দিকে দাঁড়াচ্ছেন। তখনই তাদের সঙ্গে এসে সামনের দিকের সিরিয়ালা কেনার প্রস্তাব দিচ্ছেন জড়িতরা। বেশ আগ্রহ নিয়েই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে সিরিয়াল। বিশেষ করে যেসব রুটের ট্রেনের টিকেটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি সেই সব কাউন্টারেই তাদের বেশি টার্গেট।
উত্তরবঙ্গগামী রাজশাহীর ট্রেনের টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন জুবায়ের আহমেদ নামের একজন টিকিট প্রত্যাশী। তিনি সেহেরির সময় এসে টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়েছেন, তার সামনে সিরিয়ালে তখনও প্রায় ৪০/৫০ জন মানুষ অপেক্ষমাণ। আলাপকালে তিনি বলেন, আমার ঠিক সামনে ভবঘুরে-মাদকসেবীদের মতো দেখতে তিনজন লোক ছিল। তারা টিকিটের সিরিয়াল বিক্রির সঙ্গে জড়িত। এদের সঙ্গে জড়িত আরেকজন সিরিয়ালে পেছনের দিকে মানুষের কাছে গিয়ে অফার করছেন যে, টাকার বিনিময়ে সিরিয়াল বিক্রি হবে, সিরিয়ালের সামনের দিকে জায়গা পাবেন। তখনই পেছনে থাকা অনেকেই বেশ আগ্রহ নিয়ে টাকার বিনিময়ে সেই সিরিয়াল কিনে নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমার সামনের ওই তিনজন লোকের জায়গায় অন্য সাধারণ যাত্রীরা এসে দাঁড়িয়েছেন। পরে কথা প্রসঙ্গে তাদের একজন বলেছেন যে, তিনি টাকার বিনিময়ে এই সিরিয়াল কিনে নিয়েছেন।
উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনের টিকিটের সিরিয়ালে পেছনে দিকে দাঁড়ানো ছিলেন জাহিদুর রহমান নামের এক টিকিট প্রত্যাশী। আলাপাকালে তিনি জানালেন, যখন সাড়ে ১১টার দিকে একজন লোক এসে তার কাছে ফিসফিস করে বলেছেন, সামনের দিকে সিরিয়ালে আমার একজন লোক আছে, তুমি ৫০০ টাকার বিনিময়ে ওই সিরিয়াল কিনতে পারবে। তাহলে টিকিট পেতে তোমার আর বেশি দেরি হবে না।
Advertisement
জাহিদুর রহমান বলেন, তখন আমি বলেছি আমার লাগবে না, এভাবে সিরিয়ালে গিয়ে টিকিট পেল পাব, না পেলে নাই। তখন সেই লোকটি দ্রুত সরে পড়ে।
অন্যদিকে টিকিট কাউন্টারে অপেক্ষমাণরা জানিয়েছে, অনেকে আছে যারা সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে ৩/৪টা করে টিকিট কেটে রাখে। আর কাঙ্ক্ষিত যাত্রার দিন স্টেশনে আগত যাত্রীদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করে। টিকিটহীন যাত্রীরা এমন আসনসহ টিকিট পেয়ে চড়া দামে আগ্রহ সহকারে কিনে নেয়।
কাউন্টারের সামনে অপেক্ষমাণ টিকিট প্রত্যাশীদের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে উপস্থিত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য বলেন, ‘টিকিট বিক্রিতে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল না হয় সেজন্য অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে। তবে এখনে কে প্রকৃত যাত্রী আর কে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে টিকিট কিনতে এসেছে- এটা বোঝা কঠিন। এছাড়া কেউ সিরিয়াল বিক্রি করে অন্যজনকে নিজের জায়গায় ঢোকালে তা ধরা কঠিন। তবে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সবসময় টহল দিচ্ছে, কড়া নজর রাখছে। তাই অসৎ উদ্দেশ্যে কেউ এসে পার পাবে না।’
এসি টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ :
সকাল ৮টা থেকে ২৬টি কাউন্টারে ১৩ জুনের টিকিট বিক্রি হয়েছে। কিন্তু শুরুর থেকেই এসি কেবিনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ টিকিট প্রত্যাশীদের। তাদের অভিযোগ, টিকিট বিক্রির শুরুর ১ ঘণ্টার মধ্যেই কাউন্টার থেকে জানানো হয়েছে এসি কেবিনের টিকিট শেষ।
উত্তবঙ্গগামী ট্রেনের এসি কেবিনের টিকিট পাননি নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, সিরিয়ালে আমি প্রথম দিক ছিলাম। টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই আমি এসি কেবিন পেলাম না। বাধ্য হয়ে সাধারণ টিকিট কিনতে হলো। এত তাড়াতাড়ি এসির টিকিট কীভাবে শেষ হয়ে যায় এটা চিন্তার বিষয়।
বেশিরভাগ কাউন্টারে থেকে এসি টিকিটের টিকিটের বিষয়ে এমন অভিযোগের কথা জানিয়েছেন অপেক্ষমাণ টিকিট প্রত্যাশীরা।
প্রতিটি কাউন্টারেই ছিল টিকিট প্রত্যাশীদের উপচে পড়া ভিড়। সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে উত্তরবঙ্গগামী রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর লাইনের টিকিট কাউন্টারগুলোতে। এছাড়া চট্রগ্রামগামী ট্রেনের টিকিটের লাইনও ছিল বেশ দীর্ঘ।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনে ঢাকা ছেড়ে যেতে ৪র্থ দিনের মতো টিকিট সংগ্রহ করতে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছেন টিকিট প্রত্যাশীরা। বিগত তিন দিনের তুলনায় আজ সোমবারে কমলাপুর স্টেশনে টিকিট প্রত্যাশীদের ভিড় ছিল বেশি।
আজ বিক্রি হচ্ছে আগামী ১৩ জুনের টিকিট। কাঙ্ক্ষিত টিকিট সংগ্রহের জন্য কমলাপুর স্টেশনের টিকিট কাউন্টারগুলোর সামনে কেউ মধ্যে রাত থেকে, কেউবা সেহেরির পর এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন।
সকাল ৮টা থেকে মোট ২৬টি কাউন্টারে আগামী ১৩ জুনের টিকিট দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে নারীদের জন্য সংরক্ষিত কাউন্টার আছে দুইটি। আগামীকাল ৫ জুন দেয়া হবে ১৪ জুনের টিকিট, এবং ৬ জুন দেয়া হবে ১৫ জুনের ট্রেনের অগ্রিম টিকিট।
টিকিট কাউন্টার থেকে জানানো হয়, একজন যাত্রী সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন। ঈদ উপলক্ষ্যে বিক্রিত টিকিট ফেরতযোগ্য নয়। সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা ট্রেনে কোনো আসন বিহীন টিকিট ইস্যু করা হবে না। অন্যান্য ট্রেনের ক্ষেত্রে শুধু যাত্রীদের অনুরোধে যাত্রার দিন আসন বিহীন টিকিট ইস্যু করা হবে।
কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেছেন, আমাদের সম্পদ সীমিত, এর মধ্যেই আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। সকাল থেকেই কাউন্টারগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। সবাই সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করছে। যেসব ট্রেনের টিকিটের চাহিদা বেশি সেগুলো খুব দ্রুত শেষ হয়ে গেছে।
এছাড়া ট্রেনর অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে যেন কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে আইন-শৃংখলা বাহিনীসহ রেলওয়ের নিজস্ব বাহিনী তৎপর রয়েছে।
এএস/এমবিআর/জেআইএম