দেশজুড়ে

ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তি, ফাঁসলেন এএসআই

থানাহাজতে নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের মাদক মামলায় জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগে নরসিংদীর শিবপুর থানার এএসআই সোহেল রানাসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে।

Advertisement

রোববার দুপুরে নরসিংদী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নির্যাতন এবং থানা হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে এ মামলা দায়ের করেন নির্যাতিত আবুল কালামের স্ত্রী সোমা বেগম। এ ঘটনায় পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

পুলিশ সহকর্মী, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকে ফাঁসানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ ওঠে এএসআই সোহেল রানার বিরুদ্ধে।

দুই মাস আগে ছাত্রলীগের কর্মীকে হয়রানির জেরে শাস্তিমূলক বদলি হওয়ার ক্ষোভ থেকে তিনি এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে ভোক্তভোগীরা দাবি করেছেন।

Advertisement

একই সঙ্গে সাজানো স্বীকারোক্তি আদায়ের ঘটনার প্রাথমিক সত্যতার প্রেক্ষিতে শনিবার বিকেলে এএসআই সোহেল রানা, কনস্টেবল মামুন ও গোয়েন্দা পুলিশের এসআই খোকন চন্দ্র সরকারকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- শিবপুর থানার এসআই রিজাউল কাজী, একই থানার এএসআই মামুন, মনোহরদী থানার এসআই নাজিম ও এএসআই শাহীন সরকার।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত এএসআই সোহেল রানা মনোহরদী থানায় কর্মরত ছিলেন। গত ৭ এপ্রিল বড়চাপা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহাগকে হয়রানির প্রতিবাদ জানায় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম।

এ ঘটনার পর এএসআই সোহেল রানা ছাত্রলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করলে তাকে মনোহরদী থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তীতে তিনি শিবপুর থানায় যোগ দেন।

Advertisement

এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিবপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে এএসআই সোহেল রানা প্রাইভেটকারসহ আবুল কালাম ও হিমেলকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। খবর পেয়ে রাতে আবুল কালামের স্বজনরা থানায় গিয়ে কালামকে নির্যাতন করা হচ্ছে দেখতে পায়।

ওই সময় এএসআই সোহেল তাদের কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করে অন্যথায় কালামকে ক্রসফায়ারে দেয়ার হুমকি দেয়। কিন্তু দাবিকৃত টাকা না পেয়ে নির্যাতন করে হাত ভেঙে দেয়।

পরে ভোর রাতে চোখ বেঁধে নির্জন স্থানে নিয়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে কালাম ও হিমেলের কাছ থেকে মনোহরদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাসেম, একদুয়ারিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ফরিদ আলম ভূঁইঞা তুষার ও গোয়েন্দা পুলিশের এসআই খোকন চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার বিষয়ে জবানবন্দি আদায় করে। পরে তা মোবাইল ফোনে রেকর্ড করেন এএসআই সোহেল।

এ সময় ৫৫ হাজার টাকার বিনিময়ে হিমেলকে ছেড়ে দিলেও ২৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার দেখিয়ে আবুল কালামকে কারাগারে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে তৌহিদুল আলম, আবুল কাসেম ও ফরিদ আলম ভূঁইঞা তুষারকে মামলায় পলাতক আসামি করা হয়েছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, একই ঘটনায় মনোহরদী থানার এসআই নাজিম ও এএসআই শাহিনুরের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাদেরকে মনোহরদী থানা থেকে প্রত্যাহার করার প্রক্রিয়া চলছে।

মনোহরদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল আলম বলেন, ছাত্রলীগের সভাপতি আমার ঘনিষ্ঠ। এ কারণে এএসআই সোহেল ছাত্রলীগের সভাপতির ওপর প্রতিশোধ নিতে আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। এর পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধনও থাকতে পারে।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই খোকন চন্দ্র সরকার বলেন, আমি চলতি বছর জেলার সেরা মাদক উদ্ধারকারী হিসেবে তিনবার পুরস্কার পেয়েছি। এএসআই সোহেল ছাত্রলীগ নেতাকে হয়রানি করে প্রত্যাহার হওয়ার সময় আমিও বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। আর এই ক্ষোভ থেকেই তিনি মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আঁতাত করে আমাকে ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় জড়িয়েছে বলে আমার ধারণা।

হয়রানির শিকার আবুল কালামের স্ত্রী ও মামলার বাদী সোমা বেগম বলেন, আমার স্বামী মাদক ব্যবসা দূরের কথা কখনো মাদক সেবনও করেনি। তার বিরুদ্ধে অতীতে থানায় কোনো মামলাও নেই। আর দুই লাখ টাকার জন্য সেই লোকটিতে মাদক ব্যবসায়ী বানিয়েছে এএসআই সোহেল। আমি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও এএসআই সোহেলের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত এএসআই সোহেল রানা বলেন, থানায় কাউকে নির্যাতন করা হয়নি। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকায় হিমেলকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে কোনো টাকা নেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে বিষয়টি শুনে তিনি বলেন, আমি মিটিংয়ে আছি। পরে এ বিষয়ে কথা হবে।

সঞ্জিত সাহা/এএম/এমএস